শুক্রবার রাত পর্যন্ত পাওয়া ৬ পদকের সবগুলো এসেছে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড থেকে। দুটি ট্র্যাক ইভেন্ট থেকে, বাকি ৪টি ফিল্ড থেকে পাওয়া। এ পরিসংখ্যান ঠিক জ্যামাইকার সঙ্গে যায় না! ‘স্প্রিন্টের রাজধানী’ খ্যাত জ্যামাইকার হলোটা কী!
প্রথমেই দেশটির অর্জনের দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক। ট্র্যাক ইভেন্ট থেকে কোনো স্বর্ণ নেই, প্রাপ্তি ১০০ মিটার স্প্রিন্টে কিশানে থম্পসনের রৌপ্য পদক এবং ছেলেদের হার্ডলসে ব্রোডবেল রশিদের ব্রোঞ্জ। অথচ আসাফা পাওয়েল, উসাইন বোল্ট, ইয়োহান ব্ল্যাকরা ধারাবাহিকভাবেই গতির ঝড় তুলতেন। ঝড় তুলছিলেন শেলি-এন ফ্রেজার প্রাইস এবং ইলেইন থম্পসন-হেরাহ। তারপরও ট্র্যাক ছাপিয়ে জ্যামাইকার অর্জনের পাল্লা ভারি করে চলেছে ফিল্ড ইভেন্ট।
একমাত্র স্বর্ণপদক এসেছে ডিসকাস থ্রো থেকে। ৭০ মিটার ছুড়ে অলিম্পিক রেকর্ড গড়ে চলতি আসর থেকে জ্যামাইকার প্রথম স্বর্ণ জিতেছেন রোজে স্টোনা। কিশানে থম্পসন ছাড়াও রৌপ্য পদক জিতেছেন ছেলেদের লং জাম্পে পিনক ওয়েইন এবং নারীদের ট্রিপল জাম্পে রিকেটস শানিয়েকা। আরেকটি ছিল ব্রোঞ্জ পদক, ছেলেদের শটপুট ইভেন্টে রাজিন্দ্র ক্যাম্পবেলের হাত ধরে পাওয়া।
গেমসে নারীদের ১০০ ও ২০০ মিটারে শেলি-এন ফ্রেজার প্রাইসকে ঘিরে সম্ভাবনা ছিল। সম্ভাবনা ছিল ছেলেদের স্প্রিন্টে আকিম ব্ল্যাক, অবলিগ স্যাভিলে, এন্ড্রিউ হডসন, ব্রায়ান লেভেল, শিন বেইলিকে ঘিরে। প্যারিস গেমসে দেশটির প্রত্যাশা-প্রাপ্তির মধ্যে বিশাল তফাৎ থাকার পরও আশাবাদী সাবেক স্প্রিন্টার আসাফা পাওয়েল। উসাইন বোল্ড আসার আগে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে বিশ্ব রেকর্ডের মালিক বলছিলেন, ‘আমি জানি বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে জ্যামাইকা জয়ের দিক থেকে অভ্যস্ত। জ্যামাইকা সে জয় সবসময় উদযাপনও করে। কিন্তু আপনি বিশ্বাস করুন জ্যামাইকা আবারও নিজের জায়গায় ফিরে আসবে।’
আসাফা পাওয়েল যে ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে, তার কেন্দ্র ভাবা হচ্ছে কিশানে থম্পসনকে। মিশেল টাউনে জন্ম নেওয়া ২৩ বছর বয়সী এ স্প্রিন্টারকে ঘিরে আগামীর পরিকল্পনা সাজাচ্ছে দেশটি। ১০০ মিটার স্প্রিন্টে চলতি মৌসুমে সবচেয়ে ভালো (৯.৭৭ সেকেন্ড) টাইমিং করা এ স্প্রিন্টার এবারের আসরেই স্বর্ণপদকের খুব কাছে ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের নোয়াহ লাইলসের মতো ৯.৭৯ সেকেন্ডে দৌড় শেষ করেন। কিন্তু ফটো ফিনিশের ভাগ্য নির্ধারণী খেলায় গিয়ে (০.০০৫) মাইক্রো সেকেন্ডে হেরে যান!
আসরের ট্র্যাক ইভেন্টে জ্যামাইকার বিবর্ণ উপস্থিতির অন্যতম কারণ নারী স্প্রিন্টারদের ইনজুরি। প্রথম নারী ক্রীড়াবিদ হিসেবে দুটি অলিম্পিকে ‘স্প্রিন্ট ডাবলস’ জয় করা ইলেইন থম্পসন-হেরাহ ইনজুরির কারণে দলের বাইরে। শেরিকা জ্যাকসন এবং শেলি-এন ফ্রেজার প্রাইস ইনজুরির কারণে নাম প্রত্যাহার করে নেন।
অথচ পেছনে ফিরে তাকালে ক্যারিবীয় অঞ্চলের দেশটির পরিষ্কার অধিপত্যই স্পষ্ট হয়। ২০০৮ সালের বেইজিং আসর থেকে সর্বশেষ টোকিও গেমস পর্যন্ত নারীদের ১০০ ও ২০০ মিটার স্প্রিন্টে ২৪ পদকের ১৫টি জিতেছে জ্যামাইকা! সে দেশই প্যারিস গেমসে নারীদের স্প্রিন্টে পদকশূন্য। এতেও কিন্তু আশাহত নন জ্যামাইকান কিংবদন্তি আসাফা পাওয়েল, ‘আমি মনে করি, লোকজন যখন জ্যামাইকার কাছ থেকে এমন বিবর্ণ নৈপুণ্য দেখে, তখনো আমাদের আরও প্রশংসা করে।’ জ্যামাইকার রিলে দলের সদস্য লানাই টাভা-থমাস অবশ্য তার দেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বলই দেখছেন, ‘আমাদের দলটা তরুণ। এ দলের সদস্যদের বিকশিত হওয়ার যথেষ্ট সময় আছে। আমরা যখন পুরোপুরি বিকশিত হব, তখন দলটা নিশ্চই শক্তিশালী হবে।’
মন্তব্য করুন