গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত সুদানে ফুটবল যেন বেঁচে থাকার এক নতুন অবলম্বন হয়ে উঠেছে। দেশটির জাতীয় ফুটবল দল গৃহযুদ্ধের কারণে দেশের মাটিতে খেলার সুযোগ পাচ্ছে না। তবে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও তারা ফুটবল মাঠে দেশের মানুষের জন্য একটু সুখ নিয়ে আসার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
গৃহযুদ্ধ এবং মানবিক সংকট
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানে সেনাবাহিনী এবং বিদ্রোহী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-এর মধ্যে তীব্র গৃহযুদ্ধ চলছে। এতে ইতোমধ্যেই ১,৫০,০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সূত্র জানিয়েছে, আর জাতিসংঘ বলছে, ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছে।
রাজধানী খার্তুম এবং পাশের শহর ওমদুরমানের ফুটবল মাঠগুলো খেলার পরিবর্তে মৃতদের কবর দেওয়ার জায়গা হয়ে উঠেছে। জাতিসংঘের মতে, এই সংঘাত ‘বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট’ সৃষ্টি করেছে।
ফুটবলের লড়াই
এই সংকটের মাঝেও সুদানের জাতীয় ফুটবল দল দারুণ সাফল্য অর্জন করেছে। তারা ২০২৫ সালে মরক্কোতে অনুষ্ঠিতব্য আফ্রিকা কাপ অব নেশন্স (আফকন)-এর জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছে। এছাড়া ২০২৬ সালের যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো বিশ্বকাপে খেলার জন্যও তাদের গ্রুপে শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে।
দলের অধিনায়ক রমজান আগাব বলেন, ‘এমন কঠিন সময়ে দেশের প্রতিনিধিত্ব করা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। ফুটবল দিয়ে আমরা দেশের মানুষের জন্য একটু সুখ এনে দেওয়ার চেষ্টা করছি। এটি একটি আবেগ, যা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।’
বিপদ আর বেদনার গল্প
সুদানের খেলোয়াড় ও কোচেরা এক দেশের পর আরেক দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, খেলার জন্য নিজেদের ‘ঘরের মাঠ’ তৈরি করেছেন সৌদি আরব, দক্ষিণ সুদান এবং লিবিয়ায়। তবে যুদ্ধের তীব্রতা তাদের প্রায়ই ঘরছাড়া করেছে।
কোচ জেমস কোয়েসি অ্যাপিয়া বলেন, ‘মাঝে মাঝেই ক্যাম্পে খবর আসে যে কোনও খেলোয়াড় তার পরিবারের একজনকে হারিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তাদের মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন। তবে আমরা জানি, ফুটবল দিয়ে দেশের মানুষকে একটু হলেও আনন্দ দেওয়া সম্ভব।’
শরণার্থী শিবিরের জীবন এবং ফুটবল
যুদ্ধের কারণে হাজারো মানুষ দেশ ছেড়ে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। চাঁদের অ্যাড্রে শিবিরে আশ্রয় নেওয়া জাওয়াহির জানিয়েছেন, কিভাবে তার পরিবারকে ধ্বংস করা হয়েছে। তার বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, পরিবারের ছয় সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে।
তবে শরণার্থী শিবিরেও ফুটবল যেন কিছুটা আশার আলো জ্বালিয়েছে। অ্যাড্রে শিবিরে বসবাসকারী তরুণরা একটি দল গঠন করেছে, যার নাম ‘সুদানিজ ভিক্টরি’। তারা বল পেলেই খেলা শুরু করে, যা তাদের দুঃখ ভুলিয়ে রাখে।
সেভ দ্য চিলড্রেনের সুদানের কান্ট্রি ডিরেক্টর আরিফ নূর বলেন, ‘যুদ্ধ ১ কোটি ৯০ লাখ শিশুদের ভবিষ্যত হুমকির মুখে ফেলেছে। ফুটবল তাদের মনোযোগ অন্য দিকে সরানোর একমাত্র উপায়।’
ফুটবল: সাহস এবং ঐক্যের প্রতীক
ওমদুরমানের কারারি এলাকায় এক টুর্নামেন্টে কোচ আদিল আমিন আওয়াদাল্লাহ বলেন, ‘ফুটবল আমাদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয়। যুদ্ধ সত্ত্বেও আমরা ফুটবল খেলি, যা আমাদের জন্য আনন্দ এবং সাহসের উৎস।’
জাতীয় দলের সাফল্য এবং স্থানীয় ফুটবল উদ্যোগগুলোর মাধ্যমে সুদানিদের জন্য ফুটবল এখন নতুন এক মুক্তির প্রতীক হয়ে উঠেছে। মানবিক সংকটের মধ্যেও ফুটবল এক শক্তিশালী ঐক্যের বার্তা বহন করছে।
মন্তব্য করুন