মালদিনি পরিবারকে এবার ফুটবলের কিংবদন্তি পরিবার বলা যেতেই পারে। কিংবদন্তি সিজার মালদিনির ছেলে সুদর্শন পাওলো মালদিনি ছিলেন সর্বকালের অন্যতম সেরা লেফট ব্যাক। ইতালির জাতীয় দলের রক্ষণ সামলাতেন তিনি।
এবার তার ছেলে দানিয়েল মালদিনি ইতালির জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন। ফলে এক পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম নীল জার্সিতে মাঠ মাতাতে এসে গেছেন। ফুটবলে পারিবারিক ঐতিহ্যের এমন বিপুল বিস্তার সচরাচর দেখা যায় না।
দানিয়েলের বাবা পাওলো মালদিনিকে নিয়ে ফুটবল জগতে গল্পের শেষ নেই। যেমন গল্প আছে পাওলোর বাবা সিজার মালদিনিকে নিয়ে। মিলানের সাবেক ডিফেন্ডার এবং ইতালির জাতীয় দলের ম্যানেজার ছিলেন সিজার।
১৯৫৪ থেকে ১৯৬২ মিলানের হয়ে চারটি লিগ ট্রফি জিতেছেন। ১৯৬৩ সালে ক্লাবকে প্রথম ইউরোপিয়ান কাপ এনে দেন। ক্লাবের ম্যানেজার হিসেবে সিজার ১৯৭২ থেকে ১৯৭৩ ইউরোপিয়ান কাপ উইনার্স কাপ এবং কোপা ইতালিয়া জেতেন। ১৯৮২ বিশ্বকাপ জয়ী ইতালি দলের সহকারী ম্যানেজার ছিলেন তিনি।
১৯৯৬ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত যখন তিনি জাতীয় দলের ম্যানেজার ছিলেন, তখন তার অধীনে খেলেছেন ছেলে পাওলো। মিলান এবং ইতালির কিংবদন্তি ডিফেন্ডার ফ্রাঙ্কো বারেসি একবার সিজারকে নিয়ে বলেন, ‘সবার আগে সিজার ছিলেন দারুণ ভালো একজন মানুষ। কিংবদন্তি এবং অসাধারণ অধিনায়ক। কোচ হিসেবেও দারুণ সফল। আমি ভাগ্যবান যে, তাকে খুব ভালো করে চিনতে পেরেছি। ১৯৮২ বিশ্বকাপের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পেরেছি। সিজারের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। ফুটবলের যে সব মূল্যবোধ আমরা মাঝে মাঝেই ভুলে যাই, সেগুলো উনি সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন।’
ছোটবেলায় পাওলো ভালোবাসতেন জুভেন্তাসকে। পরে মালদিনির ভালোবাসা বদলাতে থাকে। ধীরে ধীরে এসি মিলানের প্রেমে পড়েন তিনি। সারা জীবন সেই প্রেম অটুট ছিল। বাবা সিজার মালদিনি একদিন ছেলের কাছে জানতে চেয়েছিলেন কোন ক্লাবের হয়ে ট্রায়াল দিতে চাও। পাওলো জবাব দিয়েছিলেন, এসি মিলান।
যথারীতি ট্রায়ালের দিন পাওলো তার বুট নিয়ে মাঠে হাজির। পজিশন সম্পর্কে জানতে চাইলেন কোচরা। তখন মালদিনির সঠিক কোনো পজিশন ছিল না। তিনি কোচদের বলেছিলেন, ‘আমার নিজস্ব কোনো পজিশন নেই।’
রাইট উইংয়ের খেলোয়াড়ের অভাব ছিল সে সময়ে। পাওলো মালিদিনিকে রাইট উইংয়ে খেলানো হলো। তার খেলায় মুগ্ধ মিলান তখনই সই করিয়ে নিয়েছিলেন মালদিনিকে। এরপর ইতালির অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেফট ব্যাক হওয়ার গল্পটা সবার জানা।
মিলান দলে খেলা লিজেন্ড ফ্রাংকো বারেসি একবার পাওলো মালদিনিকে প্রথম ম্যাচে খেলতে দেখার স্মৃতিচারণ করে বলেছিলেন, ‘আসলে সে অনেক কম বয়সী ছিল।এজন্য আমি তাকে কিছু পরামর্শ দিতে চাইলাম কিন্তু তাকে সামান্যই দিতে হলো কারণ সে আগে থেকেই অসাধারণ প্লেয়ার ছিল।’
সেই কিংবদন্তি পাওলো মালদিনিপুত্র দানিয়েল চলতি মাসের উয়েফা নেশনস লিগের দুটি ম্যাচের জন্য ঘোষিত ইতালি দলে ডাক পেয়েছেন। বেলজিয়াম ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দুটি ম্যাচ রয়েছে ইতালির।
দানিয়েল অবশ্য বাবার মতো রক্ষণের খেলোয়াড় নন। তিনি ফরোয়ার্ডের খেলোয়াড়। তবে যেখানেই খেলেন তিনি কি পারবেন দাদা-বাবার মতো কিংবদন্তি হতে?
The Maldinis pic.twitter.com/0n5LQVlO7V — Italy Focus (@theitalyfocus) October 4, 2024
মন্তব্য করুন