দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের নারী ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের আসরে ফেভারিটদের তালিকায় বাংলাদেশের নাম তেমন পুরোনো নয়। গেল কয়েক বছরে নারী ফুটবলে অভিনব উন্নতি দিয়ে সিনিয়র সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে নিজেদের সেরার কাতারে দাঁড় করিয়েছেন সাবিনা-সানজিদারা। তবে তাদের এই সাফল্য আসা বয়সভিত্তিক পর্যায় থেকেই। নারী ফুটবলের অনূর্ধ্ব-১৯ ও অনূর্ধ্ব-২০ ক্যাটাগরিতে শেষ চার আসরে তিনবারই শিরোপা জয় বাংলাদেশ। তাদের সামনে আবারও আরেকবার ট্রফি জয়ের সুযোগ। কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা ৬টার ফাইনালের লড়াইয়ে আফিদা খন্দকার, সাগরিকারা ভারতকে হারাতে পারলেই আবারও দক্ষিণ এশিয়ার সেরা হবে তারা।
প্রতিপক্ষ দলের প্রতি সম্মান দেখালেও লাল-সবুজ কোচ সাইফুল বারী টিটুর দৃষ্টি শুধু শিরোপাতেই। বয়সভিত্তিক এ প্রতিযোগিতায় ২০২২ সালের ফাইনালে ভারতের কাছে হারতে হয়েছে লাল-সবুজদের। এ নিয়ে অবশ্য বাংলাদেশ কোচ কোনো কিছুই ভাবছেন না। ভারতের কোচের চোখেও সেটি অতীত।
কয়েক ঘণ্টা পর শুরু হওয়া এই ফাইনালের আগে বাংলাদেশ কোচ সাইফুল বারী টিটু বরং বর্তমানকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন, ‘ভারতের বিপক্ষে (প্রাথমিক পর্বে) ম্যাচটা খেলেছিলাম, সেখানেই তো বুঝেছিলাম প্রতিপক্ষ হিসেবে দলটি কঠিন। খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ হয়েছিল। ফাইনালেও ভারতকে সমীহ করতে হবে। ওভাবে নিজেদের খেলাটা খেলতে হবে।’
চার জাতির এই আসরটি বাংলাদেশ দল শুরু করে নেপালের বিপক্ষে ৩-১ গোলের জয় দিয়ে। পরের ম্যাচে শক্তিশালী ভারতকে হারায় ১-০ গোলে। শেষ ম্যাচে নিয়মিত একাদশের ৯ জনকে বিশ্রাম দিয়েও ভুটানের বিপক্ষে ৪-০ গোলের আয়েশি জয় তুলে নেয় স্বাগতিকরা।
অন্যদিকে ভুটানকে ১০-০ গোলে উড়িয়ে আসর শুরু করা ভারত বাংলাদেশের কাছে হারে। শেষ ম্যাচে নেপালকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে ২০২২ সালের চ্যাম্পিয়নরা।
প্রাথমিক পর্বের ম্যাচের যোগ করা সময়ে সাগরিকার একমাত্র গোলে বাংলাদেশ জিতলেও শুরু থেকে ভারত আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছে। প্রতিযোগিতায় এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৪ গোল করেছে পূজা। ৩ গোল নিয়ে যৌথভাবে সাগরিকার সঙ্গে দ্বিতীয় স্থানে আছেন সিবানী দেবী। দুই ভারতীয় ফরোয়ার্ড নিশ্চয়ই আজ বাংলাদেশ রক্ষণে ভীতি ছড়াবেন।
ম্যাচের আগে ভারতের কোচ শুক্লা দত্ত বলছিলেন, ‘আবার বাংলাদেশের সঙ্গে দেখা হচ্ছে (ফাইনালে), সেটাই বড় ব্যাপার। বাংলাদেশের সঙ্গে আবার খেলতে আমার ভালো লাগবে। একটা ম্যাচ ওদের বিপক্ষে খেলেছি (হেরেছি), দেখা যাক, ফাইনালে কী হয়।’
দুই দেশের অতীত সমীকরণ সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাংলাদেশ কোচ সাইফুল বারী টিটু বলেছেন, ‘অতীত প্রসঙ্গ আমি আসলে খুব একটা অনুভব করি না। আমি ওই সময় দায়িত্বে ছিলাম না। এটা ভিন্ন টুর্নামেন্ট, তুলনামূলক ভালো দলটিই জিতবে।’ নিজ দলের লক্ষ্য সম্পর্কে স্বাগতিক দলের কোচ বললেন, ‘ফাইনাল এমন একটা বিষয়, যেখানে হয়তো আপনার শরীর চলবে না, কিন্তু মন চাইবে ভালো করার। ভারত ক্লান্ত থাকলেও ওভাবেই আসবে, আমাদের ওভাবেই খেলতে হবে। ফাইনালে যে কোনো দলই জিততে পারে। যারাই চ্যাম্পিয়ন হয়, সেরা দলকে হারিয়েই চ্যাম্পিয়ন হতে হয়।’
আসরে দুই দলই মাত্র একটি করে গোল হজম করেছে। কিন্তু গোল করার দিক থেকে ভারত বেশ এগিয়ে। তাদের ১৪ গোলের বিপরীতে বাংলাদেশ করেছে ৮ গোল। এ প্রসঙ্গে সাইফুল বারী টিটু বলেছেন, ‘ওদের আক্রমণভাগে কয়েকজন দ্রুতগতির খেলোয়াড় আছে। মাঝমাঠে ওদের পাসের জোগান নষ্ট করতে হবে। মেয়েদের স্বীকৃতির একটা ব্যাপার আছে। চ্যাম্পিয়ন হলেই ভালো স্বীকৃতি পায়, প্রধানমন্ত্রীও স্বীকৃতি দেন। মেয়েরা সেই সুযোগ তো নিতে চাইবে।’
মন্তব্য করুন