নারী ফুটবল সংক্রান্ত জটিলতার বরফ তো গলছেই না, উল্টো তা আরও জমাটবদ্ধ হচ্ছে। এতদিন অপেশাদার আচরণের কারণে কাঠগড়ায় ছিলেন নারী ফুটবলাররা। এবার নিজেকেই কাঠগড়ায় তুললেন পিটার বাটলার। ব্রিটিশ কোচ ঘোষণা দিয়েছেন—কয়েকজন নারী ফুটবলার ক্যাম্পে থাকলে আমি এ দলকে কোচিংই করাব না! তাতে একমুখী ইগোর লড়াই দ্বিমুখী হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পেশাদার যুগে এভাবে কোচ বয়কটের ঘোষণা দিয়ে অনুশীলন বয়কট করা অস্বাভাবিক বটে। অস্বাভাবিক ছিল ‘নির্দিষ্ট ফুটবলার থাকলে আমি কোচিং করাব না’—কোচের এমন ঘোষণাও। সেখানে থামলে তাও মেনে নেওয়া যেত। কোচ প্রশ্ন তুললেন নানা ইস্যুতে। গতকাল বুধবার গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথোপকথনে সমঝোতার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন ৫৮ বছর বয়সী পিটার বাটলার।
‘আমি কয়েকজনের নাম দিয়েছি, সেই ফুটবলাররা থাকলে আমি এ দলকে কোচিং করাব না। নির্দিষ্ট কয়েকজন ফুটবলার অনুশীলনে যাচ্ছে না এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছে। এটা ননসেন্স, এসব বন্ধ হওয়া জরুরি। এটা কোনো ডিপার্টমেন্টাল স্টোর নয়। সমঝোতার কিছু নেই। তারা থাকলে আমি থাকব না। একদম পরিষ্কার’—বলছিলেন পিটার বাটলার।
গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) গঠিত কমিটির সামনে হাজির হয়েছিলেন পিটার বাটলার। এ সম্পর্কে নারী জাতীয় দলের প্রধান কোচ গণমাধ্যমকর্মীদের বলেছেন, ‘সুন্দর পরিবেশ, ভালো কথোপকথন হয়েছে। কমিটির সদস্যরা বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চেয়েছেন, আমি তার ব্যাখ্যা দিয়েছি। আমি বেশ স্পষ্টভাবে বলেছি, যারা বাফুফে ভবনে থেকে ও বাফুফের খাবার খেয়ে ফ্যাক্টবিহীন কথা বলেন, আমি তাদের কোচিং করাব না।’
এ কথায় পরিষ্কার, জাতীয় দলে দায়িত্ব চালিয়ে গেলে কয়েকজন নারী ফুটবলারকে ক্যাম্প ছাড়তে হবে।
ফুটবলে কোচের মর্জিই শেষ কথা। কোচ চাইলে কোনো ফুটবলার দলে থাকবেন, না চাইলে দল ছাড়তে হবে। কিন্তু বাংলাদেশ নারী জাতীয় দলের ক্ষেত্রে আদৌ তেমনটা হচ্ছে! হলে তো কোচকেও আলটিমেটাম দিতে হয় না যে, নির্দিষ্ট কিছু ফুটবলার থাকলে আমি নেই। আসলে দেশের নারী ফুটবল নিয়ে যা হচ্ছে, তা উদ্ভট! ফুটবল বোদ্ধা এবং সাবেকরা জোর দিয়ে বলছেন, বিষয়টা এতদূর আসতে দেওয়া উচিত হয়নি।
গতকাল নানা ইস্যুতে কথা বলা পিটার বাটলার দেশের নারী ফুটবলারদের শৃঙ্ক্ষলা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন, ‘বাংলাদেশ দুবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয় করেছে। এ দলের কয়জন নারী ফুটবলার বিদেশি লিগে খেলেন? বিদেশি লিগে না থাকার কারণ শৃঙ্ক্ষলা। আমি ফুটবল সংস্কৃতি সম্পর্কে জানি। এখানে যেটা চলছে, তা অগ্রহণযোগ্য।’
গতকাল উঠে এসেছিল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ চলাকালে নারী দলকে ঘিরে নেতিবাচক ঘটনার প্রসঙ্গও। যেখানে পিটার বাটলার বলেছিলেন, ‘মেয়েরা কারোর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল, আমি সেটাই বলেছি।’
এদিকে গঠিত তদন্ত কমিটি নারী দল সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলার পর প্রতিবেদন আকারে তা আজই বাফুফে সভাপতি তাবিথ এম আউয়ালের কাছে দেওয়ার কথা। সে প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নারী ফুটবলের চলমান সমস্যার ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নেবে স্থানীয় ফুটবল সংস্থা।
মন্তব্য করুন