সাকিব আল হাসান জানতেন পারফরম্যান্স করেই দিতে হবে সকল সমালোচনার জবাব। লম্বা ক্যারিয়ারে এর আগে অনেকবার এভাবেই দিয়েছেন সমালোচনা সকল জবাব। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আগের দুই ম্যাচে ব্যাট হাতে ব্যর্থ ছিলেন তিনি। ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দৃষ্টিকটুভাবে আউট হয়ে সমালোচিত হন বেশি। টি-টোয়েন্টি অলরাউন্ডারদের র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর থেকে নেমে যান পাঁচে। পারফর্ম করতে না পারলে তাকে অবসরে যাওয়ার পরামর্শ দেন ভারতের সাবেক ওপেনার বীরেন্দ্র শেবাগ।
নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে দলীয় ২৩ রানে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও লিটন দাসের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর ক্রিজে এসে ব্যাটিংয়ে ধীরে সুস্থে ব্যাটিং শুরু করেন সাকিব।
কিংসটাউনে ১০ বছর পর হচ্ছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। এমন কী ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচও হয়নি এখানে। এই উইকেটে শুরুতে ব্যাটিং করা কিছুটা কঠিন। প্রথম ৮ বলে কোনো রান করতে পারেননি তানজিদ হাসান তামিম। পরে ২৬ বলে ৩৫ করে আউট হন তিনি।
সাকিবও প্রথম ৭ বলে পেয়েছিলেন ৭ রান। আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ প্রথম ৭ রান তুলতে খরচ করেছিলেন ১৩ বল। সেখানে সাকিব খেললেন দুর্দান্ত এক ইনিংস। সাত বাউন্ডারিতে ৩৮ বলে তুলেন নেন ক্যারিয়ারের ১৩তম অর্ধশতক।
২০ ইনিংস পর পেলেন অর্ধশতকের দেখা। সবশেষে অর্ধশতক করেছিলেন ক্রাইস্টচার্চে পাকিস্তানের বিপক্ষে। বিশ্বকাপের আগে ত্রিদেশীয় সিরিজে বাঁহাতি এই ব্যাটার খেলেছিলেন ৬৮ রানের ইনিংস।
এরপরই নিষ্প্রভ হয়ে যান সাকিব। ১৯ ইনিংসে দেখা পাননি কোনো অর্ধশতক। ২০২২ সালের অক্টোবরের পর থেকে দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পেরেছিলেন মাত্র ৯বার। সবশেষ ৭ টি-টোয়েন্টিতে তার রান ছিল ৬৯।
একটা জায়গা স্বস্তি ছিল তার। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে তার পরিসংখ্যান ঈর্ষান্বিত। ডাচদের বিপক্ষে বিশ্বকাপের এই ম্যাচের আগে, ৭ ইনিংসে ২১৩ রান করেছেন তিনি। গড় ৩৫.৫০। কমপক্ষ ৫ ম্যাচ খেলা ভেন্যুর মধ্যে সাকিবের স্ট্রাইক রেট ওয়েস্ট ইন্ডিজেই সবচেয়ে বেশি।
সেই ক্যারিবীয় দ্বীপেই ফিরে পেলেন নিজেকে। ৪৬ বলে ৬৪ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। বাউন্ডারি হাঁকান ৯টি। মজা বিষয় হচ্ছে ৬৪ রানের ইনিংসে ছক্কা নেই একটিও, যা অনেকটা তার স্বভাব বিরুদ্ধ।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইটে খেলতে হলে নেদারল্যান্ডস ও নেপালের বিপক্ষে ম্যাচ দুটি টাইগারদের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ডাচদের বিপক্ষে জয় পেলে ১৭ বছর পর সুপার এইটে খেলার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে বাংলাদেশের।
এ জন্য সাকিবের ব্যাটের দিকে তাকিয়ে ছিল পুরো দেশ। সেটাই করলেন তিনি। যা তিনি করেছেন আগেও। বাজে সময় পেছনে ফেলে ব্যাট হাতে দিলেন সমালোচকদের মোক্ষম জবাব। প্রমাণ করলেন তিনি এখনও ফুরিয়ে জাননি। এবার বল হাতে ঝলক দেখানোর পালা!
মন্তব্য করুন