মাত্র আগের ম্যাচেই লা লিগায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনার কাছে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়ে চরম অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়তে হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদকে। আশা ছিল নিজেদের প্রতিযোগিতা বানিয়ে ফেলা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জয় দিয়ে আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবে লস ব্লাঙ্কোস শিবির। তবে রিয়ালের সেই আশা পূরণ হতে দিল না ইতালির জায়ান্ট এসি মিলান।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) রিয়াল মাদ্রিদ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের চতুর্থ ম্যাচডেতে ঘরের মাঠে ইতালিয়ান ক্লাব এসি মিলানের কাছে ৩-১ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছে। এ নিয়ে টানা দুই ম্যাচে ঘরের মাঠে পরাজিত হলো তারা, আর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্বে তাদের মাত্র দুটি জয় রয়েছে। সামনে রয়েছে কঠিন লিভারপুল ম্যাচ, যা মাদ্রিদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
পরাজয়ের চেয়েও দলের কোচ কার্লো আনচেলত্তির কাছে দুশ্চিন্তার বিষয় হলো দলের পারফরম্যান্স। মিলান নিজেদের পরিকল্পনামাফিক খেলেছে, যেখানে রিয়াল মাদ্রিদকে অনেকটা ছন্নছাড়া মনে হয়েছে। খেলার মাঠে যেন আলাদা খেলোয়াড়দের সমন্বয়ে তৈরি একটি দল হিসেবে খেলেছে তারা। দ্রুত কিছু পরিবর্তন না আনতে পারলে মাদ্রিদের জন্য এই মৌসুমে সফলতা পাওয়া কঠিন হবে।
মিলানের তিনটি গোলই এসেছে রিয়াল মাদ্রিদের ভুল থেকে। প্রথম গোলটি আসে কর্নার থেকে, যেখানে জার্মান ডিফেন্ডার মালিক থিয়াও হেড দিয়ে গোল করেন। এখানে মাদ্রিদের মিডফিল্ডার অরেলিয়েন চৌআমেনির চিহ্নিত ত্রুটি ছিল। দ্বিতীয় গোলটিও চৌআমেনির ভুলে আসে, যখন তিনি নিজেদের অর্ধে বল হারান। কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রাক্তন রিয়াল তারকা আলভারো মোরাতা বলটি গোলের মুখে পাঠিয়ে দেন।
রিয়াল মাদ্রিদের পক্ষে একমাত্র গোলটি আসে ভিনিসিয়াস জুনিয়রের পেনাল্টি থেকে, যেখানে তাকে ফাউল করা হলে তিনি নিজেই উঠে পেনাল্টি শটে গোলটি করেন। সে সময় মনে হচ্ছিল দলটি ঘুরে দাঁড়াবে, কিন্তু এটি শুধু সাময়িক এক উচ্ছ্বাস ছিল।
দ্বিতীয় গোলের পর প্রতিবার চৌআমেনি বল স্পর্শ করলেই দর্শকরা তাকে দুয়ো দেয়, যা কিছুটা অনুচিত হলেও বুঝিয়ে দেয় দলের বর্তমান অবস্থা। এই দুয়ো তাদের ড্রেসিং রুম পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
কার্লো আনচেলত্তির হাফ টাইমের টিম টকও এবার কাজ করেনি, কারণ রিয়াল মাদ্রিদের রক্ষণভাগের দুর্বলতা ও আক্রমণভাগের একতার অভাব দ্বিতীয়ার্ধেও অব্যাহত ছিল। মিলান ৭৩তম মিনিটে আবারও গোল করে এগিয়ে যায়। লুকাস ভাসকেজের ভুলে লেয়াও সহজেই বলটি রিয়াল ডিফেন্সের পাশ দিয়ে নিয়ে যান এবং টিজানি রেইজন্ডার্সকে পাস দেন, যিনি সহজেই গোল করেন।
রিয়াল মাদ্রিদ আরও একটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কামব্যাকের চেষ্টা করলেও একাধিক হাফ চান্স তৈরি করতে সক্ষম হয়। ৮১ মিনিটে আন্তোনিও রুডিগার বল জালে পাঠান, কিন্তু অফসাইডের কারণে সেই গোল বাতিল করা হয়। এর ফলে শেষ দশ মিনিটের রোমাঞ্চকর মুহূর্ত আর তৈরি হয়নি।
এখন রিয়াল মাদ্রিদ ও কোচ কার্লো আনচেলত্তির জন্য বিপদ সামলানোর সময়। মাঠের চারপাশে রিয়ালের সমস্যা স্পষ্ট, রক্ষণভাগ অতিরিক্ত সুযোগ প্রদান করছে প্রতিপক্ষকে, আর তিন গোল খেলেও গোলরক্ষক আন্দ্রেই লুনিনই ছিলেন মাঠে সেরা। আক্রমণভাগের খেলোয়াড়দের সমন্বয়হীনতা এই মুহূর্তে আনচেলত্তির জন্য দুঃস্বপ্ন, যা দ্রুত সমাধান না হলে এবারের মৌসুমে রিয়ালের শিরোপা স্বপ্ন ভেঙে যেতে পারে।
মন্তব্য করুন