এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অনেক কিছুই অভিনব। যেমন প্রথমবার দক্ষিণ আফ্রিকার ফাইনাল খেলা। কোনো আইসিসি টুর্নামেন্টের নকআউটে প্রথমবার ভারত-প্রোটিয়াদের মুখোমুখি হওয়া। খুঁজলে হয়তো আরও অভিনব কিছু মিলতেও পারে। কিন্তু বার্বাডোজে ফাইনালের আগে আমাদের লক্ষ্য বিশ্বকাপের অভিনবত্বের খোঁজ করা নয়। লক্ষ্য তাহলে কী? সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন সম্পর্কে পাঠককে একটা আন্দাজ দেওয়া।
হৃদয় বলছে দক্ষিণ আফ্রিকা চ্যাম্পিয়ন হবে; কিন্তু মস্তিষ্ক তাতে সায় দিচ্ছে না। ক্রিকেটে এত বছরের অপমানিত ইতিহাস কি মুছতে পারবে প্রোটিয়ারা? বর্ণবাদের শাপমুক্তির পর ১৯৯২ সালেই তো ফাইনাল খেলতে পারতেন অ্যালান ডোনাল্ডরা। সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে সেদিন অভিশপ্ত বৃষ্টি তাদের সৌভাগ্যের রেখা মুছে দিয়েছিল। ইংল্যান্ডের রান তাড়া করতে নেমে ব্রায়ান ম্যাকমিলান (বিশ্ব ক্রিকেটের সেই সময়ের কার্যকরী অলরাউন্ডার) আশা জাগাচ্ছিলেন। তারপর বৃষ্টি নামে। থামার পর দেখা যায় ডাকওয়ার্থ লুইস মেথডে জিততে হলে দক্ষিণ আফ্রিকার দরকার ১ বলে ২২ রান। সেই ট্র্যাজেডির পর অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ১৯৯৯ বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা এবং যথারীতি হেরেছিল ডোনাল্ডের মর্মান্তিক রানআউটের কারণে। খুঁজলে ক্রিকেট ট্র্যাজেডি আরও মিলবে। তাই ভয়ে ভয়ে থাকতে হয় প্রোটিয়া সমর্থকদের। আবার যদি ভাগ্যের হাতে মার খেয়ে ছিটকে যেতে হয়। যতই ফাইনালে উঠুক, দক্ষিণ আফ্রিকার গায়ে যে এখনো চোকার অপবাদ লেপ্টে আছে। আজ ভারতকে হারাতে পারলে উঠে যাবে তা।
ভারতও আইসিসি বিশ্বকাপ ফাইনালে ভাগ্যবিড়ম্বিত। এই তো সেদিন ঘরের মাঠে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে হেরেছে রোহিত শর্মার দল। ঠিক গুনে গুনে ২২৮ দিন পর আরও একটা আইসিসি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলতে নামছেন রোহিতরা। আহমেদাবাদে যারা অস্ট্রেলিয়ার কাছে বিধ্বস্ত হয়েছিলেন, তাদের অনেকেই আজ খেলবেন বার্বাডোজে। কিন্তু চাকদে ইন্ডিয়া হবে তো? মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন। কারণ সাম্প্রতিক ইতিহাস বলছে, আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনালে ভারত ব্যর্থ। ২০১৪ সালে মিরপুরে লঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে হেরেছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। ২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর তারা কোনো বিশ্বকাপ জেতেনি। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল খেলেও ব্যর্থ হয়েছে। এবার সেই অভিশাপ ঘোচাতে পারবেন রোহিতরা?
বার্বাডোজের ফাইনালে আজ টুর্নামেন্টের সবচেয়ে ইনফর্ম দুটি দল খেলছে। ভারতও অপরাজিত। দক্ষিণ আফ্রিকাও তাই। গ্রুপ পর্ব থেকে তারা জিতেই চলেছে। সেটাও আবার যেনতেন জয় নয়। এইডেন মার্করামের দল রীতিমতো থ্রিলার জিতেছে। ফলে প্রোটিয়াদের চোকার বলতে দুবার ভাবতে হচ্ছে। কিন্তু রোহিত শর্মার দলও তো খেলছে দাপুটে ক্রিকেট। গতবারের চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে গুঁড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে উঠেছে। জাসপ্রিত বুমরাহ বরাবরের মতো আগুন ঝরাচ্ছেন। কুলদীপ যাদব ঘূর্ণিমায়ায় বিভ্রম তৈরি করছেন। সেসবের উত্তর কি দিতে পারবে প্রোটিয়ারা। কেশব মহারাজ আর তাবরেজ শামসিরা কি পাল্টা দিতে পারবেন? মার্কো ইয়ানসেন আর কাগিসো রাবাদা কি গতির ঝড় তুলতে পারবেন? নাকি রোহিত-সূর্যকুমাররা পাল্টা আক্রমণে তাদের কোণঠাসা করবে? এসব প্রশ্নের উত্তর যাদের পক্ষে যাবে, আজ তাদের হাতেই উঠবে বিশ্বকাপ।
মন্তব্য করুন