মোচকে ডান পায়ের গোড়ালি ফুলে গেছে খানিকটা। যেখানে দাঁড়িয়ে থাকা কষ্ট, সেখানে খেলা চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছিলেন লিওনেল মেসি। দ্বিতীয় দফায় একই জায়গায় চোট পাওয়ার পর আর পেরে ওঠেননি।
ম্যাচের ৬৭ মিনিটে তাকে মাঠ থেকে তুলে নিতে বাধ্য হন আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি। সে সময় ডাগআউটে বসে কান্নায় ভেঙে পড়েন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। দলের প্রতি নিঃস্বার্থ এই ভালোবাসাকে আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনি বলেছেন ইতিহাসের সেরা।
মায়ামির হার্ড রক স্টেডিয়ামে দর্শকদের বিশৃঙ্খলার কারণে ৮২ মিনিট পর শুরু হয় ৪৮তম আসরের কোপা আমেরিকা ফাইনাল। ম্যাচের প্রথমার্ধ শেষ হয় গোলশূন্য। ম্যাচের ৩৫ মিনিটে কলম্বিয়ার ডিফেন্ডার সান্তিয়াগো আরিয়াসের ধাক্কায় মাটিতে পড়ে দিয়ে ডান গোড়ালিতে আঘাত পান মেসি।
আর্জেন্টাইন জাতীয় দলের চিকিৎসকরা প্রায় দুই মিনিট ধরে চিকিৎসা করেন তার। তবে পুনরায় মাঠে ফিরলেও দৌড়াতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল আর্জেন্টাইন অধিনায়কের। ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে ৬৪ মিনিটে আঘাতপ্রাপ্ত গোড়ালি ধরে আবারও মাটিতে পড়ে যান তিনি।
ডান পায়ের বুট খুলে হাতে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে মাঠের বাইরে চলে যান তিনি। ডান পায়ের বুট হাতে নিয়ে চলে যান মাঠের বাইরে। তখন প্রায় ম্যাচের বাকি ২৬ মিনিট। বেঞ্চে কান্নায় ভেঙে পড়েন মেসি।
সতীর্থদের সান্ত্বনাও কাজে আসেনি। ইনজুরির হতাশা হয়ে হাত দিয়ে মুখ ঢেকে রাখতে দেখা যায় তাকে। হয় তো আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ ফাইনাল খেলে ফেলেছেন তিনি। জাতীয় দলের আর ফাইনালে খেলা হবে না ভেবে আরও বেশি করে কাঁদতে থাকেন তিনি।
অতিরিক্ত সময়ে লাউতারো মার্তিনেজের কলম্বিয়াকে হারিয়ে আবারও মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরে আর্জেন্টাইনরা।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে মেসির কান্না নিয়ে প্রশ্ন করা হয় দলের কোচ লিওনেল স্কালোনিকে। সর্বকালের এই মহান খেলোয়াড় তার চারপাশের লোকদের জন্য একটি মান নির্ধারণ করে চলেছেন।
তিনি বলেন, ‘তার (মেসি) এমন কিছু আছে যা প্রতিটি ফুটবলারের থাকা উচিত। সে ইতিহাসের সেরা এবং সে চলে যেতে চায় না। তার সতীর্থরা সেটা দেখে শিখছে। সে স্বার্থপর বলে খেলতে চায় না। বরং এ কারণে খেলতে চায় যে, সে তার সতীর্থদের নিয়ে জিততে চায়। তাদের পিছিয়ে রাখতে চায় না, এমনকি সে পরিস্থিতিতেও (ইনজুরি)।
টানা দুই কোপা এবং বিশ্বকাপ জয়ের পর স্কালোনির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। বর্তমানে তার মনোভাব কী, জানতে চাইলে এর উত্তরে বলেন, ‘গত বছর আমার খারাপ সময় কেটেছিল, আমি ভালো অবস্থায় ছিলাম না। আমি এটা (দায়িত্ব ছাড়ার কথা) বলেছিলাম কারণ কয়েক মাস ধরে (চুক্তির আলোচনা) অচলাবস্থা ছিল।’
আপাতত আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের দায়িত্ব পালন করে যেতে চান বলেও উল্লেখ করেন স্কালোনি, ‘যেদিন আমার কোনো সমস্যা হবে, আমি সেটা বলব। এখন আমি ভালো আছি। আমি সব কিছু পুনরুদ্ধার করেছি এবং আমরা এ পথে চালিয়ে যাওয়ার আশা করি। জাতীয় দল অনেক শক্তির দাবি করে, আমি মনে করি সত্যি কথা বলতে গেলে এটা গুরুত্বপূর্ণ।’
এ সময় স্কালোনি আরও বলেন, ‘আপাতত আমার চুক্তি আরও দুই বছর আছে। আমি প্রেসিডেন্টকে (ক্লাদিও তাপিয়া) বলব ১৫ বছরের জন্য আমার চুক্তি নবায়ন করতে এবং আমি স্বাক্ষর করব। এরপর, আমাকে সেগুলো সম্পূর্ণ করতে হবে! এক পর্যায়ে কেটে যাবে।’
আপাতত বিশ্রাম। জাতীয় দলের ফুটবলাররা ফিরে যাবেন নিজ নিজ ক্লাবে। আর বিশ্বকাপ বাছাইয়ের জন্য পরিকল্পনা সাজাবেন স্কালোনি। সেপ্টেম্বরে চিলি এবং কলম্বিয়ার মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা। এ ছাড়া নতুন ইউরো চ্যাম্পিয়ন স্পেনের সঙ্গে ফিনালেসিমার রণকৌশলও সাজাতে হবে আর্জেন্টিনার কোচকে।
মন্তব্য করুন