বগুড়ার সৈয়দ আমিনুল হক দেওয়ান সজল একসময় সাঁতার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মোল্লা বদরুল সাইফ এসেছেন গোপালগঞ্জ থেকে। সাবেক ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদকের জেলার নামই বলে দিচ্ছে, তাদের উঠে আসার সিঁড়ি কি ছিল!
বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে দলটির অনুসারীদের দখলে থাকে ক্রীড়াঙ্গন- গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে আসীন হন বিভিন্ন নেতার পছন্দের লোকজন। আওয়ামী লীগের বেলাও চিত্রটা একই। দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের বাইরে জেলা ও বিভাগীয় সংগঠক পরিষদ (ফোরাম নামে অধিক পরিচিত) ক্রীড়াঙ্গনের আরেক মাতব্বর। দুই রাজনৈতিক দল এবং ফোরামের চাপে চিড়ে-চ্যাপ্টা বাংলাদেশ ক্রীড়াঙ্গন, যাকে ক্রীড়া ক্ষেত্রে ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হয়।
সাঁতার সংশ্লিষ্ট না হয়েও হুট করেই ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সাঁতার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বনে গিয়েছিলেন রাফিজউদ্দিন। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান থাকাকালীন (সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী) জাহিদ আহসান রাসেল রাফিজউদ্দিনকে সাঁতার ফেডারেশনে বসান। ২০১৭ সালে তার কাছ থেকে দায়িত্ব নিয়ে এখনো বহাল বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মোল্লা বদরুল সাইফ।
কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিচয় ছাপিয়ে প্রভাবক হয়ে দাঁড়াচ্ছে ফোরাম। চলুন দেখে আসি সেটা কীভাবে। একমাত্র ফুটবল ছাড়া দেশের সব ক্রীড়া ফেডারেশনের ভোটার জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থাগুলো। বেশিরভাগ ক্রীড়া ফেডারেশনের মোট ভোটের মধ্যে জেলা ও বিভাগের ভোটাররাই সংখ্যাগরিষ্ঠ, যে কারণে জোটবদ্ধ ফোরাম ভোটের লড়াইয়ে ক্রীড়া ফেডারেশনের নির্বাচনে ভাগ্যবিধাতা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ‘গিভ অ্যান্ড টেক’ সামনে চলে আসছে—অভিযোগ আছে আর্থিক অনিয়মেরও।
এ সম্পর্কে জেলা ও বিভাগীয় সংগঠক পরিষদের সহসভাপতি সিরাজুদ্দিন মো. আলমগীর কালবেলাকে বলেন, ‘জাতীয় ক্রীড়া ফেডারেশনে তৃণমূল সংগঠকদের প্রেরণ করে থাকে জেলা ও বিভাগীয় সংগঠক পরিষদ। তৃণমূল সংগঠকদের ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটিতে পাঠানোর পর সংশ্লিষ্ট খেলার প্রতি ওই সংগঠকের দায়বদ্ধতা তৈরি হয়। খেলাটাও তৃণমূলে সচল থাকে। এটাই প্রধান কারণ। কিন্তু এটা স্বীকার করতেই হবে, এ কাজ করতে গিয়ে কিছু জটিলতাও সৃষ্টি হয়।’
সাবেক ব্যাডমিন্টন তারকা এবং বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের সহসভাপতি জোবায়েদুর রহমান রানা কালবেলাকে বলেন, ‘ক্রীড়া সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমেই ক্রীড়াঙ্গন পরিচালিত হওয়া উচিত। সঠিক ব্যক্তি সঠিক জায়গায় না থাকলে মোটেও কোনো ক্ষেত্রে আপনি উন্নতি করতে পারবেন না। দেশের ক্রীড়া উন্নয়নের জন্য প্রকৃত সংগঠকদের মাধ্যমে ক্রীড়া ফেডারেশনগুলো পরিচালনা করার বিকল্প নেই।’
দেশের ক্রীড়াঙ্গনে সঠিক ব্যক্তি সঠিক জায়গায় না থাকার জন্য ফোরামকেই বেশি দায়ী করা হয়। এ সম্পর্কে সিরাজুদ্দিন মো. আলমগীর আরও বলেন, ‘জেলা ও বিভাগীয় সংগঠক পরিষদ তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায়ের ফেডারেশনের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে কিছু অনিয়ম যে হয় না, এটাও অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক চাপের কারণে বিভিন্ন ব্যক্তিকে বিভিন্ন ক্রীড়া ফেডারেশনে বসাতে বাধ্য হয় এ সংগঠন, যা অনেক ক্ষেত্রে বিব্রতকর অবস্থা সৃষ্টি করে।’
দেশের প্রায় অর্ধশত ক্রীড়া ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনে ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে রাজনীতি ও ফোরাম। এ বিস্তারের লাগাম টেনে না ধরলে ক্রীড়া ক্ষেত্রে পতন রোধ করা অসম্ভব বলেই মনে করছেন বোদ্ধারা।
মন্তব্য করুন