২০০৮ থেকে ২০২৪ টানা ১৬ বছর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতির চেয়ার আঁকড়ে ছিলেন কাজী সালাউদ্দিন। চার মেয়াদে দায়িত্ব পালনের পর অবশেষে দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
আসন্ন পরিচালনা পর্ষদে নির্বাচনে না দাঁড়ানোর কথা নিশ্চিত করেছেন তিনি। তবে লম্বা সময় দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধানের চেয়ার আঁকড়ে থাকলেও সামগ্রিকভাবে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। ফুটবলের কোনো উন্নতি করতে না পারলেও তার আমলে আছে ব্যর্থতার বড় ফিরিস্তি। একনজরে কিছু স্মৃতি ঘুরে আসা যাক…
২০২২ বিশ্বকাপ খেলবে বাংলাদেশ: ২০১৩ সালে বাংলাদেশকে বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন সালাউদ্দিন। ভিশন টোয়েন্টি টোয়েন্টি টু তো ব্যর্থই হলোই উল্টো এ সময় দলগতভাবে র্যাঙ্কিংয়ে আরও তলানিতে নেমেছে বাংলাদেশের অবস্থান।
এক মুখে দুরকম কথা: ২০১৬ সালে বাফুফে নির্বাচনে তৃতীয় মেয়াদে সভাপতি হন তিনি। এরপর সভাপতি পদে আর কখনো লড়াই না করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু চতুর্থ দফায় ফের প্রার্থী হয়ে সভাপতি হয়েছিলেন। পঞ্চমবার একই স্বপ্ন নিয়েই এগোচ্ছিলেন। তবে এবার সরে দাঁড়িয়েছেন নির্বাচনের আগেই।
কোচ পরিবর্তন: সালাউদ্দিনের ১৬ বছরে জাতীয় দলের কোচ পরিবর্তন হয়েছে ২৩ বার। কখনো দেশি, কখনো বিদেশি। কখনো স্থায়ী, কখনো অন্তর্বর্তী কোচের ওপর আস্থা রেখে, আবার আস্থা হারিয়েছেনও।
কোটি টাকার সুপার কাপ: নিজের প্রথম বছরই কোটি টাকার সুপার কাপ দিয়ে চমকে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই শেষ। ঝলক ধরে রাখতে পারেননি। চলতি বছর চেষ্টা করেও দ্বিতীয় আসর আয়োজন করতে পারেননি।
অনিয়মিত বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ: বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফের নিয়মিত করার ঘোষণা দিয়ে কথা রাখতে পারেননি। নতুন বঙ্গমাতা গোল্ডকাপও এক আসরেই সীমাবদ্ধ।
জাতীয় দলের ব্যর্থতা সিশেলসের সঙ্গে হার: তার সময়ে জাতীয় দল সবচেয়ে ব্যর্থ। সাত সাফের ছয়টিতে গ্রুপ থেকে বাদ পড়েছে। তারপরও ২০১৯-এ বলেছিলেন তার দৃষ্টিতে ৫০ বছরের সেরা জাতীয় দল এটিই। ২০১৬-তে থিম্পুতে এশিয়ান কাপ প্রাক-বাছাইয়ে ভুটানের কাছে হার বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় লজ্জা। সেটিও টপকে গেছে কদিন আগে অপেশাদার সিশেলসের কাছে হারে।
ফিফার অনুদান বন্ধ অস্বীকার: তার শেষ মেয়াদে আর্থিক অনিয়ম আর অসংগতির কথা বারবার সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে অসংখ্য রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু বারবারই যাকে ভুল আখ্যা দিয়েছেন সভাপতি।
বাফুফে কার্যালয়ে প্রবেশ নিষেধ: ২০২১ সালে একটি প্রতিবেদনের জেরে বেসরকারি এক চ্যানেলের সংবাদকর্মীকে ফুটবল ভবনে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। সেখানেও সালাউদ্দিনের ইন্ধনের গুঞ্জন ছিল।
অনিয়মে সাধারণ সম্পাদকের পক্ষ নেওয়া: শেষ পর্যন্ত অনিয়মের অনাকাঙ্ক্ষিত স্বীকৃতি মিলেছে। আবু নাঈম সোহাগকে নিষিদ্ধ করেছে ফিফা। তবে তারপরও বোধোদয় হয়নি সালাউদ্দিনের। প্রথমে সোহাগের পক্ষ নিয়েছিলেন তিনি।
ক্রিকেট বোর্ড সভাপতিকে নিয়ে বক্তব্য: নারী দলকে অলিম্পিক বাছাই খেলতে না পাঠানোয় যখন দেশজুড়ে সমালোচনা, তখন ক্রিকেট বোর্ড সভাপতিকে ইঙ্গিত করে বক্তব্য দিয়ে নিজেকে আরও নিচে নামান ফুটবল সভাপতি।
সাংবাদিকদের নিয়ে বক্তব্য: ২০২৩ সালে এক আলোচনা সভার শুরুতে সাংবাদিকদের তাচ্ছিল্য করেন। এ সময় তাকে বলতে শোনা যায়, ‘জার্নালিস্টরা এখানে ঢুকতে গেলে তাদের আমার এখানে ফটো দিতে হবে তাদের মা-বাবার। আরেকটা কন্ডিশন হলো তার বাপের ফটো পাঠাবে, জুতা পরা। ঠিক আছে (হাসি)? এটা হতে হবে মেন্ডেটরি। বাপের জুতা পরা ছবি থাকতে হবে।’ যদিও পরে তোপের মুখে পড়ে ক্ষমা চান তিনি।
মন্তব্য করুন