টেস্ট অভিষেকে টানা তিন সেঞ্চুরি, এমন রাজসিক আগমণে অনেকে ধারণা ছিল ক্রিকেটের মহাতারকা পেয়েছে ভারত। পরের ১৬ বছরে হয়ে উঠে ছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটের মহানায়ক। কিন্তু ক্যারিয়ারের শেষ বেলায় সেই মহানায়কের নাম জড়িয়ে পড়ে ম্যাচ ফিক্সিংয়ে। নিমিষেই মোহাম্মদ আজহার উদ্দিন হয়ে যান দেশটির সবচেয়ে বিতর্কিত, সমালোচিত ও নিন্দিত ক্রিকেটার।
অভিষেকের মাত্র পাঁচ বছরের মাথায় অধিনায়কের দায়িত্ব পান আজহার। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অধিনায়কত্বের অভিষেক টেস্টে খেলেছিলেন ১২১ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস। বিশ্বকাপে সফল না হলেও তার নেতৃত্বে দুবার এশিয়া কাপ জিতেছে ভারত।
আজহারের অধিনায়কত্বে ৪৭ টেস্টের ১৪টিতে জয় পায় ভারত। আর ১৭৪ ওয়ানডের ৯০টিতে জেতে ভারত। শততম টেসট খেলতে না পারা তার সবচেয়ে বড় আক্ষেপ। ৯৯ টেস্টে ৪৫ দশমিক শূন্য তিন গড় আর ২২ সেঞ্চুরিতে তার রান ৬ হাজার ২১৫। ৭ সেঞ্চুরিতে ৩৩৪ ওয়ানডেতে ৯ হাজার ৩৭৮ রান করেন আজহার।
২০০০ সালে তার বিরুদ্ধে ফিক্সিং অভিযোগ ওঠে। মূলত দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক হ্যান্সি ক্রনিয়ের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে বেড়িয়ে আসে আজহারের নাম। ক্রনিয়ের দাবি ছিল বুকির সঙ্গে তাকে পরিচয় করিয়ে দেন আজহার।
এরপর তদন্তে জানা যায় ১৯৯৬ সালে রাজকোটে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ ছাড়াও ১৯৯৭ ও ১৯৯৯ সালে পেপসি কাপেও ম্যাচ ফিক্সিংয়ে জড়িত আজহার। এই ঘটনায় আজীবনের জন্য ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করা হয় তাকে।
যদিও বারবার এই অভিযোগ অস্বীকার করেন আজহার। ২০১২ সালে উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে এই ফিক্সিংয়ের অভিযোগ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরে ২০১৯ সালে হায়দরাবাদ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি।
আক্ষেপ থাকলেও আজহারের প্রাপ্তিও কম নয়। একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেকে এবং ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টে সেঞ্চুরির রেকর্ড তার দখলে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ৩০০ ওয়ানডে খেলার কীর্তিরও তার দখলে।
১৯৮৬ সালে তাকে অর্জুনা পদকে ভূষিত করে ভারত সরকার। ১৯৮৮ সালে পান পদ্মশ্রী। রাজনীতিতে নাম লিখিয়ে হয়েছেন লোকসভার সদস্য। বৃহস্পতিবার সেই আজহারউদ্দিনের জন্মদিন।
১৯৬৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি হায়দরাবাদে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ভারতের সাবেক এই অধিনায়ক। অভিষেকে তোলপাড় তোলা আজহারের এমন স্বপ্নের মতো ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শেষটা হয় কলঙ্ক দিয়ে।
মন্তব্য করুন