আজকের ম্যাচের জয়ী দল বিশ্বকাপ বাছাই খেলবে এরকম সমীকরণ নিয়েই ঢাকায় বসুন্ধরায় কিংস অ্যারেনায় মাঠে নামে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপ ফুটবল দল। হারলে বলতে গেলে আর্ন্তজাতিক ফুটবল থেকে নির্বাসনে যেতে হতো লাল-সবুজদের এরকম কঠিন বাস্তবতার কারণে বাংলাদেশের জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়ার চোখে এটি ছিল ম্যাচ অব দি ইয়ার। এই বাছাই পর্বের প্লে অফের দ্বিতীয় লেগে দশ জন নিয়েও বাংলাদেশ মালদ্বীপকে ২-১ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের দ্বিতীয় ধাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে।
বাংলাদেশের পক্ষে একটি করে গোল করেন রাকিব হোসেন ও ফয়সাল ফাহিম। মালদ্বীপের পক্ষে গোল করেন ইব্রাহিম আইসাম। ম্যাচের ৬০ মিনিটে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে বাংলাদেশকে দশ জনের দলে পরিণত করেন সোহেল রানা। তবে দশ জন নিয়েও দারুণ এক জয় উপহার দিয়েছে লাল-সবুজেরা।
মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) ঢাকার কিংস অ্যারেনায় ম্যাচের শুরুটা ছিল মালদ্বীপের আক্রমণ দিয়ে। দুই মিনিটের মধ্যেই দু’টি কর্নার আদায় করে মালদ্বীপ। প্রথম কয়েক মিনিট মালদ্বীপ প্রাধান্য বিস্তার করলেও ১১ মিনিটে ম্যাচে লিড নেয় বাংলাদেশ। ম্যাচের দশম মিনিটে সাদ উদ্দিনের বাড়ানো বলে ফাহিম দৌড়ে গিয়ে বক্সের শেষ প্রান্তে বল রিসিভ করেন। বল রিসিভ করেই রাকিবের উদ্দেশ্যে দ্রুতগতির কাটব্যাক করেন। ফরোয়ার্ড রাকিব হোসেন দুর্দান্ত প্লেসিংয়ে গোল করলে কিংস অ্যারেনা উল্লাসে ফেটে পড়ে।
প্রথম গোলের মিনিট তিনেক পরেই বাংলাদেশ আরেকটি সুযোগ পেয়েছিল। ডান প্রান্ত থেকে অধিনায়ক জামাল ভূইয়া বক্সের সামনে বল ফেলেন। সতীর্থ ফরোয়ার্ড বলটি রিসিভ করলেও পোস্টে রাখতে পারেননি। অধিনায়ক জামাল ভূইয়া আজকের ম্যাচের প্রথমার্ধে দারুণ খেলেছেন। বিশেষ করে তার বাড়ানো দুই বলে গোলের দারুণ সুযোগ তৈরি হয়েছিল।
গোলদাতা রাকিব হোসেন গোলরক্ষককে একবার ১:১ এ পেয়েও বল পোস্টে রাখতে পারেননি। বাংলাদেশ ব্যবধান দ্বিগুণ করতে ব্যর্থ হলেও মালদ্বীপ সমতা আনতে ভুল করেনি। ৩৬ মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে হাজমার কর্ণার ফাহিম হেডে ক্লিয়ার করতে পারেননি। বল আইসাম ইব্রাহিমের মাথায় পড়লে ঠান্ডা মাথায় বল জালে পাঠান। কিংস অ্যারেনার গ্যালারী নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে।
গোল হজমের পরও বাংলাদেশ দমে যায়নি। প্রথমার্ধের বাকি সময় গোল করার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে। যদিও ফিনিশিং ব্যর্থতায় গোল সংখ্যা আর বাড়েনি।
দ্বিতীয়ার্ধের দ্বিতীয় মিনিটে ম্যাচে আবারও লীড নিল বাংলাদেশ। প্রথম লেগে কয়েকটি সুযোগ মিস করা ফয়সাল আহমেদ ফাহিম এবার দ্বিতীয় লেগে গোলের দেখা পেয়েছেন৷ ৪৬ মিনিটে সংঘবদ্ধ এক আক্রমণে বাংলাদেশ গোল পায়। সাদ উদ্দিনের কোনাকুনি শট মালদ্বীপের গোলরক্ষক আংশিক সেভ করেন। সোহেল রানা ফিরতি বলে ফয়সাল আহমেদ ফাহিমকে বল বাড়ান। ফাহিম বল জালে পাঠাতে ভুল করেননি।
ম্যাচের ৫৯ মিনিটে বাংলাদেশ দশ জনের দলে পরিণত হয়। সোহেল রানা দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন। প্রথমার্ধে সোহেল রানা একটি হলুদ কার্ড দেখেন। সতর্ক না হয়ে উল্টো দ্বিতীয়ার্ধেও অযথা ফাউল করেন। দ্বিতীয়ার্ধের ১৩তম মিনিটে বাহরাইনের রেফারি আম্মার আবার হলুদ কার্ড দেখিয়ে লাল কার্ড প্রদর্শন করেন।
লাল কার্ড নিয়ে দশ জনের দলে পরিণত হওয়ার পরেও দমে যায়নি লাল-সবুজেরা উল্টো বাংলাদেশ সমানতালে আক্রমণ করে খেলেছে। জমাট রক্ষণে বাংলাদেশ আটকেও রাখে মালদ্বীপকে।
কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা দশ জন হওয়ার পর খেলোয়াড় রদবদল করেন। অধিনায়ক জামাল ভূইয়ার পরিবর্তে মজিবর রহমান জনিকে নামান। ৮০ মিনিটের দিকে অ্যাটাকার ফাহিমের পরিবর্তে মুরাদ হাসানকে খেলান। ছয় মিনিট ইনজুরি সময়ে মালদ্বীপ বাংলাদেশকে কাপন ধরালেও গোলরক্ষক মিতুল ও ডিফেন্ডারদের দৃঢতায় বাংলাদেশ গোল হজম করেনি।
ম্যাচের অন্তিম মূহূর্তে মালদ্বীপও দশ জনের দলে পরিণত হয়। বক্সের সামনে বাংলাদেশের ফরোয়ার্ডকে বাজেভাবে ফাউল করলে রেফারি মালদ্বীপের ফুটবলারকে সরাসরি লাল কার্ড দেখান। ফলে দশজন নিয়েও র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা মালদ্বীপকে হারিয়ে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠল হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার শিষ্যরা।
মন্তব্য করুন