অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে উইন্ডিজ দল দেখে তাদের কিংবদন্তি জেফ ডুজন বলেছিলেন, এ যেন ভেড়ার পালকে কসাইখানায় পাঠানো। তবে মাঝেমধ্যে ভেড়ার পালও যে লড়তে জানে তা মনে হয় ভুলতে বসেছিলেন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভেড়ার পালরা অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে এমন এক জিনিস করে দেখাল যা গত প্রায় ৩০ বছরে তারকায় ঠাসা কোনো ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল করতে পারেনি। শামার জোসেফ নামে এক ভেড়ার কৃতিত্বে অজিদের তাদেরই মাটিতে প্রায় তিন দশক পর টেস্টে হারাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
সর্বশেষ ১৯৯৭ সালে অজিদের মাটিতে টেস্ট জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সে সময় আজকের ম্যাচের জয়ের নায়ক শামার জোসেফের জন্মই হয়নি। সেই জোসেফই ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্বর্ণযুগকে মনে করিয়ে দেওয়া ফাস্ট বোলিংয়ের অনন্য প্রদর্শনীতে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ২৭ বছর পর টেস্ট ম্যাচে জয় এনে দিলেন ক্যারিবীয়দের।
রুদ্ধশ্বাস সমাপ্তির এই টেস্ট ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতেছে মাত্র ৮ রানে। আগের দিন ব্যাটিংয়ের সময় ডান পায়ের আঙুলে চোট যার টেস্ট খেলা নিয়েই অনিশ্চয়তা ছিল, সেই শামার জোসেফের ৬৮ রানে ৭ উইকেটের তোপে অস্ট্রেলিয়ার কফিন মাটিতে নামে।
অ্যাডিলেডে সিরিজের প্রথম টেস্টে তিন দিনের মধ্যে হেরে যাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্রিসবেনে দিবারাত্রির ম্যাচটিতেও সহজেই হেরে যাবে বলে মনে করেছিলেন অনেকেই। প্রথম ইনিংসে ৩১১ রানে অলআউট হয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু কেমার রোচ আর আলজারি জোসেফের অসাধারণ বোলিংয়ের পর অস্ট্রেলিয়া তাদের প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে ৯ উইকেটে ২৮৯ রান তুলে। অনেকের মতে এই অদ্ভুত ইনিংস ঘোষণাই কাল হয়ে দাঁড়াল অস্ট্রেলিয়ার জন্য।
দ্বিতীয় ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ মাত্র ১৯৩ রানে অলআউট হলে অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্য দাঁড়ায় ২১৬। ২ উইকেটে ৬২ রান তুলে তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করা অস্ট্রেলিয়া জয়ের পথেই ছিল। কিন্তু আজ চতুর্থ দিনে ৬৮ রানে ৭ উইকেট নেওয়া জোসেফের অন্য পরিকল্পনা ছিল।
অথচ কেউ ভাবেনি তিন আজ বল করবেন।
তবে তার এই বীরত্বকে আরেকজন আরেকটু হলেই ম্লান করে দিচ্ছিলেন তিনি হলেন স্টিভেন স্মিথ। সময়ের অন্যতম সেরা এই ব্যাটার দলের বিপদের সময় বের করে আনেন নিজের সেরা ক্যারিশমা।
যখন একের পর এক উইকেট পড়ছিল, তখনও তার শক্তির জায়গায় অবিচল থাকেন তিনি, পুরো টেস্টের রঙে টিকে থাকেন শেষ পর্যন্ত। ১০ রানে উসমান খাজা ও ৫ রানে মার্নাস লাবুশানে বিদায় নেওয়ার পর ক্যামেরুন গ্রিনের সঙ্গে দারুণ একটা জুটি হয়েছিল তার। গ্রিন পাল্লা দিয়ে ৭৩ বলে করেন ৪২ রান। শামার জোসেফই নেন তার উইকেট।
গ্রিন আউট হওয়ার পরের বলেই ট্রাভিস হেড গোল্ডেন ডাক দেন। মিচেল মার্শ ১০ ও আলেক্স ক্যারি করেন ২ রান। তারাও শামারের কাছেই পরাস্ত হন। মিচেল স্টার্ক খেলেন দারুণ ও সময়োপযোগী এক ক্যামিও ইনিংস। ১৪ বলে ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ে ২১ রান করে আউট হন তিনি, এবারও শিকারি জোসেফ। অজি দলপতি প্যাট কামিন্সের উইকেটও নেন তিনি।
নাথান লায়ন এসে স্মিথের সঙ্গে হাল ধরেছিলেন। ২০ বল খেলে ৯ রান করে তিনি আউট হন আলজারি জোসেফের ওভারে। শেষ উইকেটটি (জস হ্যাজেউলডের) ফেলে মহাকাব্য রচনা করেন শামার নিজে। স্মিথ শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৯১ রান করে। ১৪৬ বলে তার ইনিংসটিতে আছে ৯টি চার ও একটি ছয়ের মার। আর কেউ পাশে থাকলে হয়তো উইন্ডিজের রূপকথা লেখা হতো না।
মন্তব্য করুন