অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্তিতে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এ সময়ে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের তার করা নানা কাজ আর উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন আসিফ মাহমুদ। গত কয়েক যুগে ক্রীড়াঙ্গনে রাজনীতির ব্যাপক সংশ্লিষ্টতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন রাজনীতিমুক্ত ক্রীড়াঙ্গন তৈরিতে তার নেওয়া নানা উদ্যোগের কথা।
দায়িত্ব গ্রহণের শুরুতেই দেশের জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট নিয়ে নিজের অস্বস্তির কথা জানিয়ে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘দায়িত্ব নেওয়ার পর কথা বলার জন্য বিসিবির পরিচালকদের কাউকেই খুঁজে পাইনি। কিন্তু বিসিবিতে তো কোনো ধারাবাহিকতার ব্যত্যয় ঘটার কথা নয়। দেশে কোনো পরিবর্তন হলেও বিসিবিতে নিয়মিত কাজ হওয়ার কথা। কিন্তু সেখানে রাজনীতি যেভাবে জড়িয়ে পড়েছিল, তাতে সেখানেও ধারাবাহিকভাবে কাজ চলেনি। সে কারণে আইসিসি নির্ধারিত আইনের মাঝে থেকে বিসিবি পুনর্গঠন করা হয়েছে।’
কিন্তু একডজনের বেশি পরিচালকের না থাকায় বোর্ড চলতে হিমশিম খাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাস্তব সত্য হলো, কয়েকজন পরিচালক দিয়ে বিসিবি এখন চলছে জোড়াতালি দিয়ে। গঠনতান্ত্রিকভাবে পরিচালকদের শূন্যপদগুলো পূরণের চেষ্টা করছি, সেখানেও আছে চ্যালেঞ্জ। কারণ, ক্রীড়া সংস্থাগুলো কার্যকর নেই, সেগুলো নিয়ে কাজ চলছে।’ সবকিছু শেষে উপকমিটিগুলো পুনর্গঠন হলে বিসিবির কাজে গতিশীলতা আসবে বলেই বিশ্বাস করেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।
শুধু বিসিবিতেই আটকে নেই ক্রীড়া উপদেষ্টার নজরদারি। জানিয়েছেন, প্রতিটি ফেডারেশনকে আনা হবে জবাবদিহির আওতায়, ‘প্রতি বছর ফেডারেশনগুলোকে তার প্রগ্রেস রিপোর্ট দিতে হবে। বাধ্যতামূলক এই কাজটির সঙ্গে দিতে হবে আয়-ব্যয়ের হিসাব। এ ক্ষেত্রে বাফুফে আর বিসিবিকে বলা হয়েছে, নতুন নেতৃত্বে নেওয়ার পর তারা যেন স্বীকৃত কোনো অডিটর নিয়ে অডিট রিপোর্ট জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে জমা দেয়।’
মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশনা মেনে বিসিবি এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে এবং বাফুফে শুরু করবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এসব ক্ষেত্রে কোনো আর্থিক অসংগতি পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফেডারেশনগুলো স্বায়ত্তশাসিত বলে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে দায়িত্বটা তাদের বেশি।’
এ ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি তাদের জবাবদিহির মধ্যে আনার জন্য ক্রীড়া সাংবাদিকদের ভূমিকা রাখার জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানান ক্রীড়া উপদেষ্টা।
বিসিবির নিজের এত অর্থ, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পাওনা তো তারা দেয়ই না, উল্টো তাদের ব্যবহারের জন্য স্টেডিয়ামগুলো সরকারকে সংস্কার করে দিতে হয় কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘স্টেডিয়ামগুলো সরকারের অধীনে। তাই এর রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার আমাদের দায়িত্ব বলে মনে করি। আর ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের গেটমানি বাবদ দেনা-পাওনার বিষয়টি অন্যভাবে দেখা হবে।’
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের দোকান ভাড়া নিয়ে তেলেসমাতি কাণ্ডে বিষয়টিও উঠে এসেছিল ক্রীড়া উপদেষ্টার বক্তব্যে। দোকানের আসল মালিক সরকার ৭-৮ হাজার টাকা ভাড়া পেলেও দোকানি পায় দুই লাখের কাছাকাছি। এসব নিয়ন্ত্রণে আনতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটি তাদের প্রস্তাবনা এরই মধ্যে প্রস্তুত করেছেন বলে জানান আসিফ মাহমুদ।
জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লিগের লোকজন নিয়ে কমিটিগুলো বানানো হয়েছিল, সেগুলো পুনর্গঠন করার কাজ চলছে, সেসব শেষ হলে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারের ধারাবাহিকতা ফিরিয়ে আনা হবে।’
ফেডারেশনগুলোর অ্যাডহক কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘বিভিন্ন কমিটি নিয়ে যে অভিযোগ আছে, তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যেখানে স্থবিরতা আছে, সেখানে নতুন কমিটি করে সংকট সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।’
মন্তব্য করুন