ফুটবলের অনেক বিখ্যাত কিংবদন্তিরই বিশ্বকাপ না জেতার আক্ষেপ আছে। ইউসেবিও, ডে স্টেফানো, পুসকাস, ক্রুইফ, বেস্টরা যখন একটি বিশ্বকাপও জয় করতে পারেনি সেখানে ব্রাজিলের কিংবদন্তি মারিও জাগালোর নামের পাশে তর্কসাপেক্ষে ৫টি বিশ্বকাপ। ৩টিতে তার সরাসরি সম্পৃক্ততা আর ১টিতে ছিলেন সহকারী কোচ এবং সর্বশেষটিতে ছিলেন উপদেষ্টা হিসেবে। তিনি যে কত বড় মাপের কিংবদন্তি ছিলেন তা একটি তথ্যতেই স্পষ্ট হয় ফুটবল ইতিহাসের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে খেলোয়াড়-কোচ উভয় ভূমিকায় বিশ্বকাপ জয় করা প্রথম খেলোয়াড় তিনি। ব্রাজিলের পাঁচ বিশ্বকাপে ভূমিকা রাখা এই কিংবদন্তিকে ব্রাজিলে আদর করে ডাকা হয় বুড়ো নেকড়ে। সেই নেকড়ে তার পাল ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন পরপারে। আর তার এই প্রস্থানে পুরো ব্রাজিলে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
তার এই প্রস্থানে ব্রাজিলের বিভিন্ন বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্যরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছেন এই কিংবদন্তিকে। কালবেলার পাঠকদের জন্য সেই সব বার্তার নির্দিষ্ট কিছু তুলে ধরা হলো-
১৯৯৪ বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিলিয়ান ফুলব্যাক ব্রাঙ্কো সামাজিকমাধ্যমে লিখেন- ‘প্রিয় বুড়ো নেকড়ে, সবকিছুর জন্য তোমাকে অনেক ধন্যবাদ! তুমি সত্যিকারের বিজয়ী, ব্রাজিল জাতীয় দলের ঐতিহ্য। তোমার কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার সৌভাগ্য হয়েছে। তোমাকে চিরকাল সম্মান জানানো হবে। আমি তোমার পরিবার, বন্ধু ও ভক্তদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। বিশ্ব ফুটবলের জন্যও এটা শোকের দিন। শান্তিতে ঘুমাও, জাগালো!
১৯৯৪ বিশ্বকাপজয়ী দলের আরেক সদস্য সেন্টারব্যাক রিকার্দো রোচা লেখেন- ‘কিছু ক্ষতি পায়ের তলার মাটি কেড়ে নেয়। এর মধ্যে এটি (জাগালোর চলে যাওয়া) একটি, সম্ভবত আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ক্ষতিগুলোর একটি। আপনারা জাগালো সম্পর্কে যতটুকু জানেন, টিভিতে বা সংবাদপত্রে যাকে দেখেছেন, আমার কাছে তা নয়। যখন ভেবেছিলাম আমার খেলোয়াড়ি জীবন শেষ হতে চলেছে, তখন সে আমার ক্যারিয়ার বাঁচিয়েছে। সে আমার ওপর আস্থা রেখেছিল। বলেছিল, আমি যদি মাঠে কিছু করে দেখাতে পারি, তাহলে সবাই আমাকে অনুসরণ করবে। আর আমরা বুঝতে পারব, যা-ই হোক না কেন, আমরা চ্যাম্পিয়ন হবোই। তোমার চলে যাওয়া আমার কাছে দুঃস্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকার মতো। তোমার অবদান আমরা চিরকাল স্মরণ করব। কোনো কিছুই দূরে সরে যেতে দেব না। সবকিছুর জন্য ধন্যবাদ। তুমি আমার জীবন বদলে দিয়েছ। জাগালো, আমি মজা করছি না। সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি। সারা জীবন ভালোবাসব।’
ব্রাজিল ফুটবল দলের বর্তমান সদস্য ও রিয়াল মাদ্রিদ তারকা রদ্রিগো তার ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে লিখেছেন-‘আমাদের দেশ ও ফুটবলের জন্য আপনি যা করেছেন তার জন্য ধন্যবাদ গুরু। আপনি শান্তিতে ঘুমান’
ব্রাজিলের আরেক ফুটবলার মারিনিও লেখেন- ‘খবরটি শুনে আমি বিস্মিত হয়েছি। চোখে জল নিয়ে কথাগুলো লিখছি। তার সঙ্গে শেষ বছরগুলো কাটিয়েছি। ফুটবলীয় দর্শন, কথোপকথন, কাজ সম্পর্কে ধারণা ও আত্মবিশ্বাস—সব মিলিয়েই তিনি একজন আইকন। তিনি ব্রাজিল জাতীয় দলের প্রতিটি পদক্ষেপে ও অর্জনে অবদান রেখেছেন। আমার সঙ্গে কাটানোর প্রতিটি মিনিটের জন্য ধন্যবাদ। আমি সর্বদা তোমার কথা শুনেছি। আমার বুড়ো নেকড়ের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা।’
ব্রাজিলের ফুটবল পরিচালক আলেক্সান্দার মাত্তোস জাগালোর প্রস্থান সম্পর্কে বলেন, ‘তুমি আমাদের জন্য যা করেছ, শুধু ধন্যবাদই দিতে পারি। হলুদের প্রতি তোমার ভালোবাসা ছিল অতুলনীয়। ১৯৯৮ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের কথা কীভাবে ভুলতে পারি! পেনাল্টি শুটআউটের কয়েক মিনিট আগে তোমার সমস্ত শক্তি ও প্রত্যয় দিয়ে খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছিলে। আমি সব সময় তোমার বড় ভক্ত। শান্তিতে ঘুমাও, বুড়ো নেকড়ে।’
মন্তব্য করুন