আর্জেন্টিনার সান্তা ফে প্রদেশের রোজারিও শহর। বুকে স্বপ্ন নিয়ে যে শহরে জন্ম নেয় হাজারো শিশু। স্বপ্নটা একটাই বড় মাপের ফুটবলার হওয়া। ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৮, ভ্যালেনটাইন্স ডেতে মা ডায়ানা হার্নান্দেজ ও পিতা মিগুয়েল ডির ঘর আলো করে জন্ম নেন তেমনই এক শিশু।
ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে ডায়ানা-মিগুয়েলের ছেলেটা। দিন যত যেতে থাকে ছেলের দুরন্তপনা ততোই বাড়তে থাকে। অবশ্য দেখতে রোগা পাতলা হলেও গায়ে জোর ছিল প্রবল। তবে বাবা মায়ের মন বলে কথা। অনেকটা উদ্বিগ্ন হয়েই বাড়ির পাশের এক চিকিৎসকের পরামর্শ নেন বাবা-মা।
ছেলেকে দেখে ডাক্তার সাব বলেন, ‘ওকে ফুটবলে দিয়ে দাও। দুরন্তপনাটা ওখানেই দেখাক।’ যেই কথা সেই কাজ। বাবা-মা পরামর্শ করে দিয়ে ছেলেকে দিয়ে দিলেন ফুটবল খেলতে। সেই থেকেই ছেলেটাও স্বপ্ন দেখতে শুরু করল বড় হয়ে নামী ফুটবলারই হবেন তিনি।
তবে যে ঘরে নুন আনতেই পান্তা ফুরোয় সে ঘরে বসে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখা যে পিচঢালা রাস্তায় তপ্ত রোদে পানি দেখতে পাওয়ার মতোই মিছে। বাবা যে গরিব একজন কয়লা শ্রমিক। যিনি কিনা সন্তানকে এক জোড়া ভালো বুটই কিনে দিতে অপারগ।
অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্নটা লালন করতে থাকেন মনে। বাবা যেমন কষ্টে ছেলের স্বপ্নটা পূরণ করতে থাকেন তেমনই বাবাকেও কয়লার কারখানায় কয়লা শ্রমিক হয়ে করেছেন সাহায্য। কয়লার কালিমাখা শরীরটা নিয়েই মেতেছেন ফুটবলে।
দুই হাজার সাত সালে অনূর্ধ্ব বিশ বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে পুরো বিশ্বকে নিজের আগমনী বার্তা জানান দেন কয়লার কারখানায় হাতকে শক্ত করা সেই ছেলেটায়। তারপরই ছয় মিলিয়ন ইউরো দিয়ে পর্তুগিজ ক্লাব বেনফিকা কিনে নেয় স্বপ্নবাজ তরুণকে। ইউরোপের ফুটবলে সেই থেকেই পদচারণা শুরু। তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
নজরকাড়া পারফরম্যান্স দেখে দুই হাজার পনেরো পর্যন্ত চল্লিশ মিলিয়ন ইউরোতে আবারও চুক্তি নবায়ন করে বেনফিকা। তার পরেই আর্জেন্টিনার ফুটবল ঈশ্বর ম্যারাডোনা তাকে আর্জন্টিনার সুপারস্টার বলেও আখ্যা দেন।
স্পেনের জায়ান্ট ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা কিংবা ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ইতালিয়ান ক্লাব যুভেন্তাস, ফ্রান্সের জায়ান্ট পিএসজি সব বড় বড় ক্লাবের জার্সি উঠেছে তার গায়ে।
ম্যারাডোনা-পরবর্তী যত সাফল্য আছে আর্জেন্টিনার তার প্রায় বেশিরভাগেই অবদান আছে তার। ২০০৮ সালে অলিম্পিকে ফাইনালে ওঠা ও অলিম্পিকে স্বর্ণ জেতাতে একমাত্র গোলটিও তার।
শুধু কি তাই, স্মৃতির পাতায় তরতাজা ২০২১ এর কোপাতেও একমাত্র গোলটা তারই। আর লিওনেল মেসির বিশ্বকাপ জিততে পারার আসল নায়ক তো তিনিই।
জাতীয় দল, ক্লাবে অসংখ্য সাফল্য এসেছে তার হাত ধরেই। তবুও ফুটবল বিশ্বে তিনি পান না তার প্রাপ্য সম্মান। আলোচনার ক্ষেত্রে আলোচনা হয় তবে থেকে যান নিভৃতেই। যে জন্য তাকে বলা হয় সাইলেন্ট হিরো। অনেকে তাকে ডাকেন দ্য মোস্ট আনডাররেটেড ফুটবলার হিসেবেও।
এত কিছুর পরেও নিজের কাজটা করে গেছেন করে যাচ্ছেন নীরবে। কোনো অভিযোগ নেই, নেই কোনো অনুযোগ। জন্মদিনে আপনাকে সালাম। শুভ জন্মদিন আর্জেন্টিনার সাইলেন্ট হিরো, গ্রহের অন্যতম সেরা ফুটবলার আনহেল ফাবিয়ান ডি মারিয়া।
মন্তব্য করুন