মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের করা ২০তম ওভারের তৃতীয় বলটিকে কাভার-এক্সটা কাভারের মাঝ দিয়ে বাউন্ডারি ছাড়া করে বুনো উল্লাসে মাতেন হারমিত সিং ও কোরি অ্যান্ডারসন। যদিও বাংলাদেশের দেওয়া ১৫৪ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে, ৯৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
এরপর অ্যান্ডারসন-হারমিতের অবিচ্ছিন্ন ৬২ রানের জুটিতে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারায় মার্কিনিরা। অ্যান্ডারসন ২৫ বলে ৩৪ ও হারমিত মাত্র ১৩ বলে ৩৩ রানে অপরাজিত ছিলেন। ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন হারমিত। মজার বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশের বিপক্ষে পাওয়া ঐতিহাসিক এই জয়ে যে দুজন বড় ভূমিকা রেখেছেন তাদের কেউ জন্মগতভাবে আমেরিকান নন।
ক্রিকেট বিশ্বে কোরি অ্যান্ডারসন বেশ পরিচিত মুখ। খেলেছেন নিউজিল্যান্ড জাতীয় দলে। কিউইদের জার্সিতে ওয়ানডেতে ৩৬ বলে দ্রুতগতির সেঞ্চুরির রেকর্ড রয়েছে তার। তবে ইনজুরির কারণে ছিটকে যান নিউজিল্যান্ড স্কোয়াড থেকে। এরপর আর বিবেচিত হননি কিউইদের দলে। এ বছর সুযোগ পান যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় দলে।
ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা হারমিতের গল্পটা প্রায় একই। তিনি ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দলের নিয়মিত সদস্য ছিলেন। খেলেছেন ভারতের বি দলে। তবে ২০১৩ সালে তার বিরুদ্ধে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) স্পট ফিক্সিংয়ের অভিযোগ ওঠে। যদিও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) তদন্তে মুক্ত হন তিনি।
হারমিতের মতোই অধিনায়ক মোনাঙ্ক প্যাটেলের জন্মও ভারতে। জাতীয় দলে না খেললেও গুজরাট অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলেছেন এই উইকেটকিপার-ব্যাটার। পেসার সৌরভ নেত্রভালকরের জন্মও ভারতে। তিনি আবার খেলেছেন ভারতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ দলে।
ভারতের এ তিনজন ছাড়াও বাংলাদেশের বিপক্ষে একাদশ থাকাদের মধ্যে পাকিস্তান, কানাডা, দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটার রয়েছেন।
বাকি চারজনের জন্মস্থান যুক্তরাষ্ট্রে। তবে ওপেনার স্টিভেন টেইলর মতো এই চারজনের একজনও খাঁটি আমেরিকান নন। দক্ষিণ ফ্লোরিডায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা হলেও টেইলরের পরিবার মূলত জ্যামাইকান অভিবাসী।
এই ওপেনারের মতোই যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম অ্যারন জোনসের। তিনিও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ বার্বাডোজের অভিবাসী। একাদশে থাকা জাসদ্বীপ সিংয়ের পরিবার ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। একই অবস্থায় দলের আরেক ক্রিকেটার নস্থুশা প্রদিপের। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্ব রাজ্য আলাবামায় জন্ম তার।
পাকিস্তানের হাসান রাজার পর দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় নিতিশ কুমারের। তবে সেটা কানাডার জার্সি। দেশটির হয়ে ৮টি ম্যাচ খেলেন তিনি। পরে এই অলরাউন্ডার পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে।
আলি খানের জন্ম পাকিস্তানের পাঞ্জাবে। পরিবারের সঙ্গে ১৮ বছর বয়সে পাকিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে চলে আনেন তিনি। এ ছাড়া একাদশে থাকা আরেক ক্রিকেটার আন্দ্রিস গাউসের জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকায়। প্রোটিয়াদের অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলেছেন তিনি।
অর্থাৎ বাংলাদেশ এমন একটি দলের কাছে হারল, যে দলে খাঁটি আমেরিকান একজনও নেই। মূলত বিভিন্ন দেশের অনেকটা উপেক্ষিত ক্রিকেটারদের নিয়ে গড়া যুক্তরাষ্ট্র দলটি। এই দলের কাছে এমন লজ্জাজনক হার শিক্ষণীয় হয়ে থাকবে বাংলাদেশ দলের কাছে।
যদিও পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে বাংলাদেশকে এভাবে ‘শিক্ষা’ দিয়ে চমকে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাচ জয়ের নায়ক হারমিত সিং। ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে হারমিত বলেছেন, ‘ভালো লাগছে। এটা আমাদের ঘরের মাঠ, তাই সুযোগটা নিতে মরিয়া ছিলাম। বাংলাদেশকে বোঝাতে চেয়েছি, আমরা এখানে ওয়াকওভার দিতে আসিনি।’
নিজ দেশে প্রায় ‘বাতিল হওয়া ক্রিকেটার’দের নিয়ে গড়া দলটির কাছে এমন হার থেকে কি আদ্য শিক্ষা নেবে নাজমুল হোসেন শান্তর দল?
মন্তব্য করুন