কেউ এসেছেন স্পেন থেকে, কেউ জার্মানি থেকে। একে অপরকে চেনেন না, অলিম্পিক ভিলেজে এসেই পরিচয়। অথচ সবাই খেলবেন একই পতাকাতলে, এক দেশের হয়ে- দেশটির নাম ‘শরণার্থী অলিম্পিক দল’।
বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে আছে প্রায় সাড়ে ১১ কোটি শরণার্থী। তাদের মধ্যে বিপুলসংখ্যক বিভিন্ন পেশাজীবী এবং ক্রীড়াবিদও রয়েছেন। শরণার্থী ক্রীড়াবিদদের অলিম্পিকে খেলার বিষয় নিয়ে প্রথম ভাবা হয়েছিল ২০১৫ সালে। ২০১৬ সালের রিও অলিম্পিকে তাদের খেলার সুযোগ করে দেওয়া হয়- বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা শরণার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করতে গেমসে অংশ নিয়েছিলেন ১০ ক্রীড়াবিদ।
আন্তর্জাতিক অলিম্পিক সংস্থার (আইওসি) শরণার্থী দলের ২৯ সদস্য অংশ নিয়েছিলেন ২০২০ সালের টোকিও গেমসে। এবারের আসরে দলের পরিধি বেড়েছে- অংশ নিচ্ছেন ৩৭ ক্রীড়াবিদ।
অ্যাথলেটিকস, ব্যাডমিন্টন, বক্সিং, ব্রেকিং (বিশেষ ধরনের নৃত্য ও শারীরিক কসরত), ক্যানোয়িং (ছোট নৌকা চালনা), সাইক্লিং, জুডো, শুটিং, সাঁতার, তায়কোয়ানদো, ভারোত্তোলন এবং কুস্তিতে অংশ নিচ্ছেন শরণার্থী ক্রীড়াবিদরা। কন্টিনজেন্টের শেফ দ্য মিশনের দায়িত্ব পালন করছেন ২০২০ সালের শরণার্থী অলিম্পিক দলের হয়ে রোড সাইক্লিং ইভেন্টে অংশ নেওয়া মাসুমা আলী জাদা, যিনি প্রথম শরণার্থী হিসেবে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) অ্যাথলেটিকস কমিশনের সদস্য নির্বাচিত হন।
গেমসের উদ্বোধনী মার্চপাস্টে পতাকা বহন করবেন ক্যামেরুনে জন্ম নেওয়ার পর শরণার্থী হয়ে যাওয়া ২৫ বছর বয়সী বক্সার সিন্দেই গাম্বা। উদ্বোধনী মার্চপাস্টে প্রথম দল হিসেবে প্যারেড করবে গ্রিস, যে দেশে জন্ম হয়েছিল অলিম্পিকের। গ্রিসের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে প্যারেড করবে শরণার্থী অলিম্পিক দল।
দলের সদস্যদের সরাসরি দেখা হয়েছে মাত্র কয়েক দিন আগে। একটি পরিবারের সদস্য হয়ে উঠতে সবাই চেষ্টা করছেন। শরণার্থী পরিবারের সদস্যদের দিন কাটছে কঠোর অনুশীলনের মধ্য দিয়ে। সদস্যদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে শরণার্থী অলিম্পিক দলের শেফ দ্য মিশন মাসুমা আলী জাদা বলেন, ‘এমন একটা দলের শেফ দ্য মিশনের দায়িত্ব পালন করা অনেক বড় বিষয়। আমরা কেবল শরণার্থী দলকে প্রতিনিধিত্ব করছি না। গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা ১১৪ মিলিয়ন শরণার্থীকে প্রতিনিধিত্ব করছি যাদের অনেক বড় স্বপ্ন আছে, প্রতিভা আছে কিন্তু সুযোগ-সুবিধা কম। আমার ওপর অর্পিত দায়িত্বটা অনেক বড়। এ দায়িত্ব পেয়ে আমি অবাক, বিস্মিত হয়েছি।’
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন অলিম্পিকে খেলতে যাওয়া শরণার্থী দলকে তত্ত্বাবধান করেছে। কাবুলে জন্ম নেওয়া মানিঝা তালাস রাস্তায় একজনকে নাচতে দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। সে আগ্রহ ২১ বছর বয়সী তরুণীকে ব্রেকিং ইভেন্টের অ্যাথলেট হিসেবে গড়ে তোলে। ২০২১ সালে আফগানিস্তান ছেড়ে স্পেনে চলে যান মানিঝা তালাস। শরণার্থী হিসেবে বসবাস করছেন সেখানেই।
ছেলেদের ৮০ কেজি ওজন বিভাগে খেলতে নামবেন ২২ বছর বয়সী ফারজাদ মানসৌরি। যুক্তরাজ্যে বসবাস করা এ ক্রীড়াবিদ ২০২০ সালের টোকিও অলিম্পিক খেলেছেন আফগানিস্তানের হয়ে। মানসৌরির মতো দ্বিতীয় অলিম্পিক খেলার সৌভাগ্য হয়নি তার বন্ধু মোহাম্মদ জান সুলতানির। কাবুলে আত্মঘাতী বিমান হামলায় মারা যাওয়া বন্ধুর স্মৃতি নিয়ে এবার ম্যাটে নামবেন শরণার্থী অলিম্পিক দলের অন্যতম সদস্য মানসৌরি।
অলিম্পিক লড়াইয়ে নামার আগে ৬ ফুট ৫ ইঞ্চি উচ্চতার দৈত্যকায় তায়কোয়ানদো মানসৌরি বলেছেন, ‘আশা করছি, আমার দেশ আফগানিস্তানের শান্তি ফিরবে, শান্তি ফিরবে গোটা বিশ্বে।’
যুদ্ধবিগ্রহ এবং নানা কারণে জন্মভূমি ছেড়ে প্রবাসী হওয়ার যন্ত্রণা আড়াল করে শান্তির বার্তা নিয়ে অলিম্পিক খেলতে নামছেন শরণার্থী দলের সদস্যরা।
মন্তব্য করুন