ইউরোপিয়ান ফুটবলে সাম্ভাব্য সবকিছু জিতে মার্কিন মুলকে পা রেখেছেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক লিওনেল মেসি। মেজর লিগ সকারের ক্লাব ইন্টার মায়ামির হয়ে শুরু করেছেন ক্যারিয়ারের নতুন অধ্যায়। মায়ামির হয়ে টানা ছয় ম্যাচে নয়টি গোল করেছেন বিশ্বের সেরা এই ফুটবল তারকা। মেসির জাদুর ছোঁয়ায় তলানিতে থাকা ক্লাবটিও পৌছে গেছে লিগস কাপের ফাইনালে।
মায়ামির হয়ে ৬ টি ম্যাচ খেলে ফেললেও এখন পর্যন্ত সংবাদ সম্মেলনে আসেননি এই খুদে জাদুকর। যুক্তরাষ্ট্রে পা রাখার এক মাসের অভিজ্ঞতা নিয়ে বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন মেসি। তাই মেসির প্রথম সংবাদ সম্মেলন কভার করতে সংবাদকর্মীদের ছিল উপচেপড়া ভিড়। সেখানে ফুটবল থেকে তার চাওয়া, ব্যলন ডি’অর, লিগ হিসেবে এমএলএসের (মেজর লিগ সকার) সুযোগ ও সম্ভাবনা, মায়ামিতে নিজের ও পরিবারের মানিয়ে নেওয়াসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বলেন।
এ ছাড়া বৃহস্পতিবার রাতে প্রকাশিত হয়েছে উয়েফার এবারের বর্ষসেরা নির্বাচিত হওয়ার দৌড়ে শীষ তিনে আছেন কোন তিনজন। ইউরোপ ছাড়লেও কেভিন ডি ব্রুইনা এবং আর্লিং হলান্ডের সঙ্গে মেসিও আছেন ব্যক্তিগত এ পুরস্কার অর্জনের দৌড়ে। এদিকে এ পুরস্কার ছাড়াও এবারের ব্যালন ডি’অর জয়ের দৌড়েও খুব ভালোভাবেই আছেন মেসি। গতকাল সংবাদ সম্মেলনেও তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল এ ব্যাপারেও।
ব্যালন ডি’অর নিয়ে মেসির ভাবনা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “আমার মনে হয়ে আমার ক্যারিয়ারের বিভিন্ন সময়ে আমি এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। ব্যালন ডি’অর অবশ্যই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তিগত পর্যায়ে সারাবিশ্বেই এটি সব থেকে আকর্ষণীয় । তবে যারা আমাকে চিনেন তারা জানেন আমি কখনোই ব্যক্তিগত পুরস্কার নিয়ে মাথা ঘামাইনি, দলগত অর্জনই আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”
নিজের ক্যারিয়ার থেকেও সবকিছু পেয়েছেন বলে ধারণা মেসির, “আমি খুব ভাগ্যবান যে আমি ক্যারিয়ারের সবকিছুই পেয়েছি। বিশ্বকাপের অপূর্ণতা হয়তো ছিল কিন্তু আমি ভাগ্যবান যে কাতারে আমি তা পেয়েছি। তাই ব্যালন ডি’অর নিয়ে আমার ভাবনা কম।
বিশ্বজয়ের পর একাধিক সাক্ষাৎকারে মেসি জানিয়েছেন ফুটবল থেকে তার নতুন করে আর কিছু পাওয়ার নেই। গতকালও একই কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন বিশ্বজয়ী এ তারকা। তিনি বলেন, “আমি আসলে এখন উপভোগ করছি। ব্যালন ডি’অর নিয়ে ভাবছি না, এটি যদি পাই তাহলে ভালো না পেলেও ক্ষতি নেই। কেননা আমার যা পাওয়ার ছিল তার সবই আমি পেয়েছি।”
বর্তমানে মায়ামির হয়ে শিরোপা জয়ই তার উদ্দেশ্য জানিয়ে মেসি বলেন, “আমরা মায়ামিতে এসেছি ক্লাবকে ভালো পর্যায়ে নিতে, শিরোপা জিততে এবং ব্যক্তিগত পর্যায়েও আমি শুধু এটা নিয়েই ভাবছি।”
যুক্তরাষ্ট্রের লিগ নিয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের লিগের উন্নতির কথা বলেন, ‘এখানে ফুটবল এগিয়ে যাওয়ার সব সম্ভাবনাই আছে। এই উন্নতি অনেকাংশে লিগের ওপর নির্ভর করছে। এখনই সেই সময়। সামনে এ দেশে দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতাও আছে।’
ঠিক কী কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল সেরা মানে উন্নীত হতে পারে, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন মেসি, ‘এখানকার লিগের বড় লাফ দেওয়ার এবং বড় হয়ে ওঠার এটাই সময়, যেটা অনেক দিন ধরেই তারা চাইছে। সেরা মানের ফুটবল দেখার জন্য সবই আছে এখানে। যার কারণ এই দেশ, এই দেশের কাঠামো, আরও বেশকিছু বিষয়।’
যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব ফুটবলে শীর্ষ প্রতিযোগিতা হচ্ছে এমএলএস (মেজর লিগ সকার)। এখনো এ প্রতিযোগিতায় অভিষেক হয়নি মেসির। তবে গত এক মাসের ছয়টি ভিন্ন দলের বিপক্ষে খেলার অভিজ্ঞতায় মেসির ধারণা, এমএলএস প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে, ‘লিগস কাপে দেখা গেছে ম্যাচগুলো খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হচ্ছে। যেকোনো দল যে কাউকে হারিয়ে দিতে পারে। আমার মনে হচ্ছে, এমএলএসেও ব্যাপারটা একই। এটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক লিগ, যেখানে সবাই জিততে চায়। যেখানে হোম টিম শক্তিশালী, সেখানে অ্যাওয়েতে জেতা কঠিন। আর পুরো বিষয়টা আরও ভালো বুঝতে পারব প্রথম ম্যাচের পর।’
লিগস কাপের ফাইনালে বাংলাদেশ সময় আগামী রোববার সকালে ন্যাশভিল এসসির বিপক্ষে খেলবে ইন্টার মায়ামি। এ ছাড়া এমএলএসে মেসির প্রথম ম্যাচ ২৭ আগস্ট, প্রতিপক্ষ নিউইয়র্ক রেড বুলস। এ মুহূর্তে ২২ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে ইস্টার্ন কনফারেন্সে ১৫ দলের মধ্যে সবার শেষে অবস্থান মায়ামির।
মন্তব্য করুন