ম্যানচেস্টার সিটির তারকা মিডফিল্ডার কেভিন ডি ব্রুইনা ফিফার নতুন ফরম্যাটের ক্লাব বিশ্বকাপের কারণে খেলোয়াড়দের ওপর সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ‘বাস্তব সমস্যা’ আসতে চলেছে, কারণ ফিফা অর্থকে খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্যের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিতব্য ৩২ দলের ক্লাব বিশ্বকাপ নিয়ে ডি ব্রুইনার আশঙ্কা, এ টুর্নামেন্টের ঠাসা সূচি খেলোয়াড়দের ওপর মারাত্মক ক্লান্তি চাপিয়ে দেবে। জুনে আয়োজিত এই প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার পর, পরবর্তী প্রিমিয়ার লিগ মৌসুম শুরুর আগে মাত্র তিন সপ্তাহ সময় থাকবে খেলোয়াড়দের নিজেদের ফিটনেস পুনরুদ্ধারের জন্য, যা তাদের জন্য শারীরিকভাবে অত্যন্ত চাপের হয়ে উঠতে পারে।
‘ক্লাব বিশ্বকাপের পরই আসল সমস্যা দেখা দেবে,’ সাংবাদিকদের বলেন ডি ব্রুইনা। ‘ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনাল ও প্রিমিয়ার লিগের প্রথম ম্যাচের মধ্যে মাত্র তিন সপ্তাহের ব্যবধান থাকবে। এ সময়ের মধ্যে আমাদের বিশ্রাম নিতে হবে এবং আবারও ৮০টি ম্যাচের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। হয়তো এই বছর পরিস্থিতি ঠিক থাকবে, কিন্তু আগামী বছর থেকে বড় সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।’
ডি ব্রুইনা আরও বলেন যে, ইংল্যান্ডের পেশাদার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন খেলোয়াড় সংগঠন এ সমস্যা সমাধানের জন্য ইউরোপীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ও ফিফার সঙ্গে আলোচনা করেছে। তবে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো সমাধান মেলেনি। তার মতে, ‘অর্থই খেলোয়াড়দের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।’
ডি ব্রুইনার এই উদ্বেগ বিশ্বব্যাপী খেলোয়াড় ও ফুটবলের শীর্ষ সংস্থাগুলোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রতিফলন। আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় ইউনিয়ন, ফিফপ্রো ইতোমধ্যে ফিফার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে, তাদের যুক্তি হলো অতিরিক্ত ম্যাচ যোগ করা খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে এবং তাদের উপর অমানবিক চাপ তৈরি করছে।
ফিফপ্রোর সাম্প্রতিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, কিছু খেলোয়াড়ের বিশ্রাম ও পুনরুদ্ধারের জন্য বছরে মাত্র ১২% সময় বরাদ্দ রয়েছে, যা তাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এভাবে নিরন্তর খেলার ফলে চোট এবং ক্লান্তির ঝুঁকি বাড়ছে।
যদিও খেলোয়াড়রা এবং তাদের সংগঠনগুলো বেশি ম্যাচ খেলার কারণে উদ্বিগ্ন, সবারই মত এক নয়। আন্তর্জাতিক স্পোর্টস স্টাডিজ সেন্টারের (সিআইইএস) একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, বর্তমান যুগের শীর্ষ খেলোয়াড়দের ওপর ম্যাচ খেলার চাপ পূর্বের দশকের তুলনায় তেমন বৃদ্ধি পায়নি।
সিআইইএসের তথ্য অনুযায়ী, ম্যানচেস্টার সিটি ২০২৩-২৪ মৌসুমে তাদের ৬৩% ম্যাচ ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় খেলেছে, এবং ফিফার আয়োজিত ম্যাচগুলো ছিল মাত্র ৩.২%। এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায় যে, ম্যাচের ঘনত্ব খুব বেশি বৃদ্ধি পায়নি।
তবে ফিফা ও ইউরোপীয় ফুটবল সংস্থাগুলো তাদের প্রতিযোগিতার পরিধি আসলেই বাড়িয়ে চলেছে, খেলোয়াড় ও সংগঠনগুলোর মধ্যে মতবিরোধের ফাঁক আরও বড় হচ্ছে। বিশেষ করে ইংল্যান্ডের ফুটবলের গঠন অত্যন্ত শারীরিকভাবে চ্যালেঞ্জিং রয়ে গেছে, যেখানে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলো মাত্র তিন দিনের কম বিশ্রাম নিয়েই একের পর এক ম্যাচ খেলতে বাধ্য হচ্ছে।
খেলোয়াড়দের এই চাপের বিরুদ্ধে কবে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
মন্তব্য করুন