উইম্বলডনের ফাইনাল যে তিন সেটে শেষ হবে তা বোধহয় কেউ ভাবতে পারেননি। কার্লোস আলকারাজের সামনে আক্ষরিক অর্থেই রোববার (১৪ জুলাই) দাঁড়াতে পারেননি নোভাক জোকোভিচ।
স্প্যানিশ তারকা ফাইনাল জিতেছেন ৬-২, ৬-২, ৭-৬ (৭/৪) গেমে। সময় লেগেছে মাত্র ২ ঘণ্টা ২৭ মিনিট। তৃতীয় সেট শেষ হওয়ার ২০ মিনিট আগেও অবশ্য চ্যাম্পিয়নশিপ পয়েন্ট পাওয়ার সুযোগ এসেছিল আলকারাজের সামনে। তিনি সেটা নিতে পারেননি। তাই ফাইনালটি আড়াই ঘণ্টা স্থায়ী হয়। তা না হলে দুই ঘণ্টায়ই শেষ হয়ে যেত। জোকোভিচও বুঝতে পেরেছিলেন যে হারতে যাচ্ছেন। ফাইনাল শেষে কথাটা স্বীকারও করেছেন ২৪টি গ্র্যান্ডস্লামের মালিক।
প্রিন্স অব ওয়েলস কেট মিডলটনের হাত থেকে উইম্বলডন ট্রফি নেওয়ার পর আলকারেজ অবশ্য বিনিতভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, জোকোভিচের মতো চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে আরও অনেক দূরের পথ পাড়ি দিতে হবে। সবেমাত্র চারটি গ্র্যান্ডস্লাম জিতেছেন আলকারেজ। ষষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে একই বছর ফরাসি ওপেন ও উইম্বলডন জিতেছেন তিনি। ছুঁয়েছেন রাফায়েল নাদালকে। শুধু তাই নয়, বিয়ন বর্গের রেকর্ডও ভেঙেছেন। আলকারাজ সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে ফরাসি ওপেন ও উইম্বলডন জিতেছেন এবার। তিনি যে ভবিষ্যতে আরও অনেক গ্র্যান্ডস্লাম জিতবেন তা মেনে নিয়েছেন জকোভিচও। ম্যাচ শেষে আলকারাজের প্রশংসা করে বলেছেন, ‘কোর্টে আজ (রোববার) একজনই খেলেছে। তার সঙ্গে প্রচুর মানুষ যুক্ত। তাদেরও ধন্যবাদ। আলকারাজ, তুমি যা করেছ, ২১ বছর বয়সে তা করা অবিশ্বাস্য। এভাবেই এগিয়ে যাও। আশা করি আরও অনেক ট্রফি তোমার হাতে দেখতে পাব।’
এখানেই না থেমে জোকোভিচ বলেন, ‘এ ফল আমি চাইনি। কিন্তু প্রথম দুই সেটে নিজের সেরা টেনিস খেলতে পারিনি। কার্লোসকে শুভেচ্ছা। সে অনেক উঁচুমানের টেনিস খেলেছে। পেছনের কোর্ট থেকে যেভাবে খেলছিল তা অসাধারণ। হয়তো আজ (রোববার) আমার জেতারই কথা ছিল না। চাচ্ছিলাম ম্যাচটা যতটা সম্ভব টেনে নিয়ে যাওয়া যায়। যোগ্য হিসেবেই জিতেছে আলকারেজ। ওকে অনেক শুভেচ্ছা।’
স্প্যানিশ তারকা প্রশংসায় ভুলে যাওয়ার বান্দা নন। তিনি যে লম্বা রেসের ঘোড়া, তা হয়তো জানেন। এখনো জোকোভিচের মতো গ্রেট হতে গেলে যে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে সেটাও তার জানা। উইম্বলডন শিরোপা হাতে নিয়ে আলকারাজ বলেন, ‘জোকোভিচ দারুণ লড়াকু প্রতিপক্ষ। সে দারুণ লড়াই করেছে। আমি শুধু নিজেকে শান্ত রেখেছিলাম। ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে খেলেছি। নিজের সেরা খেলাটা খেলার চেষ্টা করেছি। কিন্তু এখনো নিজেকে সেরাদের দলে রাখব না। জোকোভিচদের খেলা দেখে বড় হয়েছি। তাদের দেখে শিখেছি। তারাই আমার কাছে নায়ক। তাদের সমান হতে গেলে এখনো অনেক দূর যেতে হবে।’
উইম্বলডনের বিশেষত্বও মেনে নিয়েছেন আলকারেজ, ‘এই কোর্ট, এই প্রতিযোগিতা, এই ট্রফি টেনিসের মধ্যে সেরা। তাই এখানে খেলার অনুভূতি আলাদা। জেতার অনুভূতি আলাদা।’
উইম্বলডন জেতাটা স্বপ্নের মতো জানিয়ে জোকোভিচ বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমার কাছে উইম্বলডন জেতা একটা স্বপ্নের মতো ছিল। সেন্টার কোর্টে এসে ঠিক এইভাবে দাঁড়াব। বারবার নিজেকে মনে করাই যে, এখানে এসে দাড়ানোর অনুভূতিটা কতটা সুখের। প্রতিবার এই কোর্টে পা রাখার সময় মনে হয়, প্রথমবার খেলতে নামছি। নিজেকে একটা বাচ্চা মনে হয়। আমি এখনো ছোটবেলার স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে আছি।’
সেই স্বপ্নটাই রোববার তার হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছেন ঘাসের কোর্টের নতুন নায়ক আলকারাজ।
মন্তব্য করুন