আর্জেন্টিনার ফুটবল অনেক লম্বা সময় ধরে তাদের ফুটবলকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য ‘পরবর্তী ডিয়েগো ম্যারাডোনা’র সন্ধান করছিল। অবশেষে আটবারের ব্যালন ডি’অর বিজয়ী লিওনেল মেসির মধ্যে তারা ম্যারাডোনার চেয়েও বড় রত্ন খুঁজে পেয়েছে। যার হাত ধরে ২০২২ সালে আর্জেন্টিনা ৩৬ বছর পর বিশ্ব ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্ব নেওয়ার গৌরবও অর্জন করেছে।
এখন কালের পরিক্রমায় পালা ‘নতুন লিওনেল মেসি’ খুঁজে বের করার এবং অবস্থা এমন দাড়িয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার প্রতিটি উদীয়মান সুপারস্টারকে মেসির সাথে তুলনা করা হচ্ছে। এবার সে তালিকায় যুক্ত হলো আরেকটি নাম। মেসিরই স্বদেশি ক্লদিও এচেভেরি নামক এক কিশোর।
১৭ বছর বয়সী এই তরুণের জার্সি নাম্বার তাকে যার সাথে তুলনা করা হয় সেই লিওনেল মেসির মতোই ১০। তার প্লেয়িং পজিশনও অনেকটা মেসির মতই ডিপ লাইয়িং ফরোয়ার্ড বা প্লে-মেকার রোলে। মেসির মতোই ডানপ্রান্ত আগলে ধরে ম্যাচের গতি নিয়ন্ত্রনে রাখেন। আবার কখনো আকস্মিক রানে ঢুকে যান ডি-বক্সে। আর সেখানে তার পায়ে বল মানেই রীতিমত অপ্রতিরোধ্য। বল পায়ে কারিকুরি বা ড্রিবলিং করতেও কম যান না রিভারপ্লেট একাডেমি থেকে মূল দলে সুযোগ পাওয়া এই তরুণ। ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচটাই হয়তো এর বড় প্রমাণ।
আরও এক জায়গায় মেসির সঙ্গে অদ্ভুত মিল আছে এচেভেরির। দুই আর্জেন্টাইনেরই উচ্চতা কিঞ্চিত খাটোর দিকে। মেসির উচ্চতা ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি। আর এচেভেরির ৫ ফুট ৬ এর কিছুটা বেশি। এমন খাটো উচ্চতার কারণেই নিজ ক্লাব রিভারপ্লেটের সমর্থকরা আদর করে তার নাম দিয়েছে ‘এল ডিয়াবোলিতো’। যাকে ইংরেজিতে বলা চলে ‘দ্য লিটল ডেভিল বা ছোট্ট শয়তান।’
আর্জেন্টিনার চাচো প্রদেশের ছোট এক শহর রেসিসটেন্সিয়া। বলার মতো কিছু না থাকলেও এখানেই জন্ম ক্লদিও এচেভেরির। বেড়ে উঠা আর ফুটবলের প্রথম দীক্ষাও পেয়েছেন এ শহর থেকেই। ফুটবলে হাতেখড়ি হয়েছিল স্থানীয় দেপোর্তিভো লুজান নামক এক ক্লাবের হয়ে। তবে প্রতিভাবান এ তরুণের আর্জেন্টিনার অন্যতম বিখ্যাত ক্লাব রিভার প্লেটের স্কাউটদের চোখে পড়তে খুব বেশিদিন দেরি হয়নি। ২০১৬ সালে ১০ বছর বয়সে যোগ দেন রিকুয়েলমের ক্লাবটিতে।
রিভারপ্লেটকে আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বড় দুই ক্লাবের একটি ধরা হয়। ঐতিহ্যবাহী এ ক্লাবটি থেকে উঠে এসেছে অসংখ্য প্রতিভাবান ফুটবলার। এইতো কয়েকদিন আগেই আর্জেন্টিনাকে তৃতীয় বিশ্বকাপ জেতানো এঞ্জো ফার্নান্দেজ আর জুলিয়ান আলভারেজ এ রিভারপ্লেটে থেকেই উঠে এসেছেন। ক্লদিও এচেভেরিও তাই দেখতে শুরু করেছেন তাদের মতো বিশ্ব জয় করার স্বপ্ন।
এচেভেরি প্রথম বিশ্ব ফুটবলে নজরে এসেছিলেন এক বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টের সুবাদে। ইতালিতে অনুষ্ঠিত সেই টুর্নামেন্টে ৬ ম্যাচে ৯ গোল করে শিরোনাম হয়েছিলেন তিনি। তবে দল সেবার শেষ করে তৃতীয় হয়ে। তাতে খুব একটা সন্তুষ্ট ছিলেন না ক্ষুদে এচেভেরি। জানিয়েছিলেন, দলের এমন অবস্থায় ব্যক্তিগত পারফর্মে খুশি নন তিনি। এতে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন নিজের মানসিকতার পরিচয়।
২০১৬ থেকে ২০২২। রিভারপ্লেট একাডেমিতে খেলেছেন মোটে ৫ বছর। দুর্দান্ত ক্ষুরধার ফুটবলের সুবাদে ২০২২ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে রিভার প্লেটের রিজার্ভ দলের হয়ে অভিষেক ঘটে তার। প্রথম ম্যাচেই গোল করে আরো একবার আলোচনায় আসেন তিনি। রিজার্ভ টিমে ভালো খেলার সুবাদেই কিনা সেবছরই মূল দলের হয়ে অভিষেক হয় তার।
এখন পর্যন্ত রিভার প্লেটের হয়ে মাত্র ৪ ম্যাচ খেললেও নিজের জাত চেনাতে এটুকুই যেন যথেষ্ট এচেভেরির জন্য। ওয়ান ভার্সেস ওয়ানে পারফেক্ট ড্রিবলিং তার মূল অস্ত্র। আর তার চোখে তার গতি তাকে অন্য সবার থেকে এগিয়ে রাখে। ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচে তিন গোলেই ছিল তার ড্রিবলিং আর গতির দক্ষতার প্রমাণ।
একইসঙ্গে শক্তির সমন্বয়ও আছে তার ডান পায়ে। ডিবক্সের বাইরে থেকে জোরালো শটে বিপক্ষের রক্ষণে কাঁপন ধরাতে পারদর্শী এচেভেরি। মেসির সঙ্গে তুলনা তো এখনই শুরু হয়ে গিয়েছে। ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলোর রাডারেও আছেন তিনি। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে যা করেছেন, তাতে প্রত্যাশা নিশ্চিতভাবেই আরও বেশি বেড়ে যাবে এই তরুণের উপর। তবে তিনি এখনো নিজের পাঁ মাটিতে রাখতে চান। তিনি জানেন নতুন নামের সার্থকতা প্রমাণ করতে এখনো তাকে পাড়ি দিতে হবে অনেক লম্বা পথ।
মন্তব্য করুন