বাংলাদেশের ক্রিকেটের পোস্টারবয় সাকিব আল হাসান। দেশের ইতিহাসের সেরা ক্রিকেটার হিসেবে তার নাম বলা হলে তর্ক করার লোক খুব বেশি থাকবে না। বিশেষ করে ব্যাট হাতে যেমন তার বিচক্ষণতা এবং ক্ষমতা তেমনি বল হাতে তার নিয়ন্ত্রিত বোলিং টাইগারদের অনেক ম্যাচ জিতিয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে চোখের সমস্যার পর থেকে বেশ ভুগেছেন এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। বিশেষ করে বল হাতে সাকিবের পারফরম্যান্সে অনেক পতন লক্ষ্য করা গেছে। বেশ কিছু ম্যাচে তিনি নিজের সেরা ফর্ম থেকে দূরে ছিলেন ।
সাম্প্রতিক সময়ের পারফরম্যান্স
সাকিবের বল হাতে ফর্মের পতন অনেকেই নজরে এনেছেন। গত কিছু সিরিজে তার বোলিং স্ট্রাইক রেট এবং ইকোনমি রেট দুই-ই কমেছে। বিশেষ করে, চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও তার আগে খেলা টি-টোয়েন্টি ম্যাচগুলোতে বল হাতে সাকিবের পারফরম্যান্স চ্যালেঞ্জিং ছিল, যেখানে তিনি সর্বশেষ ৯টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে উইকেট পেয়েছেন মাত্র ৬টি এবং রানও দিতে হয়েছে বেশি। তার বোলিং ফিগারগুলো বলছে, তিনি সেই সাকিব নন যিনি ম্যাচের গতিপথ পরিবর্তন করতে পারেন।
উল্লেখযোগ্যভাবে, তার এই সমস্যা শুরু হয় ওয়ানডে বিশ্বকাপে ইনজুরিতে পড়ার পর থেকে। এরপর এবছরের কিছু আন্তর্জাতিক ম্যাচে সাকিবের বোলিং দেখলে মনে হয়েছে তিনি কিছুটা ছন্দহীন। তার বোলিং অ্যাকশন এবং গ্রিপে পরিবর্তন, বিশেষ করে স্পিনের ক্ষেত্রে, অনেক প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। শেষ কয়েকটি সিরিজে তার বোলিং ইকোনমি ৫.৫ এর উপরে ছিল, যা তার ক্যারিয়ারের তুলনায় অনেক বেশি।
সাকিবের গুরুত্ব
বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য সাকিব আল হাসান মানেই যেন দলের মূল স্তম্ভ। ব্যাট হাতে সাকিবের ভূমিকার মতোই, তার বোলিংও বাংলাদেশ দলের জন্য অপরিহার্য। সাকিব না থাকলে দলের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয় এবং বোলিং ইউনিটের কার্যকারিতা অনেকটাই কমে যায়। তার বোলিংয়ে রয়েছে নানা কৌশল; লাইন-লেন্থের খেলায় তিনি খুবই কার্যকরী।
বিশেষ করে সবকিছু ঠিকভাবে চললে চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ সুপার এইট খেলবে। সেখানে অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও আফগানিস্তানের মতো দলের বিপক্ষে খেলতে হবে টাইগারদের। সেসব ম্যাচে সাকিবের অলরাউন্ড পারফরম্যান্স দরকার বাংলাদেশের।
বিশ্ব ক্রিকেটের বিভিন্ন দল ও খেলোয়াড়দের বিপক্ষে সাকিবের কৌশলগত বোলিং ছিল বিস্ময়কর। সুপার এইটে তাই যদি তাকে সরিয়ে ফেললে বাংলাদেশ দলের বোলিং শক্তি অনেকটাই কমে যায়। বিশেষ করে সাকিবের করা চার ওভার অন্য কোনো অলরাউন্ডারের পক্ষে সম্ভবত পূরণ করা সম্ভব হবে না।
সাকিবের ফর্মে ফিরে আসার সম্ভাবনা
তবে, সাকিবের বোলিংয়ে ফর্মে ফিরে আসার সম্ভাবনা এখনো উজ্জ্বল। তার বোলিং স্টাইল এবং দক্ষতা যা তাকে বিশ্বমানের অলরাউন্ডার করেছে, সেই সামর্থ্য এখনো তার রয়েছে। সাকিবের সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাটিংয়ে ফর্মে ফিরেছেন যা তার পুরোনো ছন্দে ফেরার ব্যাপারে আশাবাদী করে তুলেছে।
অনেকেই মনে করছেন, তিনি নিজে যা করতে পারেন তা হলো মনোযোগী থাকা এবং নিজের বোলিংয়ের ধরন পুনরায় অনুশীলন করা। তার অভিজ্ঞতা এবং ম্যাচের পরিস্থিতি বোঝার ক্ষমতা তাকে এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করবে। তার বোলিং কোচ এবং দলের সহায়ক ব্যক্তিরা নিশ্চিতভাবে তাকে পুনরায় সুস্থ ও ছন্দে ফিরিয়ে আনতে কাজ করে যাবেন।
সাকিব আল হাসান বাংলাদেশের ক্রিকেটের অনন্য এক রত্ন। তার অভাব যেমন দলের জন্য হতাশাজনক, তেমনি তার ছন্দে ফেরাটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য আশার আলো। এখন সময় এসেছে সাকিবকে তার সেরা ফর্মে ফিরে পেতে, যা নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। বোলিংয়ে সাকিবের শক্তি ও দক্ষতা ফিরিয়ে আনতে পারলে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সামনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে, যা টাইগারদের বিশ্বকাপে অনেক দূর নিতে পারে।
সুতরাং, সাকিবের পুনরুদ্ধার নিয়ে আমরা প্রত্যাশিত, তিনি দ্রুতই ফিরে আসবেন তার সেরার সঙ্গে এবং আবারও দলকে উপহার দেবেন এমন কিছু মুহূর্ত যা ক্রিকেটপ্রেমীরা চিরকাল মনে রাখবে।
মন্তব্য করুন