ফুটবলারদের জন্য সবচেয়ে মর্যাদাকর অ্যাওয়ার্ড হলো ব্যালন ডি’অর। সর্বশেষ ২০ বছর যদি ফ্রান্স ফুটবল ম্যাগাজিনের দেয়া এই পুরস্কারের তালিকার দিকে লক্ষ্য করা হয় তবে একটি পরিচিত নাম দেখা যাবে সেটি হলো ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো।
২০০৪ সাল থেকে প্রতিবছর ব্যালন ডি'অরের পুরস্কারের জন্য মনোনিত ৩০ জনের তালিকায় ছিলেন রোনালদো। পাঁচবার জিতেছেন এই পুরষ্কার। এবারই প্রথম তালিকায় নেই তিনি।
আগামী ৩০ অক্টোবর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ব্যালন ডি’অর জয়ীর নাম নাম ঘোষণা করা হবে। বুধবার রাতে ব্যালন ডি'অরের জন্য মনোনীত ফুটবলারদের নাম প্রকাশ করেছে ফ্রান্স ফুটবল।
পুরুষ বিভাগে বর্ষসেরা নির্বাচনের জন্য ৩০ জন ফুটবলারের সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। সেই তালিকায় নেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। একই সাথে সময়ের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ব্রাজিলের নেইমার জুনিয়রের নামও নেই এবারের তালিকায়।
তবে এই বছরের ব্যালন ডি’রের লড়াইয়ে প্রত্যাশিতভাবে আছেন লিওনেল মেসি ও আর্লিং হলান্ড। বিশেষজ্ঞদের মতে মেসি ও হলান্ড যেকোন একজনের হাতেই উঠছে এইবারের বর্ষসেরার খেতাব। বর্ষসেরা ফুটবলারের লড়াইয়ে তাদের সঙ্গে আছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে, রবার্ট লেভানডস্কি, ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের মতো তারকারাও। গতবছরের বিজয়ী করিম বেনজেমাও আছেন এবারের তালিকায়।
পুরস্কারটি রেকর্ড সাতবার জেতা মেসি গত বছর ৩০ জনের তালিকায় ছিলেন না। ২০০৫ সালের পর তার ক্যারিয়ারে প্রথমবার মতো তালিকায় ছিলেন না। এবার আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতানো মেসিই পুরস্কারটি জেতার অন্যতম বড় দাবিদার।
গত মৌসুমটা জাতীয় দল ও ক্লাবের হয়ে সাফল্যমণ্ডিত ছিল মেসির। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবশ্যই কাতার বিশ্বকাপ জয়। ৩৬ বছরের খরা কাটিয়ে আর্জেন্টিনাকে ফের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করানোর ক্ষেত্রে আসর জুড়ে দুর্দান্ত খেলেন সাবেক বার্সেলোনা তারকা। ফ্রান্সের বিপক্ষে ফাইনালে জোড়া গোলসহ করেন মোট ৭ গোল। জেতেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের খেতাব ‘গোল্ডেন বল।’ গত মার্চে তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে ছেলেদের আন্তর্জাতিক ফুটবলে ১০০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেন মেসি।
পিএসজির জার্সিতে নিজের সেরা ছন্দে না থাকলেও টানা দ্বিতীয়বারের মতো লিগ ওয়ানের শিরোপা জেতেন মেসি। প্যারিসের দলটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বিদায় নেয় শেষ ষোলো থেকে। ইউরোপ সেরার মঞ্চে মেসি ৭ ম্যাচে চারটি গোল করার পাশাপাশি সতীর্থদের দিয়ে করান চারটি। পিএসজি ছেড়ে এই মৌসুমে তিনি যোগ দেন মেজর সকার লিগের দল ইন্টার মায়ামিতে।
হলান্ডের জন্য গত মৌসুমটা ছিল স্বপ্নময়। ম্যানচেস্টার সিটির ‘ট্রেবল’ জয়ে তার ছিল বড় অবদান। গত গ্রীষ্মে সিটিতে যোগ দিয়ে ইংলিশ ফুটবলে ঝড় তোলেন নরওয়ের এই স্ট্রাইকার। লিগে ৩৮ ম্যাচে জালের দেখা পান ৩৬ বার। ভেঙে দেন ৩৮ ম্যাচের লিগে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড। সতীর্থদের দিয়ে ৮টি গোলও করান তিনি।
সিটির চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের পথচলায়ও উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল হলান্ডের। ১১ ম্যাচে গোল করেন ১২টি। এসবের স্বীকৃতি হিসেবে এ বছর এরই মধ্যে উয়েফা বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার জিতেছেন এই তরুণ।
আগামী ৩০ অক্টোবর প্যারিসে জমকালো আয়োজনে ঘোষণা করা হবে এবারের বিজয়ীর নাম।
ব্যালন ডি’অর দেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়মে পরিবর্তন আনা হয় গত বছর। আগে ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে পুরো বছরের পারফরম্যান্স বিবেচনায় নেওয়া হলেও এখন বিবেচনায় ধরা হয় ইউরোপিয়ান ফুটবলের একটি মৌসুমকে (আগস্ট থেকে জুলাই)। ১৯৫৬ সাল থেকে এই পুরস্কারটি দেওয়া হচ্ছে।
৩০ জনের তালিকা:
হ্যারি কেইন (টটেনহ্যাম হটস্পার/বায়ার্ন মিউনিখ), ভিক্টর ওসিমহেন (নাপোলি), লুকা মদ্রিচ (রিয়াল মাদ্রিদ), কিম মিন-জায়ে (নাপোলি/বায়ার্ন মিউনিখ), কিলিয়ান এমবাপ্পে (পিএসজি), রবার্ট লেভানডস্কি (বার্সেলোনা), লাউতারো মার্তিনেজ (ইন্টার মিলান), লিওনেল মেসি (পিএসজি/ইন্টার মায়ামি), অ্যান্তোনিও গ্রিজমান (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), রদ্রি (ম্যানচেস্টার সিটি), ভিনিসিয়ুস জুনিয়র (রিয়াল মাদ্রিদ), ইয়াসিন বোনো (সেভিয়া/আল হিলাল), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), ইল্কাই গুন্দোয়ান (ম্যানচেস্টার সিটি/বার্সেলোনা), মার্টিন ওডেগার্ড (আর্সেনাল), আর্লিং হলান্ড (ম্যানচেস্টার সিটি), নিকোলো বারেল্লা (ইন্টার মিলান), রুবেন দিয়াস (ম্যানচেস্টার সিটি), এমিলিয়ানো মার্তিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), খাভিচা কাভারাৎসখেলিয়া (নাপোলি), বার্নাডো সিলভা (ম্যানচেস্টার সিটি), কেভিন ডে ব্রুইনে (ম্যানচেস্টার সিটি), রন্দাল কোলো মুয়ানি (আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্ট/পিএসজি), বুকায়ো সাকা (আর্সেনাল), জুড বেলিংহ্যাম (বরুশিয়া ডর্টমুন্ড/রিয়াল মাদ্রিদ), মোহামেদ সালাহ (লিভারপুল), জামাল মুসিয়ালা (বায়ার্ন মিউনিখ), করিম বেনজেমা (রিয়াল মাদ্রিদ/আল ইত্তিহাদ), আন্দ্রে ওনানা (ইন্টার মিলান/ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), ইয়োস্কো গাভারদিওল (লাইপজিগ/ম্যানচেস্টার সিটি)।
মন্তব্য করুন