মায়ামির হার্ড রক স্টেডিয়ামে দেরিতে শুরু হওয়া ম্যাচে কলম্বিয়াকে ১-০ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো কোপা আমেরিকার শিরোপা জিতল আর্জেন্টিনা। একই সঙ্গে উরুগুয়েকে টপকে লাতিন মহাদেশীয় এই আসরের সর্বোচ্চ ১৬ শিরোপা জয়ের রেকর্ড এককভাবে নিজেদের করে নিয়েছে লিওনেল স্কালোনির দল।
প্রথমার্ধে ভালো কাটেনি আর্জেন্টাইনদের। বল দখল, পাসিং এবং গোল পোস্টে শট—সবকিছুতেই এগিয়ে ছিল নেস্তোর লরেঞ্জোর শিষ্যরা। তবে দ্বিতীয়ার্ধে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি নিজেদের অনুকূলে আনলেও, চোটের কারণে মেসি ছিটকে যান।
তবে আর্জেন্টাইন অধিনায়কের অনুপস্থিতিতে ভুগতে হয়নি। শিরোপা জয়ের ক্ষুধায় রচিত হয় মহাকাব্যিক ফাইনাল। টানা তিন বড় শিরোপা জিতে ভাগ বসায় স্পেনের রেকর্ডে। আর্জেন্টাইন গণমাধ্যম ক্লারিন, মেসি-ডি মারিয়াদের শিরোপা জয়ের ৫ কারণ বিশ্লেষণ করেছে এভাবে-
কলম্বিয়ার চাপে ভেঙে না পড়া
কলম্বিয়ার আর্জেন্টাইন কোচ নেস্তোর লরেঞ্জোর পরিকল্পনা ছিল শুরুতে থেকে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের চাপের ফেলার। আর কেবল প্রথমার্ধে সফল ছিল তারা। দ্বিতীয়ার্ধে নিখুঁতভাবে বেরিয়ে আসে লিওনেল স্কালোনির শিষ্যরা।
মাঝমাঠে রদ্রিগো ডি পল এবং এনজো ফার্নান্দেজকে দিয়ে হামেস রদ্রিগেজ-লুইস দিয়াজ জুটির বল আদান-প্রদানের পথ বন্ধ করে দেন আর্জেন্টাইন কোচ। এতে কমে যায় কলম্বিয়ার আক্রমণের ধার।
সময়মতো স্কালোনির সংশোধন
এ ম্যাচে শুরুতে ৪-৪-২ ফরমেশনের একাদশ সাজিয়ে ছিলেন আর্জেন্টাইন কোচ। ডানদিকে অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া, বাঁদিকে অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার এবং মাঝে ইনসাইডার হিসেবে রাখা হয়েছিল ডি পল ও এনজো ফার্নান্দেজকে।
চারজনের দায়িত্ব ছিল মাঝমাঠ দখলের। কলম্বিয়ার ভালো শুরু স্কালোনিকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। ডি মারিয়াকে বাঁয়ে আর ডি পলকে ডান পাঠান তিনি। এনজো আর ম্যাক অ্যালিস্টার মাঝে আসায়, দ্রুত রক্ষণে নেমে যেতে পারছিলেন। আবার প্রয়োজনে আক্রমণেও উঠছিলেন।
Say hello to your 16-time CONMEBOL Copa America️ champion pic.twitter.com/45aNRFmQhI — CONMEBOL Copa América️ ENG (@copaamerica_ENG) July 15, 2024
দ্বিতীয়ার্ধে, মেসির বদলে নিকোলাস গঞ্জালেজকে মাঠে নামলে খেলাটি ভারসাম্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। পরে আ লাউতারো মার্তিনেজের গোল ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দেয়।
ছিল না মেসিকে হারানোর প্রভাব
অধিনায়ক হয়েই মাঠে নামেন লিওনেল মেসি। ম্যাচের প্রথম আক্রমণ তৈরি করে ছিলেন। এ ছাড়া তার একটি শট আটকে যায় সতীর্থ জুলিয়ান আলভারেজের পায়ে লেগে। তবে ৩৫ মিনিটে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারের ট্রাকেলে ইনজুরিতে পড়েন তিনি।
দ্বিতীয়ার্ধে ৬৭ মিনিটে আবারও একই জায়গা চোট পেলে মাঠ থেকে বের হয়ে যেতে হয় তাকে। ডাগ আউটে বসে কাঁদতে দেখা যায় মেসিকে। হতাশা নেমে আসে আর্জেন্টাইন সমর্থকদের মাঝে।
তার পরিবর্তে নামা নিকোলাস গঞ্জালেজ ছিলেন দুর্দান্ত। সবসময় ব্যতিব্যস্ত রাখেন কলম্বিয়ার রক্ষণকে। গোলও পেয়েছিলেন কিন্তু অফসাইডের কারণে বাতিল হয় তা।
সঠিক সময়ে সঠিক পরিবর্তন স্কালোনির
কোপার নকআউট পর্বে অতিরিক্ত সময় ছিল না। কাজে নির্ধারিত সময়ে ড্র হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ম্যাচ গড়িয়েছে টাইব্রেকে। তবে ফাইনালে ছিল অতিরিক্ত ৩০ মিনিট। কোপা আমেরিকার ফাইনালে নির্ধারিত সময়ে গোল হয়নি। ফলে খেলতে হয় বাড়তি ৩০ মিনিট।
pic.twitter.com/yl4S2vd6x9 — CONMEBOL Copa América️ ENG (@copaamerica_ENG) July 15, 2024
এ সময় খেলোয়াড় পরিবর্তন ছিল গুরুত্বপূর্ণ। আর এই গুরুত্বপূর্ণ কাজ থেকে বেশ ভালো ভাবে করেছেন আর্জেন্টিনার কোচ। যদিও অনেকটা বাধ্য হয়ে মেসির পরিবর্তে মাঠে নামান নিকোলাস গঞ্জালোজকে।
একই সঙ্গে মাঠে নামানো হয় পারেদেস, লো সেলসো এবং লাউতারো মার্তিনেজকে। পরে লো সেলসোর অ্যাসিস্টে গোল করেন লাউতারো। এতে শিরোপা নিশ্চিত হয় আর্জেন্টিনার।
স্কালোনির জয়ের ক্ষুধা
জয়ের জন্য সবসময় ক্ষুর্ধাত লিওনেল স্কালোনি। নিজের এই ক্ষুধাটা শিষ্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন তিনি। ২৩ বছর পর প্রথমবারের ফাইনাল খেলতে আসা কলম্বিয়ার বিপক্ষেও সেই ক্ষুধা লক্ষ্য করা যায়। যেমনটা ছিল কাতার বিশ্বকাপ ও কোপার গত আসরে।