লিওনেল মেসি ও আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের জন্য ২০২৫ সাল শুধুমাত্র ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়। এর পাশাপাশি ফিনালিসিমা ছিল তাদের অন্যতম প্রতীক্ষিত চ্যালেঞ্জ, যেখানে তারা ইউরোপের সেরা দলের বিরুদ্ধে লড়াই করত। তবে ব্যস্ত আন্তর্জাতিক সূচির কারণে ম্যাচটি পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
কেন পিছিয়ে যাচ্ছে ফিনালিসিমা?
২০২৪ কোপা আমেরিকা জয়ের ফলে ফিনালিসিমায় খেলার যোগ্যতা অর্জন করে আর্জেন্টিনা। এই ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ হবে ২০২৪ ইউরো জয়ী স্পেন। টুর্নামেন্টটি মূলত ২০২৫ সালে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, তবে ফিফার অত্যন্ত ব্যস্ত আন্তর্জাতিক ক্যালেন্ডারের কারণে ম্যাচটি নির্ধারিত সময়ে আয়োজন করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম লা নাসিওন-এর প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব, নেশন্স লিগ এবং ক্লাব বিশ্বকাপের মতো গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টের কারণে ফিনালিসিমার জন্য কোনো খালি সময় পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে ক্লাব বিশ্বকাপে উভয় দলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় অংশ নেবেন, যা ম্যাচ আয়োজনের সম্ভাবনাকে আরও অনিশ্চিত করে তুলেছে।
এই পরিস্থিতিতে, ফিনালিসিমা ২০২৬ সালের মার্চ পর্যন্ত স্থগিত হতে পারে। তখন বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব শেষ হয়ে যাবে এবং দলগুলো বিশ্বকাপের চূড়ান্ত প্রস্তুতিতে থাকবে, ফলে ম্যাচটি আয়োজনের জন্য এটি আদর্শ সময় হতে পারে।
আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনি এবং স্পেন কোচ লুইস দে লা ফুয়েন্তে ইতোমধ্যে ফাইনালিসিমা নিয়ে তাদের মতামত প্রকাশ করেছেন। স্কালোনি বলেন, ‘আমি জানি না ম্যাচটি আদৌ অনুষ্ঠিত হবে কিনা। স্পেনের জন্য এটি বিশেষভাবে কঠিন, কারণ তাদের বাছাইপর্ব নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। আমি সত্যিই এটিকে বাস্তবসম্মত মনে করি না।’
স্পেন কোচ দে লা ফুয়েন্তে অবশ্য আশাবাদী, ‘আমাদের এখনো ফিনালিসিমা বাকি আছে, যেখানে ইউরো এবং কোপা আমেরিকার চ্যাম্পিয়ন মুখোমুখি হবে। তবে এখনো ম্যাচের নির্দিষ্ট কোনো তারিখ নির্ধারণ হয়নি। এই ম্যাচ আমাদের জন্য খুবই রোমাঞ্চকর হবে,’ তিনি বলেন।
ফিনালিসিমায় আর্জেন্টিনার রেকর্ড
আর্জেন্টিনা ফিনালিসিমার বর্তমান চ্যাম্পিয়ন, ২০২২ সালে তারা তখনকার ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়ন ইতালিকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল। সেই ম্যাচে লিওনেল মেসির অসাধারণ পারফরম্যান্সের সঙ্গে লউতারো মার্টিনেজ, অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া এবং পাওলো দিবালা গোল করেছিলেন।
ফিনালিসিমা নতুন টুর্নামেন্ট হলেও এটি ইউরোপ এবং দক্ষিণ আমেরিকার সেরাদের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী প্রতিযোগিতার আধুনিক সংস্করণ। ১৯৮৫ সালে প্রথমবারের মতো আর্তেমিও ফ্রাঙ্কি কাপ নামে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ফ্রান্স উরুগুয়েকে হারিয়ে শিরোপা জেতে। ১৯৯৩ সালে আর্জেন্টিনা ডেনমার্ককে পরাজিত করে এই ট্রফি জিতেছিল।
পরবর্তীতে, এই টুর্নামেন্ট কনফেডারেশন্স কাপে রূপান্তরিত হয়, যা ২০১৭ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তবে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের সম্প্রসারণের কারণে এটি বন্ধ হয়ে যায়, এবং ২০২২ সালে ফিনালিসিমার মাধ্যমে পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা হয়।
যদিও ২০২৫ সালে ফিনালিসিমার সম্ভাবনা ক্ষীণ, তবে ম্যাচটি ২০২৬ সালে অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। আর্জেন্টিনা এবং স্পেন উভয় দলই এই মর্যাদাপূর্ণ ম্যাচ খেলার জন্য মুখিয়ে আছে। এখন দেখার বিষয়, ফিফা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কী নেয়।
মন্তব্য করুন