সকার (ফুটবল), বাস্কেটবল ও বেসবল! মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে এই তিন খেলা। মার্কিনিদের সঙ্গে কথা বললে কিংবা দেশটির খেলাধুলার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে শীর্ষে থাকবে এই তিন খেলার নাম। লিওনেল মেসি ইন্টার মায়ামিতে যোগ দেওয়ার পর ধীরে ধীরে বাড়ছে সকারের (ফুটবল) জনপ্রিয়তা।
আর বেসবল ও বাস্কেটবল আগে থেকে মার্কিনিদের কাছে অনেক জনপ্রিয়। এই তিন খেলার ভিড়ে ক্রিকেট যেন ‘ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা’। এমন দেশে রোববার (২ জুন) ভোর থেকে শুরু হয়েছে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্বকাপ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ক্রিকেট কি পারবে নিজের অবস্থান তৈরি করতে?
একটা সময় আমেরিকায় বেশ জনপ্রিয় ছিল ক্রিকেট। তখন অবশ্য বিশ্বের অন্যান্য দেশে পায়নি জনপ্রিয়তা। ১৮৪৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে হয় প্রথম ক্রিকেট ম্যাচ। মুখোমুখি হয় উত্তর আমেরিকার দুই প্রতিবেশী দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা। অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের অ্যাশেজ সিরিজের আগে হয় এই নর্থ আমেরিকান ডার্বি।
ঘটনাচক্রে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে লড়েছে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা। হয় তো পুরোনো ইতিহাস ফিরিয়ে আনতে চেয়েছেন আয়োজকরা। বহু বছর আগে ক্রিকেট শুরু হলেও আমেরিকায় কেন হারাল ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা?
এর অন্যতম কারণ ক্রিকেটের চেয়ে দ্রুততম খেলা বেসবল। ১৮৬০ সালে গৃহযুদ্ধের পর প্রথম প্রেম ক্রিকেটকে ভুলে বেসবলকে আঁকড়ে ধরে মার্কিনিরা।
সময়ের পরিক্রমায় বাস্কেটবলসহ জনপ্রিয়তা পায় অন্যান্য খেলাগুলো। আর ধীরে ধীরে আমেরিকার ক্রীড়া মানচিত্রে থেকে হারিয়ে যেতে থাকে ক্রিকেট।
মার্কিনমুলুকে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা ফেরাতে উঠে পড়ে লেগেছে ইউএসএ ক্রিকেট। তবে মার্কিনিদের কাছে ক্রিকেটকে এত দ্রুত জনপ্রিয়তা করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেট কিংবদন্তি ব্রায়ান লারা।
সাক্ষাৎকারে ক্যারিবীয় সাবেক এই অধিনায়ক বলেছেন, ‘টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মানেই বিনোদন। আমেরিকানরা ওটাই চায়। বাকি ফরম্যাট কি এখানে জনপ্রিয় হবে? আমি জানি না।’
এর ব্যাখ্যায় লারা বলেছেন, ‘ক্রিকেট নিয়ে অনেক আমেরিকানের সঙ্গেই আমার কথা হয়েছে। ওরা (মার্কিনিরা) বলেছে, তোমরা একটা ম্যাচ পাঁচ দিন ধরে খেলছো, সেটাও ড্র হয়! তা হলে এই খেলার মানে কী? ফলে আমার মতে, এখানে ক্রিকেটকে জনপ্রিয় করে তোলা বেশ কঠিন কাজ।’
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নবম আসরের সহআয়োজক লারার দেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এবারের আসরের ৫৫ ম্যাচের মধ্যে মাত্র ১৬ ম্যাচের আয়োজক যুক্তরাষ্ট্র। নিউইয়র্ক, ফ্লোরিডা এবং ডালাসে হবে বিশ্বকাপের ম্যাচ। মাত্র এই কয়েকটি ম্যাচ দিয়ে কি মার্কিনিদের মনে ছাপ ফেলা সম্ভব? তারা কি অভ্যস্ত হতে পারবেন ক্রিকেট অঞ্চলগুলোর নাম এই যেমন গালি, কাভার স্লিপ, থার্ড ম্যান-এর সঙ্গে?
আমেরিকানদের মাঝে ক্রিকেটকে আরও ছড়িয়ে দিতে মোক্ষম একটা চাল ফেলেছে বিশ্ব ক্রিকেটে সর্বোচ্চ সংস্থা আইসিসি।
অলিম্পিকে ক্রিকেটকে অন্তর্ভুক্ত করেছে তারা। আর অলিম্পিকের খেলাগুলোর প্রতি মার্কিনিরা বেশ দুর্বল। তাইতো দেশটির জনগণের সঙ্গে ক্রিকেটের আত্মীয়করণের চেষ্টার কোনো কমতি রাখতে চাইছে না আইসিসি।
উপমহাদেশীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের কথা মাথায় রেখে ভারত ও পাকিস্তানের গ্রুপ পর্বের সব ম্যাচ রাখা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। অন্যান্য খেলাধুলার সঙ্গে মেলানো হচ্ছে ক্রিকেটকে এই যেমন : বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুততম মানব উসাইন বোল্টকে করা হয়েছে টুর্নামেন্টের শুভেচ্ছা দূত।
সকার (ফুটবল), বাস্কেটবল ও বেসবলের মাঝে ক্রিকেটকে জনপ্রিয় করতে নজর তৃণমূলে। তাই তো উসাইন বোল্ট বলেছেন, ‘আমেরিকায় ক্রিকেট জনপ্রিয় হতেই পারে। খেলাটার উপস্থিতি যত বেশি হবে তত মানুষ আগ্রহী হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রে এখনো পেশাদার ক্রিকেট চালু হয়নি। ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি খুচরো কাজ করে সংসার চালান দলের সদস্যরা। জনপ্রিয় করতে ক্রিকেটে আনতে হবে পেশাদারিত্ব। খুলতে হবে অর্থ উপার্জনের পথ। চালু করতে হবে স্কুল ক্রিকেট। অভিভাবকদের বোঝাতে হবে ক্রিকেট খেলেও আয় করা যায় বিপুল অর্থ।
এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নতুন দিগন্ত খুলে দেবে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিকেটে। যার শুরুটা হয়েছে রোববার। প্রথম ম্যাচে কানাডার বিপক্ষে তাদের রেকর্ড গড়া জয়, নিশ্চয়ই আগ্রহ বাড়বে তরুণ প্রজন্মের অনেকের কাছে। যত বেশি জয়, তত বেশি অগ্রসর হবে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিকেট।
মন্তব্য করুন