দুই দেশের দূরত্ব ১৬ হাজার ৭১৫ কিলোমিটার। সময়ের পার্থক্য প্রায় ১৫ ঘণ্টা। আর হবে বা না কেন, মহাদেশটাই তো আলাদা। কিন্তু দুই দেশকে এক করেছে ফুটবল। ১৯৮৬ সালে সাদা-কালো টিভির যুগে দিয়েগো ম্যারাডোনা যে ছাপ রেখেছিলেন এ দেশের মানুষের হৃদয়ে।
লিওনেল মেসির পায়ের জাদুতে তা বেড়েছে হু হু করে। এত দিন ভালোবাসা একতরফা থাকলেও কাতার বিশ্বকাপে তা ছড়িয়ে পড়ে আর্জেন্টিনাতে। তিন যুগ অপেক্ষার পর ফের বিশ্বজয়ের পর অনেকবারই বাংলাদেশকে প্রশংসায় ভাসিয়েছে আর্জেন্টিনা।
গত ছয় মাসেও যেন আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসার প্রতিদান দিয়ে শেষ করতে পারছে না আর্জেন্টাইনরা। এবার লাল-সবুজের দেশটির ভালোবাসার প্রতি কৃতজ্ঞতা থেকে লাতিন আমেরিকান দেশটির রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সে বাংলাদেশের নামে একটি ফুটবল ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে দেপোর্তিভো বাংলাদেশ। শুধু নামেই না, ক্লাবটির রন্ধ্রে রন্ধ্রে বাংলাদেশের ছাপ রয়েছে।
দেপোর্তিভো বাংলাদেশ নামের ক্লাবটির প্রতিষ্ঠাতাদের সবাই জাতীয়তায় আর্জেন্টাইন। তবে ক্লাবটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা লিয়ান্দ্রো গাল্লিচিও অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশের একজন পাঁড় সমর্থক। তাই তো প্রয়াত ফুটবল কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনা ও দেশটির স্বাধীনতার নায়ক সেন্ট মার্টিনের পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিও রয়েছে জার্সিতে।
শুধু তাই না, ক্লাবের জার্সি আর ব্যাজেও বাংলাদেশের পতাকা, মানচিত্র এবং ইতিহাসের জায়গা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে দেপোর্তিভো বাংলাদেশ ক্লাবের এক প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘এখানে বঙ্গবন্ধুর ছবি রয়েছে কারণ তিনি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা। একপাশে সেন্ট মার্টিনের ছবি, যিনি আর্জেন্টিনার স্বাধীনতার নায়ক। দুই দেশের জাতির পিতাকে আমরা উভয় পাশে রেখেছি। মাঝে আমরা রেখেছি ম্যারাডোনাকে। কারণ ১৯৮৬ বিশ্বকাপে তার মাধ্যমেই বাংলাদেশ ও আর্জেন্টিনার মধ্যে ভালোবাসার সেতুবন্ধনের শুরু হয়।’
এ সময় ক্লাবটির আরেক সহ-প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘ভালোবাসার রং মাখিয়ে এই ক্লাবটার নাম রাখা হয়েছে, যা আমরা বাংলাদেশের মানুষের কাছ থেকে পেয়েছি। তারা আমাদের যে ভালোবাসা দিয়েছে, তার কিছুটা হলেও আমরা প্রতিদান দিতে চাই। সদলবলে কোনো একদিন বাংলাদেশে এসে প্রীতি ম্যাচ খেলতে চাই আমরা।’
ক্লাবটির প্রতিষ্ঠাতারা বাংলাদেশ থেকে প্রতিভাবান ফুটবলারদের খেলাতে চান, এ প্রসঙ্গে ক্লাবের এক সহ-প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে খেলোয়াড় আসবে এবং এ ক্লাবে খেলবে—এমনটাই আমাদের পরিকল্পনা। সেই সঙ্গে বিশ্বকাপে খেলতে দেখাও আমাদের স্বপ্ন।’
নিঃস্বার্থ ভালোবাসার এ রকম প্রতিদান হয়তো স্বপ্নেও ভাবেননি বাংলাদেশিরা। তবে আর্জেন্টিনার এমন কাণ্ড নিঃসন্দেহে সবার মন জয় করবে।
মন্তব্য করুন