স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০২৪, ১১:২২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

দাবাকে ভালোবেসে, দাবার কোর্টেই প্রাণ

গ্রান্ড মাস্টার জিয়াউর রহমান। ছবি : সংগৃহীত
গ্রান্ড মাস্টার জিয়াউর রহমান। ছবি : সংগৃহীত

দক্ষিণ এশিয়ার ছোট্ট এক দেশ বাংলাদেশ। এক লক্ষ ৪৭ হাজার বর্গ কিলোমিটারের এই দেশে খেলা বলতে মানুষ সাধারণত ক্রিকেট-ফুটবলকেই বুঝে থাকে। তবে ক্রিকেট-ফুটবলের মাঝেও দাবা নামক এক খেলার প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছিলেন কয়েক বাংলাদেশী যার মধ্যে একজন ছিলেন জিয়াউর রহমান। ১৯৭৪ সালে জন্ম নেওয়া এই দাবাড়ুর মনে প্রাণে ছিল দাবা, যা তিনি ধারণ করেছিলেন নিজের জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত।

দিনাজপুরের ছেলে জিয়া ছোটবেলাতেই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন গ্র্যান্ডমাস্টার হবেন। তখন দক্ষিণ এশিয়ার ছোট্ট এই দেশটিতে গ্রান্ড মাস্টার মাত্র একজন নিয়াজ মোরশেদের। তরুণ দাবাড়ুদের মধ্যে আদর্শ হয়ে ওঠা বাংলাদেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোরশেদ ছিলেন জিয়ারও আদর্শ।

জিয়ার বাবা পয়গাম উদ্দিন আহমেদ নিজেও ছিলেন দাবাড়ু। বুয়েটের চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন এবং খেলেছিলেন জাতীয় দাবাও। তাই ছেলেকেও দাবা খেলায় বাধা দেননি। বাবার সমর্থনে ও পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের ফলে ২০০২ সালে তিনি দেশের দ্বিতীয় গ্র্যান্ডমাস্টার হন। বর্তমানে নিয়াজ মোরশেদ, জিয়াউর রহমান ছাড়াও বাংলাদেশ আরও তিন গ্র্যান্ডমাস্টার পেয়েছে—রিফাত বিন সাত্তার (২০০৬), আবদুল্লাহ আল রাকিব (২০০৭), এবং এনামুল হোসেন রাজিব (২০০৮)।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করা জিয়াউর রহমান প্রথম স্কুল দাবায় অংশ নেন ১৯৮৪ সালে। সেবার অবশ্য তেমন কিছু দিতে পারেননি। পরের বছরই অবশ্য দ্বিতীয় হন। আর তার পরের বছর চ্যাম্পিয়ন।

১৯৮৭ সালে সাব জুনিয়রের পর জাতীয় চ্যাম্পিয়নের খেতাব আসে ১৯৮৮ তে। নিয়াজ মোরশেদের সামনে চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা ছিল তার বিশেষ পাওয়া।

নিজের আদর্শের গ্রান্ড মাস্টার নিয়াজের সঙ্গে জিয়ার প্রথম লড়াই কলকাতার একটি ওপেন জিএম টুর্নামেন্টে সেটিতে ড্র করেন তিনি। প্রথম জয় আসে নিয়াজের বিপক্ষে ১৯৯৭ সালে। অবশ্য এর চার বছর আগেই ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার হন জিয়া।

১৯৯৯ সালে পান প্রথম গ্রান্ডমাস্টার নর্ম; বাংলাদেশের দাবাড়ুদের মধ্যে সর্বোচ্চ ২৫০০ রেটিংও সেই সময়। ২০০১ সালে পূর্ণ হয় দ্বিতীয় নর্ম।

২০০৫ সালের অক্টোবরে জিয়ার রেটিং পৌঁছেছিল ২৫৭০-এ, যা এখনো বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। সেখান থেকে নামতে নামতে শেষ পর্যন্ত রেটিং ছিল ২৪০০-এর ঘরে।

২০০৫ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দুর্দান্ত ফর্মে থেকে রেটিং ২৫৭০ হয়েছিল তার। ফর্মটা পড়ে যায় ২০১০-এ এসে, কোচিং নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ায়।

এরপরও ২০১২ সালে ভারতে হওয়া আন্তর্জাতিক ওপেনে চ্যাম্পিয়নের শিরোপা ঘরে তোলেন জিয়াউর রহমান। ২০১৮ সালে নয়াদিল্লিতে ১৮তম ওপেন আন্তর্জাতিক গ্র্যান্ডমাস্টার দাবায় হন রানার্স আপ। বাংলাদেশ গেমসেও শিরোপা এনেছিলেন। হয়তো আরো ভালো কিছু করতেন তবে জীবিকার তাগিদে ২০১০ সালে কোচিংয়ে যোগ দেওয়াটা আর নিজের রেটিং কমে যাওয়ার একটি কারণে তা হয়নি।

দাবা ফেডারেশন উদ্যোগী না হলে দাবাড়ুরাও পেছাবে বলে শঙ্কা ছিল জিয়ার। তবে ফেডারেশনকে এসব নিয়ে উদ্যোগী হওয়ার তাগিদ সবসময় দিয়ে এসেছেন জিয়া। কাজ হয়নি। জিয়ার চলে যাওয়াও এই আফসোস নিয়েই। ছেলেকে বড় দাবাড়ু হতেও দেখে যেতে পারলেন না জিয়া। এটিই হয়তো আফসোস থাকবে তার?

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সিরাজগঞ্জে বন্যার পানিতে ডুবে তিন শিশু-কিশোরের মৃত্যু

বন্যার পানিতে খেলতে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ, ২ দিনেও সন্ধান মেলেনি যুবকের

৩ দিন পর করতোয়ায় ভেসে উঠল কলেজছাত্রের মরদেহ

পাচারের কথা বলে ৩ নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ

গুনে গুনে ঘুষ নেওয়া সেই মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে মামলা

ইসরায়েলকে যেভাবে প্রাণঘাতী যুদ্ধে প্রলুব্ধ করেছে হামাস

কোপায় ব্যর্থতার পরও নিরাপদ ব্রাজিল কোচ

রংপুরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

মিরসরাইয়ে অবৈধ বালু উত্তোলনে জরিমানা

১০

কোটার বিরুদ্ধে এবার মাঠে নামছে বুয়েট শিক্ষার্থীরা

১১

দাফনের ৮ মাস পর কবর থেকে বৃদ্ধার লাশ উত্তোলন

১২

খুলনায় দুদি‌নের ব‌্যবধা‌নে যুবলীগের আরেক নেতা খুন

১৩

ভারি বর্ষণ হতে পারে যেসব বিভাগে

১৪

সাংবাদিকের ওপর আ.লীগ নেতার আতর্কিত হামলা

১৫

কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ

১৬

সিলেটে বন্যার মধ্যেই বৈরী পরিস্থিতিতে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু মঙ্গলবার

১৭

ডাকাতি হলেও মোবাইল হারানোর জিডি নিল পুলিশ

১৮

২১ কোটি ৬০ লাখ টাকায় বিক্রি নেপোলিয়নের পিস্তল

১৯

কারবালায় সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্বে ইমাম হোসাইনের (রা.) নেতৃত্বে সত্যের বিজয় ঘটেছে

২০
X