দ্রুত এগিয়ে আসছে কোপা আমেরিকা শুরুর সময়। একই সঙ্গে সমর্থকদের মাঝে বাড়ছে প্রত্যাশা আর উৎকণ্ঠা। কোপা আমেরিকা লাতিন অঞ্চলের জাতীয় দলগুলোর জন্য সবচেয়ে মর্যাদাকর ফুটবল টুর্নামেন্ট।
তবে দক্ষিণের সঙ্গে এবার মধ্য ও উত্তর আমেরিকার দলগুলো অংশ নেবে কোপার ৪৮তম আসরে। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার লক্ষ্য শিরোপা ধরে রাখা। অন্যদিকে ব্রাজিলের লক্ষ্য শিরোপা পুনরুদ্ধার করা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আর্জেন্টিনার শিরোপা ধরে রাখার মিশনে একমাত্র ব্রাজিলই কি বাধা?
২০২১ সালে মারাকানায় ব্রাজিলকে হারিয়ে ২৮ বছর পর কোপা শিরোপা উৎসব করে আর্জেন্টিনা। এরপর লিওনেল মেসির নেতৃত্বে ২০২২ সালে কাতারে জেতে ফিফা বিশ্বকাপ।
এরপর বয়ে যায় অনেক ঝড়। হঠাৎ করেই পুরো কোচিং স্টাফসহ আর্জেন্টিনার প্রধান কোচের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন লিওনেল স্কালোনি। যদিও পরে সেই ঘোষণা থেকে সরে আসেন তিনি।
কোপার প্রস্তুতির জন্য বেশকিছু ম্যাচ খেলেছে আর্জেন্টিনা। একই সঙ্গে ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ম্যাচও খেলেছে আলবিসেলেস্তারা। আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বড় শক্তি তাদের আক্রমণভাগ। অভিজ্ঞ লিওনেল মেসি ও অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার সঙ্গে স্কোয়াডে আছেন লাউতারো মার্তিনেজ, জুলিয়ান আলভারেজ ও আলেক্সজান্দার গারনাচো।
নিকোলাস ওতামেন্ডি এবং মার্কোস আকুয়ানার মতো অভিজ্ঞ তারকার দায়িত্বে থাকবে রক্ষণ। তাদের পেছনে বাজপাখি খ্যাত এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। গোলপোস্টের নিচে তার পারফরম্যান্স নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলতে পারবে না কেউ।
বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় আসরের প্রথম ম্যাচ খেলতে হবে আর্জেন্টিনাকে। প্রতিপক্ষ কানাডা। এ ছাড় গ্রুপ-এতে তাদের অন্য দুই প্রতিপক্ষ পেরু ও চিলি। অভিজ্ঞ ও তারুণ্যনির্ভর দলটির শিরোপা জয়ের জন্য বেশি বলে দাবি করছেন অনেক ফুটবল বিশেষজ্ঞ।
শিরোপার পথে আর্জেন্টিনার বাধা
শিরোপা জয়ের পথে আর্জেন্টিনাকে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। আবারও কোপা আমেরিকা ট্রফি ঘরে তুলতে মেসিদের প্রধান প্রতিযোগী হতে পারে ব্রাজিল। এ ছাড়া আরও রয়েছে উরুগুয়ে, কলম্বিয়া ও চিলি।
ব্রাজিল : আর্জেন্টিনার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল সবচেয়ে বড় বাধার দেয়াল তৈরি করবে। অভিজ্ঞ নেইমার না থাকলেও আছেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র, এনদ্রিকের মতো তরুণ তুর্কী।
নতুন কোচ দরিভাল জুনিয়রের কৌশল সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নেই অনেকের। ব্রাজিল ম্যাচের চাপ ও কৌশলগত দক্ষতার মুখোমুখি হওয়ার জন্য আর্জেন্টিনার ফুটবলারদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
উরুগুয়ে : দক্ষিণ আমেরিকার আরেক ক্লাসিক প্রতিদ্বন্দ্বী উরুগুয়েও আর্জেন্টিনার কোপা আমেরিকার জয়ের আকাঙ্ক্ষার হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। শারীরিক শক্তি প্রয়োগ করে খেলার জন্য তারা বেশ পরিচিত। উরুগুয়ের ফুটবলার লড়াইয়ের মনোভাব বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত।
লুইস সুয়ারেজ-এডিনসন কাভানির মতো অভিজ্ঞদের সঙ্গে স্কোয়াডে রয়েছে ডারউইন নুনেজ, ভালভার্দে এবং রোনাল্ডর মতো তরুণ প্রতিভা।
কঠিন পরিস্থিতিতে জয় ছিনিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা এবং সর্বদা প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতা তাদের গুরুতর প্রতিদ্বন্দ্বী করে তোলে। কাজেই ট্রফি জয়ের পথে উরুগুয়ের মুখোমুখি হলে আর্জেন্টিনাকে তীব্র এবং কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
কলম্বিয়া : কোপা শিরোপা ধরে রাখান মিশনে কলম্বিয়া হতে আর্জেন্টিনার মাথা ব্যথার অন্যতম কারণ। অভিজ্ঞ জেমস রদ্রিগেজের নেতৃত্বে পুনরুত্থানের নতু গল্প লেখছে দলটি। দ্রুতগতিতে খেলাই দলটির অন্যতম কৌশল।
কলম্বিয়ার পাল্টা আক্রমণগুলোর বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে আর্জেন্টিনাকে।
চিলি : চিলি দুবার লিওনেল মেসি এবং আর্জেন্টিনাকে শিরোপা বঞ্চিত করেছে। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে কোপার ফাইনালে চিলির কাছে হেরে রানার্স আপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় মেসিদের। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে চিলি। তবে তাদের প্রতিভাবান এবং অভিজ্ঞদের কমতি নেই।
সবশেষে বলা যায়, সর্বোচ্চ রেকর্ড ১৬তম শিরোপা জয়ের পথে আর্জেন্টিনাকে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হবে। ব্রাজিল, উরুগুয়ে, কলম্বিয়া এবং চিলির মতো শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে এবার যোগ হয়েছে মধ্য ও উত্তর আমেরিকার দলগুলো।
তবে লিওনেল মেসির নেতৃত্বে অভিজ্ঞ ও প্রতিভাবানদের মিশেলে স্কোয়াড কি পারবে শিরোপা ধরে রাখতে? না কি বাধা হয়ে দাঁড়াবে অন্য কেউ?
মন্তব্য করুন