স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:০৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

যেভাবে এলো চ্যাম্পিয়নস লিগ

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ট্রফি । ছবি : সংগ্রহীত
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ট্রফি । ছবি : সংগ্রহীত

ক্লাব ফুটবলে সেরাদের সেরার প্রতিযোগিতা বলা হয়ে থাকে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগকে। ইউরোপের সেরা ক্লাবগুলোর এই মর্যাদাকর প্রতিযোগিতা দেখতে মুখিয়ে থাকেন ফুটবল ভক্তরা। সেরা ক্লাবগুলোও নিজেদের ট্রফি ক্যাবিনেটকেও অপূর্ণ ভাবে যদি তাদের এই ট্রফিটি না থাকে। তবে জানেন কি কীভাবে এলো ক্লাব ফুটবলের মর্যাদাকর এই প্রতিযোগিতা?

ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে এই মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগ। ইউরোপ সেরা হওয়ার লড়াইয়ে নেমেছে ৩২ ক্লাব। আজ রাতেই এই মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগের দ্বিতীয় সপ্তাহের ম্যাচে মাঠে নামছে আসরের সর্বোচ্চ ট্রফিধারী দল রিয়াল মাদ্রিদ। প্রতিপক্ষ ইতালি চ্যাম্পিয়ন নাপোলি। আশ্চর্যজনকভাবে চ্যাম্পিয়নস লিগ শুরুর ইতিহাসও জড়িয়ে আছে এই দুই দলের মধ্যকার ম্যাচের সঙ্গে।

বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় নাপোলি আতিথেয়তা দেবে ভিনিসিয়ুস-বেলিংহামদের। তাদের এই ম্যাচের আগে অবধারিতভাবে চলে আসে ৩৬ বছর আগের এই দুই দলের মধ্যকার লড়াইয়ের কথা। বর্তমান চ্যাম্পিয়নস লিগের আগমণ ৩৬ বছর আগে নাপোলির মাঠে এই দুই দলের ম্যাচ থেকেই।

রিয়াল মাদ্রিদের সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ উয়েফার কট্টোর বিরোধী বলে পরিচিত। তবে পেরেজের পূর্বসূরীদের মধ্যে একজন, র‌্যামন মেন্ডোজাও উয়েফার ভক্ত ছিলেন না। ১৯৮৭ সালের তৎকালীল ইউরোপিয়ান কাপে নাপোলির বিপক্ষে মাদ্রিদের প্রথম রাউন্ডের ম্যাচে বার্নাব্যুতে সমর্থকদের অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞার ‘পাগল সিদ্ধান্তের’ জন্য গভর্নিং বডির সমালোচনা করেন। মাদ্রিদের সমর্থকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসে কারণ এর আগের সিজনের সেমিফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখ মিডফিল্ডার লোথার ম্যাথাউসের চোয়ালে মাদ্রিদ কিংবদন্তি জুনিতো লাথি মারেন, যে কারণে ইউরোপিয়ান আসর থেকে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয় এই ফরোয়ার্ডকে।

মাদ্রিদের সঙ্গে নাপোলির ওই ম্যাচে অবশ্য খেলা কম রেসলিং বেশি হয়েছে। ঘুষি থেকে শুরু করে অন্যান্য জিনিজপত্রও ছোড়া হয়েছে; সঙ্গে গালাগালি তো ছিলই। ম্যাচ শেষে নাপোলি স্ট্রাইকার সালভাতোর বাগনি অভিযোগ করেন, মাদ্রিদের খেলোয়াড়রা তাকে এবং তার সতীর্থদের মাফিওসি (মাফিয়া) বলে ডাকেন। সফরকারীদের ব্যাকআপ গোলকিপার লুসিয়ানো কাস্তেলিনি ম্যাচ শেষে মেজাজ হারিয়ে মাদ্রিদের কোচ লিও বেনহাকারের দিকে একটি আইসপ্যাক ছুড়ে মারেন এবং সেটি গিয়ে একজন ফটোগ্রাফারকে আঘাত করে। মাদ্রিদ ২-০ ব্যবধানে জয়ের পর ম্যাচটি ‘লা পার্টিতা দেগলি ইনসাল্টি’ বা গালাগালির ম্যাচ বলে পরিচিতি পায়।

বলে রাখা ভালো সেসময় নাপোলিতে খেলতেন ফুটবলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ডিয়েগো ম্যারাডোনা।ম্যারাডোনা তার নাপোলি সতীর্থদের ম্যাচ শেষে বলেন ‘আমরা তাদের জীবিত খেয়ে ফেলব।’ বার্নাব্যুর ম্যাচের দুই সপ্তাহ পরে নাপোলিতে বর্তমান ম্যারাডোনা স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয় দুই দল । অবশ্য ম্যারাডোনাকে পাত্তাই দেয়নি স্প্যানিশ মিডিয়া। বার্নাব্যুতে তার খারাপ পারফরম্যান্সের কারণ হিসেবে স্প্যানিশ প্রেস দাবি করে ম্যারাডোনার মুটিয়ে যাওয়াকে।

বাগনিও সেই পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলেন। পরের রাতে মাঠভর্তি দর্শকের সামনে নাপোলি সম্পূর্ণ চেষ্টা করে ফেরত আসার কিন্তু তাদের আশা পূরণ হয়নি। ১-১ গোলে ড্রয়ে দুই লেগ মিলে নাপোলির বিদায় নিশ্চিত হয়।

এই ম্যাচের দর্শকদের মধ্যে ছিলেন এসি মিলানের মালিক সিলভিও বার্লুসকোনি। তিনি অবশ্য ম্যাচের চারপাশে উত্তেজনার ভাগ হতে পারেননি। ইউরোপ সেরার প্রতিযোগিতার প্রথম রাউন্ডের আগে এমন দুটি ক্লাব মিলিত হতে পারে, তা দেখে তিনি হতবাক ছিলেন।

এ ধরনের একটি হাইভোল্টেজ ম্যাচ এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাওয়ায় এবং নাপোলি বা রিয়ালের মতো যেকোনো একটি দলের বিদায় আসরের উত্তেজনা শেষ করে দেবে বলে বিশ্বাস ছিল বার্লুসকোনির। তিনি স্বাভাবিকভাবেই ভয় পেয়েছিলেন তার নিজের ক্লাবের ক্ষেত্রেও এমনটা ঘটতে পারে। তবে এ ছাড়া তার আরও বিস্তৃত উদ্বেগও ছিল।

এ ম্যাচ থেকেই তিনি একটি ইউরোপীয় সুপার লিগের জন্য তার পরিকল্পনা চালু করেন। যদিও তখন তার এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। তবে তার ধারণা এবং ইউরোপে বড় ক্লাবগুলোকে নিয়ে উয়েফা থেকে বের হয়ে যাওয়ার হুমকি সরাসরি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ তৈরির দিকে পরিচালিত করেছিল। শুধু তাই নয়, আজকের সুপার-ক্লাব-আধিপত্য যুগের শুরুও তার দ্বারা।

বার্লুসকোনি ইউরোপের সেরা দলগুলোর এত তাড়াতাড়ি দেখা হওয়ার ‍পেছনে কোনো যুক্তি দেখছিলেন না। একটি খারাপ রাতের কারণে সেরা ক্লাবগুলোর প্রথম রাউন্ডে বের হয়ে যাওয়ার পেছনে উয়েফার নৈরাজ্য দায়ী বলে বিশ্বাস ছিল তার। মাদ্রিদ-মিলানের মতো ক্লাবগুলোর প্রথম রাউন্ডে আউট হওয়ায় ফুটবলের ক্ষতি বলেই বিশ্বাস ছিল তার।

এই বিশ্বাস থেকেই রিয়াল মাদ্রিদের তৎকালীন সভাপতি র‌্যামন মেন্ডোজার সঙ্গে মিলে ১৮ দলের একটি সুপার লিগের পরিকল্পনা প্রকাশ করেন বার্লুসকোনি। তার এ ঘোষণায় উয়েফা পড়ে যায় বিপাকে; কারণ মাদ্রিদ ও এসি মিলানের মতো দল না থাকলে আসরের আকর্ষণ অনেকটাই কমে যাবে। তাই বড় দলগুলোর বের হয়ে যাওয়ার চাপ থেকেই ১৯৯১ সালে উয়েফা তৎকালীন ইউরোপিয়ান কাপে বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসে। প্রথমেই নকআউট পর্বের জায়গায় আসে গ্রুপ পর্বের খেলা। আর এতেই বড় দলগুলোর পরবর্তী রাউন্ডে যাওয়া নিশ্চিত হয়। আর দর্শকরা পান উয়েফা কাপ থেকে চ্যাম্পিয়নস লিগ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ময়মনসিংহে অটোরিকশা-ট্রাকের সংঘর্ষে নিহত ৩

প্রকৃতিতে পসরা সাজিয়েছে চোখজুড়ানো বরুণ ফুল

সকালের শুরুতেই তীব্র যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী

টাঙ্গাইলে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২

জবি ঊষার নতুন নেতৃত্বে নাইম-লিশা

ওআইসির সদস্যপদ ফিরে পেল সিরিয়া

ইতিহাস গড়তে ডালাস যাবে ব্যান্ড নগর বাউল

বনানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় ২ পোশাক শ্রমিক নিহত

মাগুরার সেই শিশুটির সবশেষ অবস্থা

কানাডা কাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিল?

১০

জামা না কেনায় মার্কেটে দুই তরুণীকে ‘জিম্মি’, সাংবাদিককে হেনস্তা

১১

আজ সারা দেশে ছাত্রদলের মানববন্ধন কর্মসূচি

১২

টিভিতে আজকের খেলা

১৩

সাবেক এমপির বাড়ি দখল করা সেই নারী সমন্বয়ক গ্রেপ্তার

১৪

বাবা হারালেন অভিনেত্রী রুনা খান

১৫

বায়ুদূষণে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ঢাকা

১৬

ঢাকাসহ ২ বিভাগে বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস 

১৭

সাতসকালেই থানায় হাজির স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

১৮

১০ মার্চ : ইতিহাসের এই দিনে যা ঘটেছিল

১৯

ছাত্রদল নেতার রগ কাটায় বিএনপির আরেক নেতা বহিষ্কার

২০
X