২০২৬ ফুটবল বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের খেলায় বুধবার (২২ নভেম্বর) মুখোমুখি হয়েছিল ফুটবল বিশ্বের দুই পরাশক্তি ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। রিও ডি জেনিরোর বিখ্যাত মারকানা স্টেডিয়ামে হওয়া ম্যাচটি অবশ্য ফুটবলের চেয়ে অন্য কারণে বেশি শিরোনামে এসেছে। ম্যাচ শুরুর আগে সফরকারী আর্জেন্টিনা দলের সমর্থকদের ওপর পুলিশের হামলায় একসময় ম্যাচটি পণ্ড হওয়ার শঙ্কা থাকলেও পরে তা কিছুটা দেরিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে ম্যাচ হলেও সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনা কেউ ভোলেনি। ফুটবলেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং সম্ভবত খুব বড় ধরনের শাস্তির মুখোমুখি হতে হচ্ছে পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের।
মারাকানায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার কাছে ১-০ ব্যবধানে পরাজয়ের ম্যাচে বিশৃঙ্খলার কারণে ব্রাজিলের কাছ থেকে পয়েন্ট কেড়ে নেওয়া হতে পারে এবং ব্রাজিলেকে কয়েকটি ম্যাচ দর্শকবিহীন মাঠেও খেলতে হতে পারে।
ম্যাচের আগে ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার দর্শকদের মধ্যকার হাতাহাতি বন্ধ করার জন্য অবশ্য দুপক্ষেরই কিছু খেলোয়াড় আগ্রাসী ভক্তদের শান্ত করার চেষ্টা করার জন্য স্ট্যান্ডের কাছে গিয়েছিলেন, এর মধ্যে আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ পলিশের হাত থেকে বাটন (এক ধরনের লাঠি) নেওয়ার চেষ্টা করেন যাতে দর্শকদের আঘাত করতে না পারে। মার্টিনেজকে অবশ্য তার সতীর্থরা সংযত করে রাখেন।
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের এই ম্যাচের বিশৃঙ্খলার জন্য সম্ভবত ব্রাজিলিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন শাস্তির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। কারণ ফিফার কর্তৃক প্রদত্ত শৃঙ্খলাবিধির ১৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বলা হয়েছে যে 'স্বাগতিক ক্লাব এবং অ্যাসোসিয়েশনগুলো ম্যাচের আগে, সময় এবং পরে শৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তার জন্য দায়ী। আর অনুচ্ছেদটিতে আরও মাঠের ভেতরের যে কোনো ঘটনার জন্য স্বাগতিক দলকে দায়ী করা হবেও বলে বলা হয়।
ব্রাজিলিয়ান অন্যতম জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম গ্লোবো রিপোর্ট করেছে যে ফিফা বুধবারের ঘটনায় তার নিজস্ব তদন্ত শুরু করতে প্রস্তুত।
যদিও ফিফার ডিসিপ্লিনারি কোড নির্দিষ্ট শাস্তি প্রদান করে না তবে গ্লোবোর দাবি যে শাস্তির মধ্যে জরিমানা, ভক্ত ছাড়া এক বা একাধিক ম্যাচ খেলা, নিরপেক্ষ মাঠে খেলার বাধ্যবাধকতা বা এমনকি পয়েন্ট কাটাও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
যদি পয়েন্ট কর্তন পর্যন্ত এ ঘটনা গড়ায় তবে তা ব্রাজিলের জন্য একটি বড় আঘাত হবে। পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের এবারের বিশ্বকাপে যাচ্ছেতাই অবস্থা দশ দলের মধ্যে ছয়ে থাকা ভিনিসিয়ুসে-নেইমাররা স্বয়ংক্রিয় ভাবে বিশ্বকাপে জায়গা পাবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
দক্ষিণ আমেরিকান বিভাগ থেকে মাত্র ছয়টি দল স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিশ্বকাপের জন্য যোগ্যতা অর্জন করবে আর সপ্তম স্থানে থাকা দলটিকে প্লে-অফে খেলে আসতে হবে।
সংঘর্ষের পর ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্টে, ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো মারাকানায় ঘটে যাওয়া সহিংসতার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন ‘ফুটবলে, মাঠে বা মাঠের বাইরে সহিংসতার কোনও জায়গা নেই। মারাকানা স্টেডিয়ামে ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার মধ্যে ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচের সময় দেখা এই ধরনের ঘটনা, আমাদের খেলাধুলা বা সমাজে কোনো স্থান নেই।’
‘ব্যতিক্রম ব্যতীত, সমস্ত খেলোয়াড়, ভক্ত, কর্মী এবং কর্মকর্তাদের ফুটবল খেলা এবং উপভোগ করার জন্য নিরাপদ এবং সুরক্ষিত থাকতে হবে এবং আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যাতে এটি সর্বস্তরে সম্মান করা হয়।’
তবে মারাকানায় প্রতিদ্বন্দ্বী সমর্থকদের সাথে জড়িত ঘটনাটি কীভাবে শুরু হয়েছিল তা এখনো স্পষ্ট নয়।
সমর্থকদের স্ট্যান্ড থেকে আসন ছিঁড়ে প্রতিদ্বন্দ্বী সমর্থকদের দিকে ছুড়ে মারতে দেখা যায়। অবস্থা খারাপের দিকে গেলে রিও ডি জেনিরো পুলিশ দ্রুত হস্তক্ষেপ করে এবং সংঘর্ষরত সমর্থকদের থামাতে লাঠিচার্জ করে। এই ঘটনার প্রতিবাদে আর্জেন্টিনার অধিনায়ক লিওনেল মেসি খেলার শুরু বিলম্বিত করে আর্জেন্টিনা খেলোয়াড়দের নিয়ে ড্রেসিংরুমে ফেরত যান।
বর্তমান বিশ্বকাপ বিজয়ীরা শুরুতে মাঠে ফিরতে অস্বীকৃতি জানালেও শেষ পর্যন্ত তা করেছিল এবং তাদের চির প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে ১-০ গোলে জয় তুলে নিতে সক্ষম হয়েছিল।
মন্তব্য করুন