অনেক দিন ধরেই স্প্যানিশ তারকা কার্লোস আলকারাজকে টেনিসের ভবিষ্যৎ বলে ডাকা হচ্ছে। রাফায়েল নাদালের একাডেমি থেকে উঠে আসা তরুণ গত দুই বছরে তিনটি গ্র্যান্ডস্লাম জিতে ভবিষ্যতে বড় তারকা হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছেন।
আর ২৪টি গ্র্যান্ডস্লামের মালিক নোভাক জকোভিচকে তো একই সঙ্গে টেনিসের অতীত ও বর্তমান বলা যায়। আজ সন্ধ্যায় উইম্বলডনে তাই টেনিসের বর্তমান আর ভবিষ্যতের লড়াই দেখবে দুনিয়া।
নাদাল ইনজুরিতে খেলছেন না। কিংবদন্তি রজার ফেদেরার টেনিস ছেড়েছেন। এই প্রজন্মের অতীত গৌরব একা বহন করছেন জকোভিচ। তাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন নতুন প্রজন্মের আলকারাজ। গত উইম্বলডনের ফাইনালেও তারা দুজন মুখোমুখি হয়েছিলেন।
পাঁচ সেটের মহাকাব্যিক লড়াই শেষে জকোভিচকে ১-৬, ৭-৬, ৬-১, ৩-৬, ৬-৪ গেমে হারিয়ে প্রথম উইম্বলডন জিতেছিলেন আলকারাজ। টেনিস দুনিয়াকে নিজের প্রতিভাও চিনিয়েছিলেন। এবার কি সেই হারের শোধ তুলতে পারবেন সার্বিয়ার তারকা। নাকি নিজের চতুর্থ মেজর টাইটেল জিতে স্পেনকে আনন্দে ভাসাবেন নাদালের উত্তরসূরি।
উইম্বলডনের সেমিফাইনালে ৬-৭, ৬-৩, ৬-৪, ৬-৪ গেমে দানিল মেদভেদেভকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছেন তিনি। তার আগেই ইউরো ফুটবলের ফাইনালে উঠেছে স্পেন। আজ রাতে তারা খেলবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।
সেই প্রসঙ্গ টেনে আলকারাজ বলেছেন, ‘স্পেনীয় হিসাবে বলতে পারি, রোববার আমাদের জন্য আদর্শ দিন হতে পারে। সন্ধ্যায় উইম্বলডনে আমার ফাইনাল। রাতে ইউরোর ফাইনাল। স্পেনের লোকেরা দুটি খেলা দেখতে পাবেন। যদি দুটি ম্যাচই আমরা জিতি, তাহলে সবচেয়ে ভালো হবে। রোববারটা স্পেনময় হবে। একজন স্পেনীয় হিসেবে এর থেকে ভালো আর কী হতে পারে।’
কিন্তু দিনটি স্পেনের করার জন্য বড় বাধার মুখে পড়তে হবে আলকারাজকে। সম্ভবত ইউরো ফাইনালে স্পেনের প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ডের চেয়েও কঠিন বাধার মুখে পড়তে হবে তাকে। ২৪টি গ্র্যান্ডস্লামের মালিক এবার প্রতি ম্যাচেই প্রতিপক্ষকে হারানোর পর ভায়োলিন বাজানোর ভঙ্গি করছেন। জানিয়েছেন, মেয়ে ভায়োলিন বাজানো শিখেছে বলেই তার এমন উদযাপন।
রোববার (১৪ জুলাই) উইম্বলডন ফাইনালে সেই উদযাপন থামানোটা সহজ হবে না। আলকারাজ জানেন সে কথা। যে কারণে ফাইনালের আগে বলেছেন, ‘জকোভিচ কেমন খেলোয়াড়, সবাই জানে। এত বছরের অভিজ্ঞতা আছে তার। এত গ্র্যান্ডস্লাম জেতার অভিজ্ঞতা আছে। তাই জকোভিচকে হারাতে হলে নিজের সেরা খেলা খেলতে হবে। আমি লড়াই করব। আশা করি, একটা ভালো ফাইনাল দর্শকরা দেখতে পাবেন।’
শুক্রবার ইতালির লোরেঞ্জো মুসেত্তিকে সরাসরি সেটে ৬-৪, ৭-৬, ৬-৪-তে হারিয়ে ফাইনালে ওঠা জকোভিচ কী ভাবছেন। তিনি ফাইনালের আগে বলেন, ‘উইম্বলডন শুরু হওয়ার আট দিন আগে আমি লন্ডনে এসেছিলাম। প্রতিযোগিতা শুরুর তিন-চার দিন আগেও আমি জানতাম না, খেলতে পারব কি না। কিন্তু নাম তুলিনি। সূচি তৈরি হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করছিলাম। অনুশীলনে বিশ্বের প্রথম সারির কয়েকজন প্লেয়ারের সঙ্গে বেশ কয়েকটা সেট খেলেছিলাম। তাতে বুঝতে পেরেছিলাম, শুধু উইম্বলডনে নামা নয়, অনেক দূর যেতে পারব। অনেকটা আত্মবিশ্বাস পেয়েছিলাম। ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে নেমেছিলাম। তার জন্য আমার দলকেও অনেক ধন্যবাদ।’
এই হলেন জকোভিচ। যিনি কোনো পরিস্থিতিতেই হাল ছাড়েন না। উইম্বলডনের আগে হাঁটুর অপারেশন করিয়েছিলেন। এরপর এমন টেনিস তার পক্ষেই খেলা সম্ভব। আজ জিতলে ২৪ গ্র্যান্ডস্লামের মালিক ছুঁয়ে ফেলবেন রজার ফেদেরারকে।
ফাইনালে নামার আগে তিনি যে উইম্বলডন জিততে মরিয়া সেটাও জানিয়েছেন, ‘আমি অনেকবার বলেছি যে, ছোট থেকেই উইম্বলডনে খেলা ও জেতার স্বপ্ন দেখতাম। সাত বছর বয়সে মাথার ওপর দিয়ে বোমারু বিমান উড়ে যেতে দেখেছি। তখনও বিশ্বের সবচেয়ে ঐতিহ্যশালী কোর্টে খেলার স্বপ্ন দেখেছি। উইম্বলডন ট্রফির গুরুত্ব আমার কাছে সবচেয়ে বেশি। আমি যখনই ঘাসের কোর্টে নামি, টেনিসকে কৃতজ্ঞতা জানাই।’
টেনিসও যদি আজ তার দিকে সুদৃষ্টি নিয়ে তাকায় তাহলে কিন্তু দিনটা আলকারাজের হওয়া সম্ভব নয়।
মন্তব্য করুন