সাগর ইসলামের জন্মের ৯ বছর আগে আরচারি চর্চা শুরু মাউরো নেসপলির। কেবল বয়স নয়, দুজনের অভিজ্ঞতা এবং বিচরণ ক্ষেত্রও ভিন্ন। সে হিসেবে প্যারিস অলিম্পিকের আরচারি রিকার্ভ ব্যক্তিগত ইভেন্টের লড়াইটা ছিল অসম। অসম লড়াইয়ে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়তে পারেনি বাংলাদেশের প্রতিনিধি।
র্যাংকিং রাউন্ডে সাগর ইসলামের অবস্থান ছিল ৪৫, মাউরো নেসপলির ২০। এলিমিনেশন রাউন্ডের প্রথম ম্যাচে এসে ইতালিয়ান প্রতিপক্ষের সামনে রীতিমতো খড়-কুটোর মত উড়ে গেলনে সাগর। বাংলাদেশি তীরন্দাজ হেরেছেন ৬-০ ব্যবধানে!
প্রথম সেটের তিন শটে সাগর যেখানে ৮, ৯ ও ১০ মেরেছেন, সেখানে মাউরো নেসপোলি মারলেন ১০, ১০ ও ১০। পরের দুই সেটেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি একমাত্র বাংলাদেশি ক্রীড়াবিদ হিসেবে সরাসরি প্যারিস অলিম্পিক খেলার যোগ্যতা অর্জন করা সাগর ইসলাম। ৩ সেটে ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারিত হওয়ায় শেষ দুই সেটের লড়াইয়ে যেতে হয়নি।
মাউরো নেসপলি ৩টি অলিম্পিক পদক জয়ী। সাগর ইসলামের বয়স যখন দুই, তখন ২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিকে রিকার্ভ দলগত ইভেন্টে রুপা জিতেছেন ৩৬ বছর বয়সী এ তীরন্দাজ। দলগত স্বর্ণ জিতেছেন ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকে। টেকিও অলিম্পিকে ব্যক্তিগত ইভেন্টে রুপা জিতেছেন মাউরো নেসপলি।
লম্বা ক্যারিয়ারে ২১৫ ম্যাচ খেলা মাউরো নেসপলির জয়ের হার ৬৫ শতাংশ। এমন প্রতিপক্ষের সামনে সকল দিক থেকেই পিছিয়ে ছিলেন সাগর ইসলাম। তারপরও প্রত্যাশার বেলুন ফুলানো হচ্ছিল ১৮ বছর বয়সি বাংলাদেশি এ তীরন্দাজকে ঘিরে।
প্রত্যাশার বেলুন ফোলার অন্যতম কারণ ছিল নানা বৈশ্বিক আসরে বাংলাদেশের সাফল্যর কারণে। কিন্তু সে সাফল্যগুলো কোন মানের প্রতিযোগিতা থেকে এসেছে— সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া হয়নি। প্যারিস অলিম্পিকে প্রত্যাশার বেলুন চুপসে যাওয়াটা ছিল সময়ের ব্যপার মাত্র। সেটা মাউরোর নেসপলির কাছে হারের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হলো।
বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) পাঠানো ই-মেইল বার্তায় হারের পর সাগর ইসলাম বলেছেন, ‘সবাই জিততে চায়। আমিও জিততে চেয়েছিলাম। কিন্তু কোনও কারণে তা হয়নি। এটা আমার মাত্র শুরু। আশা করছি, সামনের দিকে শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসতে পারবো।’
সাগরের হারের মাধ্যমে বাংলাদেশের তিন প্রতিনিধির অলিম্পিক মিশন শেষ হল। শুটার রবিউল ইসলাম, সাঁতারু সামিউল ইসলাম রাফির পর সাগর ইসলাম। বাকি রইলেন সাঁতারু সোনিয়া খাতুন ও স্প্রিন্টার ইমরানুর রহমান।
৩ আগস্ট নারীদের ৫০ মিটার ফ্রিস্টাইল ইভেন্টে পুলে নামবেন সোনিয়া খাতুন। ৪ আগস্ট বাংলাদেশের অলিম্পিক মিশন শেষ হবে ইমরানুর রহমানের ১০০ মিটার স্প্রিন্ট দিয়ে। দুজনেই হিটে লড়বেন, তাদের লড়াইও নিজের সঙ্গে।
মন্তব্য করুন