সিলেটের ফুটবল ভক্তদের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে নিজের বাড়িতে এসেছেন হামজা দেওয়ান চৌধুরী। বাংলাদেশের জার্সিতে খেলার জন্য সোমবার পৌনে ১২টার দিকে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পা রাখেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ খেলা এই ফুটবলার। সোমবার (১৭ মার্চ) বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ২টায় বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে ম্যানচেস্টার থেকে সিলেটের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন হামজা।
সকাল ১০টা থেকেই ফুটবলার হামজা চৌধুরীকে বরণ করতে সিলেটের ভক্তরা ফুল-ব্যানার-ঢাক ঢোল নিয়ে হাজির হন বিমানবন্দরে। এ সময় হাতে হামজার ছবি আঁকা ব্যানার ফ্যাস্টুন আর বাধ্যযন্ত্র বাজিয়ে স্লোগানে-স্লোগানে মুখুরিত হয় বিমানবন্দর এলাকা। পিতৃভূমি সিলেটে পৌঁছে ভক্তদের এই বিপুল ভালোবাসায় সিক্ত হলেন হামজা চৌধুরী।
ভক্তদের এই ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয় নিরাপত্তাবাহিনীতে। সাংবাদকর্মীদের ভিড়ও ছিল উপচে পড়া। দুপুর ১ টার দিকে বিমানবন্দরের ভিআইপি গেইট দিয়ে যখন হামজা চৌধুরী বাইরে বেরিয়ে আসেন তখন রীতিমত ধাক্কাধাক্কি লেগে যায়। ফলে সাংবাধিকদের সাথে তেমন কথা বলাই হয়ে ওঠেনি এই ফুটবল তারকার। কেবল শুভেচ্ছা বিনিময় করেই আবার ঢুকে পড়েন ভিআইপ টার্মিনালে।
হামজাকে বরণ করতে সিলেট নগরীর আম্বরখানা থেকে আসা যুবক আহমেদ হোসেন বলেন, সিলেটের হামজা ইংলিশ লিগ মাতানো ফুটবলার। তিনি এখন বাংলাদেশের হয়ে খেলবেন এটা আমাদের জন্য আনন্দের। তিনি আমাদের সিলেটি। এটি আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। তাই তাকে দেখতে এসেছি। সকাল থেকে বিমানবন্দরে রয়েছি।
সিলেটের ফুটবলার রাফি চৌধুরী বলেন, আমি হামজা চৌধুরীর ভক্ত। তিনি আমাদের সিলেটি। আমার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল তাকে সরাসরি দেখব। আজ তাকে দেখার জন্য এয়ারপোর্ট এসেছি। হামজা চৌধুরী আমাদের সম্পদ।
ফুটবলার হামজা কে পিতার সঙ্গে দেখতে আসা কিশোর রাফিদ বলেন, হামজা চৌধুরী বাংলাদেশের হয়ে খেলবে এটা গৌরবের বিষয়। আমি হাজমা চৌধুরীকে দেখতে এয়ারপোর্ট এসেছি। তার সঙ্গে দেখা হলে আমি বলব আমি তার বিগ ফ্যান।
হামজা ও তার পরিবারকে বরণ করে নিতে সিলেট এয়ারপোর্টে উপস্থিত ছিলেন বাফুফের নির্বাহী সদস্য সাখাওয়াত হোসেন ভুইয়া শাহীন, কামরুল ইসলাম হিল্টন, গোলাম গাউস, ইকবাল হোসেন, সত্যজিৎ দাশ রুপু, ইমতিয়াজ হামিদ সবুজ ও মন্জুরুল করিম। তাদের সাথে রয়েছেন হামজার বাবা মোরশেদ দেওয়ান চৌধুরী ও সিলেটের ক্রীড়াপ্রেমীরা
হামজার বাবা মোরশেদ দেওয়ান চৌধুরী বলেন, সিলেট বিমানবন্দর থেকে সরাসরি হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট গ্রামে চলে যাবেন হামজা। সেখানে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাবেন তিনি। তার আগমনে হবিগঞ্জে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। আগামীকাল ঢাকায় আসতে পারেন হামজা। এরপর যোগ দেবেন জাতীয় দলের ক্যাম্পে। ২৫ মার্চ ভারতের বিপক্ষে অভিষেক হবে বর্তমানে শেফিল্ড ইউনাইটেডে খেলা এই মিডফিল্ডারের।
হামজা চৌধুরী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক। তবে এখন তিনি বাংলাদেশেরও নাগরিক। তাকে নাগরিকত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
হামজা চৌধুরী বলেন, ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে ভারতকে হারাতে পারবো আমরা। দেশে ফিরে আমি আনন্দিত। ভালো লাগছে, আমি খুব রোমাঞ্চিত। আমার হৃদয় আনন্দে পরিপূর্ণ।
হামজা চৌধুরীর বাবা মোরশেদ দেওয়ান চৌধুরী বলেন, ‘মাতৃভূমির প্রতি অসামান্য টানের কারণে সে আসছে। শেকড় যাতে ভুল না যায় সে কারণেই তাকে আমি একে এখানে নিয়ে এসেছি। আমি তাকে জোর করিনি। সে নিজের ইচ্ছাতে এসেছে।’
দেশবাসী যে প্রত্যাশা করছে হামজাকে নিয়ে হামজা তা পূরণ করতে পারবেন এমন আশা ব্যক্ত করে হামজার বাবা বলেন, আজকের দিনটা আমার জন্য আবেগের, আনন্দের। অনেক দিন ধরে অপেক্ষা করছেন এই দিনটির জন্য। ছেলে বাংলাদেশ জাতীয় দলের জার্সিতে আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলবেন, একজন বাবা হিসেবে এর চেয়ে বড় গর্বের কিছু নেই তার জন্য।
তিনি জানান, হামজা আজ নিজ বাড়িতে থাকবে। পরদিন ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন।
হামজার চাচা দেওয়ান গোলাম মাসুদ বলেন, দেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার কারণে লাল-সবুজের জার্সি গায়ে খেলতে আসছে হামজা চৌধুরী। লন্ডন থেকে সিলেট হয়ে প্রথমে গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট গ্রামের নিজ বাড়িতে আসবেন হামজা। আমাদের গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে আমার ভাতিজা হামজাকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন