গত ১ জুলাই মধ্যরাতে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, ৫ জুলাই সকালে লিওনেল মেসি! দিনের হিসেবে মাঝে চারদিনের ব্যবধান। দুই মহাদেশে সময়ের সেরা দুই তারকা শিরোনাম হলেন একই ভাবে! আর তা হলো পেনাল্টি মিস।
ইউরো কাপের শেষ ষোলোর লড়াইয়ে স্লোভেনিয়ার বিপক্ষে অতিরিক্ত সময়ে পাওয়া পেনাল্টি থেকে গোল করতে ব্যর্থ হন রোনালদো। এরপর ভেঙে পড়েন কান্নায়, যা নিয়ে উপহাস করেন ভক্তরা।
যদিও ২০ মিনিট পরে টাইব্রেকে গোল করে শাপমোচন করেন তিনি। আর গোলকিপার ডিয়েগো কস্তার নৈপুন্যে জায়গা হয় কোয়ার্টার ফাইনালে।
শুক্রবার সকালে কোপা আমেরিকার ইকুয়েডরের বিপক্ষে টাইব্রেকের প্রথম শট মিস করেন মেসি। রোনালদোর মতো অবশ্য তিনি কাঁদেননি। তবে সেই মুহূর্তে তাকে দেখে বোঝা যাচ্ছিল তিনি কতটা হতাশ। তার মুখেও হাসি ফোটান গোলকিপার।
পর্তুগালের কস্তার মতো এমিলিয়ানো মার্তিনেজের বীরত্বে কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নেন মেসি।
গোলকিপারদের কৃতিত্বের পাশাপাশি, আলোচনায় আসে রোনালদো-মেসির ব্যর্থতা। ৩৯ বছর বষয়ী রোনালদো আগে জানান এটাই তার শেষ মহাদেশীয় টুর্নামেন্ট। আর ৩৭ বছর বয়সী মেসি ঘোষণা না দিলেও এটা যে তার শেষ কোপা তা অনেকটা অনুমেয়।
ফ্রান্সের কাছে হেরে ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছে পর্তুগাল। একই সঙ্গে বিদায় হয়েছে সিআরসেভেনের। শেষটা রাঙাতে ২০১৬ সালের পর আবারও শিরোপা জিততে চেয়েছিলেন তিনি। তাকে বিদায় নিতে হলো খালি হাতে। এখন প্রশ্ন, মেসির ভাগ্যে কী রয়েছে?
এ নিয়ে ইউরোর ষষ্ঠ আসরে অংশ নিলেন রোনালদো। প্রতিটি ম্যাচেই বোঝা গেছে সেই আগের রোনালদো আর নেই। মাঠে মুভমেন্ট, ফ্রি-কিক, ড্রিবলিং, পাসিং— সবকিছুতে কমতি লক্ষ্য করা গেছে। এবারের আসরে একটি গোলও করতে পারেননি পর্তুগিজ কিংবদন্তি। পেনাল্টিতে গোল করার সুযোগ পেয়েও তা মিস করেন।
রোনালদোর মতো মেসিও এবারের কোপায় গোল পাননি। পর্তুগালে রোনালদো অভাব টের পেতে দেননি ব্রুনো ফার্নান্দেজ, বার্নার্দো সিলভা, জোয়াও ফিলিক্সরা। তেমনই আর্জেন্টিনাতেও মেসিকে বাঁচাচ্ছেন জুলিয়ান আলভারেজ, লাউতারো মার্তিনেজ ও লিসান্দ্রো মার্তিনেজরা।
মেসিকে ভোগাচ্ছে চোট। কানাডার বিপক্ষে দুর্দান্ত খেললেও গোল পাননি। চিলি বিপক্ষে পড়েন ইনজুরিতে। ফলে খেলা হয়নি পেরুর বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে। ইকুয়েডরের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে তার খেলা না খেলা নিয়ে শঙ্কা ছিল।
তবে আর্জেন্টাইন কিংবদন্তিকে একাদশে রাখেন প্রধান কোচ লিওনেল স্কালোনি। তবে খুব বেশি ইমপ্যাক্ট রাখতে পারেনি আর্জেন্টিনার জয়ে। ম্যাচ শেষ জানিয়ে ছিলেন চোট পাওয়ার ভয় কাজ করছিল তার।
এক দশকেরও বেশি সময় মেসি-রোনালদো দাপিয়ে বেড়িয়েছেন ইউরোপীয় ফুটবলে। প্রথমসারির ফুটবল থেকে দুজনই সরে গেছেন। গত বছরের শুরুর দিকেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছেড়ে সৌদি আরবের আল নাসেরে যোগ দেন রোনালদো।
আর পিএসজি ছেড়ে মেসি পাড়ি জমান মার্কিন মুল্লুকে। দুই দেশের ফুটবলের মান ইউরোপের তুলনায় অনেক কম। এতে দুজনের খেলায় প্রভাব পড়া অস্বাভাবিক নয়।
ইউরো কাপ থেকে বিদায় নিয়েছেন রোনালদো। বিদায়ের কাছে গিয়েও বেঁচে যান মেসি। আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি নিজের শেষ মহাদেশীয় টুর্নামেন্টে কতদূর যান সেটাই এখন দেখার বিষয়।
তাই তো প্রশ্ন উঠেছে রোনালদোর মতো মেসিও কি ফিরবেন খালি হাতে নাকি রাঙাবেন শেষটা?
মন্তব্য করুন