প্যারিসে ছেলেদের ১০০ মিটার ফ্রি-স্টাইলে অন্যতম ফেভারিট ছিলেন চীনের প্যান ঝ্যানলে। বিশ্ব রেকর্ড গড়ে স্বর্ণ জিতেছেন ১৯ বছর বয়সি এ সাঁতারু। দারুণ এ কীর্তির পর অস্ট্রেলিয়ান অলিম্পিয়ান ব্রেট হওকে যে প্রশ্ন তুললেন, তার লক্ষ্যবস্তু কেবল প্যান ঝ্যানলে নয়, এন্টি ডোপিং এজেন্সিও!
ইন্সটাগ্রামে পোস্ট করা এক ভিডিওর মাধ্যমে চীনের সাঁতারুর বিশ্বরেকর্ড গড়ে স্বর্ণজয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের অবার্ন ইউনিভার্সিটির এ সাঁতার কোচ। যেখানে তিনি বলেছেন, ‘সাঁতার নিয়ে আমি ক্ষুব্ধ। কারণ সাঁতার নিয়ে আমি গবেষণা করছি। তার ফল বলছে কাইল চামার্স ও ডেভিড পোপোভিচি কিংবা জ্যাক আলেক্সিকে হারানো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।’
অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে ২০০০ ও ২০০৪ সালের অলিম্পিক খেলা সাবেক এ সাঁতারুর ইঙ্গিত স্পষ্ট চীনের প্যান ঝ্যানলে এমন কিছুর আশ্রয় নিয়েছেন, যা তার নৈপুণ্যকে শানিত করেছে। সহজ ভাষায় বললে ব্রেট হওকের ইঙ্গিত নিষিদ্ধ মেডিসিনের দিকে!
বাজে ইঙ্গিতপূর্ণ এ পোস্টের পর বসে থাকেনি চীন। দেশটির সংবাদ দ্য ডেইলি চায়না জানিয়েছে,পূর্ণাঙ্গ ডোপ টেস্ট এবং সব আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই খেলতে এসেছেন ঝ্যানলে। এ সাঁতারুর বরাত দিয়ে গণমাধ্যমটি জানিয়েছে, মে থেকে জুলাই পর্যন্ত ২১ বার ডোপ টেস্ট করা হয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে কাতারের দোহায় বিশ্বরেকর্ড গড়ে প্যারিসে সেটা ভেঙে দেওয়া প্যান ঝ্যানলে বলেছেন, ‘আমি সব ধরনের টেস্ট এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য প্রক্রিয়ায় পূর্ণ সহযোগিতা করে এসেছি। আমি বরাবরই আত্মবিশ্বাসী যে, স্বচ্ছতা ও ন্যায়সঙ্গতভাবেই খেলায় অংশগ্রহণ করে আসছি।’
নিজের গড়া বিশ্বরেকর্ড কেন হয়েছে সেটা এভাবে ব্যাখ্যা করলেন প্যান ঝ্যানলে, ‘৫০ মিটার শেষ করে ফিরে আসার পথে করা কিক শক্তিশালী করতে অনেক অনুশীলন করেছি। এ ইভেন্টের নৈপুণ্য আরও ভালো করতে সব ধরনের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করেছি।’
বুধবার ৪৬.৪০ সেকেন্ডে ১০০ মিটার ফ্রিস্টাইল শেষ করেন প্যান ঝ্যানলে। যা দোহায় গড়া নিজের বিশ্বরেকর্ডের চেয়ে ০.৪০ সেকেন্ড কম। গতির ঝড় তুলে অস্ট্রেলিয়ার কাইল চামার্স ও রোমানিয়ার ডেভিড পোপোভিচিকে হারান চীনের এ সাঁতারু। সেমিফাইনালে তার টাইমিং ছিল ৪৮.৪০ সেকেন্ড, যা নতুন গড়া রেকর্ডের চেয়ে ২ সেকেন্ড বেশি।
ব্রেট হওকের মন্তব্য চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ঝড় তুলেছে। সেখানে একজন লিখেছেন, ‘তিনি (ব্রেট হওক) তো আমাদের প্রশংসা করছেন। বলছেন এটি কোনো মানুষের পক্ষে করা সম্ভব নয়। কিন্তু মাফ করবেন, আমরা সেটা করে দেখিয়েছি।’
টোকিও অলিম্পিকে চীনের ২৩ সাঁতারু নিষিদ্ধ ঘোষিত ওষুধ নিয়েছিলেন। এপ্রিলে এমন প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে চীনের সাঁতারের দল কাটাছাঁট করা হয়। নিউইয়র্ক টাইমস ও জার্মান ব্রডকাস্টার এআরডি এ সংক্রান্ত যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে,সেখানে প্যান ঝ্যানলের নাম ছিল না।
বর্তমান যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ব্রেট হওক যে দাবি করেছেন তা যদি অযৌক্তি হয় সেটা রীতিমতো অপরাধের পর্যায়ে, অলিম্পিক স্পিরিটের সঙ্গেও বিষয়টি সাংঘর্ষিক। সাবেক এ সাঁতারুর দাবি যদিও যৌক্তিক হয়, অলিম্পিক আয়োজকদের উদ্যোগী হওয়া উচিত। সমস্যা হচ্ছে, কে যে সত্যি বলেছেন, সেটা বোঝাই মুশকিল! এটি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক উত্তাপকে পুলে টেনে আনছে!
মন্তব্য করুন