আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল-আইসিসির ‘হল অফ ফেমে’ জায়গা পান ইমরান খান। সে সময় পাকিস্তানের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক সম্পর্কে বলা হয়—একজন যোদ্ধা যে শেষ বল পর্যন্ত লড়ে গিয়েছে। আর তার এই লড়াকু মানসিকতা তাকে ক্রিকেট বিশ্বে এনে দিয়েছে অমরত্বের স্বাদ।
১৯৯২ সালে পাকিস্তানের বিশ্বকাপ জয়, অনেকটা রূপকথার মতো। আর রূপকথার নায়ক ইমরান খানই। যিনি বিশ্বকাপের আগে বিদায় জানিয়ে ছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে। তবে রাষ্ট্রপতির আহ্বানে অবসর ভেঙে ফেরেন ২২ গজে। এরপর একটি ভাঙাচোরা দলকে অবিশ্বাস্যভাবে বানান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন।
লাহোরে ১৯৫২ সালে জন্মগ্রহণ করে ইমরান খান। আর জাতীয় দলে তার অভিষেক ১৯৭১ সালে। এরপর থেকে পাকিস্তান ক্রিকেটের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে যান দীর্ঘদেহী এই অলরাউন্ডার। শুরুর দিকে ফাস্ট বোলার হিসেবে পান খ্যাতি। পরে ব্যাটিংয়েও দেখান প্রতিভার ঝলক।
১৯৭৫ সালে যাত্রা শুরু হয় ওয়ানডে বিশ্বকাপের। সেবারই বিশ্বকাপে অভিষেক হয় তার। ১৯৮২ সালে আরেক তারকা ক্রিকেটার জাভেদ মিয়াদাদের কাছ থেকে বুঝে নেন অধিনায়কের দায়িত্ব। ১৯৮৭ সালে বিশ্বকাপের সেমিতে উঠতে পারেনি পাকিস্তান। সেই আফসোসে অবসর নেন ক্রিকেট থেকে।
কিন্তু পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়া উল হকের ডাকে অবসর ভেঙে আবারও তুলে নেন অধিনায়কের দায়িত্ব। তার অধিনায়কত্বে বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম শক্তিশীল দল এবং আনপ্রেডিক্টেবল তকমা পায় পাকিস্তান।
ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারদের ছোট্ট তালিকায়ও তার নাম থাকবে ওপরের দিকেই। সহজাত নেতৃত্বগুণ ইমরান খানকে বানিয়ে ছিল মাঠ ও মাঠের বাইরে সত্যিকারের লিডার। নিজের শেষ বিশ্বকাপ স্মরণীয় করে রাখতে তিন সপ্তাহ আগেই অস্ট্রেলিয়ায় যায় পাকিস্তান দল।
শুরুটা হয়েছিল বেশ বাজেভাবে। ছয়টি প্রস্তুতি ম্যাচ খেললেও জয় পায় মাত্র একটি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১০ উইকেটের হার দিয়ে শুরু বিশ্বকাপের মূল পর্ব। পরের ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে সহজে হারায় ইমরান খানের দল।
পরের ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লজ্জাজনক হার থেকে রক্ষা পায় বৃষ্টির কল্যাণে। এরপর ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরে বিদায়ের ঘণ্টা বেজে যায় পাকিস্তানের। পরের ম্যাচে শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে কক্ষপথে ফেরে ইমরান খানের দল। পর্যায়ক্রমে শ্রীলঙ্কা, নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতে পাকিস্তান।
তরুণ প্রতিভা খুঁজে বের করতে বেশ পটু ছিলেন তিনি। ওয়াসিম আকরাম, ইনজামাম-উল-হক, ওয়াকার ইউনুসের মতো বিশ্বসেরা ক্রিকেটাররা তারই আবিষ্কার। এ ছাড়া কার্যকরী অলরাউন্ডার ও একমাত্র অধিনায়ক বিশ্বকাপ শিরোপা জেতা ইমরান খানকে মনে করা হয় পাকিস্তানের ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ক্রিকেটার।
ক্রিকেট পরিসংখ্যানও বলছে একই কথা। ৮৮ টেস্টে তার রান ৩ হাজার ৮০৭ আর উইকেটের সংখ্যা ৩৬২। ১৭৫ ওয়ানডেতে ১৮২ উইকেট শিকারের পাশাপাশি রান করেছেন ৩ হাজার ৭০৯। অনেক ক্রিকেট বোদ্ধা মনে করেন, ক্রিকেটের লিডার একজনই; তিনি পাকিস্তানের ইমরান খান।
মন্তব্য করুন