প্রতিবারের মতো সদ্য শেষ হওয়া ওয়ানডে ক্রিকেট বিশ্বকাপের সেরা পারফর্মারদের নিয়ে একটি একাদশ তৈরি করেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি), যেখানে টানা দশ ম্যাচ জিতেও ট্রফি জিততে না পারা টিম ইন্ডিয়ার রয়েছে সর্বোচ্চ পাঁচজন খেলোয়াড়। অপরদিকে বিশ্বকাপ জয়ের পরও মাত্র দুই অজি ক্রিকেটার জায়গা করে নিয়েছে এই একাদশে। স্বাভাবিকভাবেই আট ম্যাচ হেরে সবার আগে বাদপড়া বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কোনো ক্রিকেটার এই একাদশে নেই।
আর সেরা একাদশে সেমিফাইনালিস্ট দুই দল দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ডের একজন করে ক্রিকেটার জায়গা পেয়েছেন। সেমিফাইনালে না উঠেও শ্রীলঙ্কার এক ক্রিকেটার জায়গা পেয়েছেন এই একাদশে।
আইসিসির এই একাদশে দ্বাদশ খেলোয়াড় হিসেবে জায়গা পেয়েছেন প্রোটিয়া ফাস্ট বোলার জেরল্ড কোয়েটজি।
দলের প্রথম নাম ও অধিনায়ক হিসেবে আছেন রোহিত শর্মা। দ্বিতীয়বারের মতো ৫০ ওভারের টুর্নামেন্টের সেরা দলে মনোনীত হয়েছেন ভারতের এই মারকুটে ওপেনার ও অধিনায়ক। রোহিত শর্মা এই আসরে ভারতের পক্ষে টপ অর্ডারের ঝড়ো ব্যাটিংয়ের মাধ্যমে বড় স্কোরের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন।
অভিজ্ঞ এই ওপেনার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হতাশাজনক উদ্বোধনী পারফরম্যান্সকে পেছনে ফেলে মাত্র ৮৪ বলে ১৩১ রান করে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচের পুরস্কার জিতেছিলেন।
তিনি চির প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ জয়ে সর্বোচ্চ স্কোর ৮৬ দিয়ে জয়ের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফাইনাল সহ একটি ঘটনা বাদে সবকটি ম্যাচে ৪০ পেরিয়েছিলেন।
এই বিশ্বকাপ দিয়ে অবসর নেওয়া কুইন্টন ডি কক ওডিআই খেলোয়াড় হিসাবে তার শেষ দিনগুলিতে ইতিহাস তৈরি করে আরেক ওপেনার হিসেবে সেরা একাদশের অংশীদার হয়েছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকান হয়ে বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম উইকেটকিপার হিসেবে ৫০০ রানের সীমা অতিক্রম করেন এবং একটি একক টুর্নামেন্টে ২০টি ডিসমিসাল করেন। উইকেটকিপার হিসেবে ২০০৩ টুর্নামেন্টে অ্যাডাম গিলক্রিস্টের ২১ রানের রেকর্ড থেকে মাত্র এক আউট দূরে ছিলেন তিনি। এছাড়াও বিশ্বকাপে রোহিত শর্মার রেকর্ড পাঁচটি সেঞ্চুরি থেকে মাত্র এক সেঞ্চেুরি দূরে ছিলেন তিনি।
এই একাদশে টপ অর্ডারের তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে রয়েছেন ভারতের সেরা ব্যাটার বিরাট কোহলি।
কোহলি প্রায় ৯৬ গড়ে এই বিশ্বকাপে বিস্ময়কর ৭৬৫ রান করেন, যা শচীন টেন্ডুলকারের করা আগের রেকর্ডটি ভেঙে দেয়, যিনি ২০০৩ সংস্করণে ৬৭৩ রান করেছিলেন।
কোহলির সেরা পারফরম্যান্স এসেছিল নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেমিফাইনাল জয়ে। তার করা ১১৭ এবং টুর্নামেন্টের তৃতীয় সেঞ্চুরি ভারতকে ১২ বছরের মধ্যে প্রথমবার ফাইনালে নিয়ে যায়।
এই একাদশে ৪ নম্বরে ব্যাট করবেন ড্যারিল মিচেল, যিনি ভারতের বিপক্ষে প্রথম ৫০ ওভারের বিশ্বকাপে দুইটি সেঞ্চুরি করেছিলেন।
দুর্দান্ত এই কিউই রাউন্ড রবিনে মেন ইন ব্লু-এর বিরুদ্ধে ১৩০ এবং সেমিফাইনালে ১৩৪ রানের ইনিংস খেলে তার রান ৫৫২তে নিয়ে যান।
ভারতের উইকেটকিপার ব্যাটার লোকেশ রাহুল পুরো টুর্নামেন্টে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলার পাশাপাশি নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে নিয়মিত জয়ে শতরান করায় এই একাদশে ৫ নম্বরে জায়গা পেয়েছেন।
রাহুল ফাইনাল ম্যাচে ভারতের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৬ রান করেছিলেন যদিও তা শিরোপা জয়ের জন্য যথেষ্ঠ হয়নি।
৬ নম্বরে আছেন অলরাউন্ডার ম্যাক্সওয়েল, যিনি ফাইনালে অজিদের পক্ষে জয়সূচক রান নিয়েছিলেন।
ম্যাক্সওয়েল রাউন্ড রবিনে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে বিশ্বকাপে দ্রুততম সেঞ্চুরিতে ৪৪ বলে ১০৬ রান করেছিলেন, ওই ম্যাচে অজিরা ৩০৯ রানের জয় পায় যা ব্যবধান হিসেবে টুর্নামেন্টের ইতিহাসে সবচেয়ে বড়।
তিনি আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে সমানভাবে প্রভাবশালী ছিলেন, তার ২০১ রানের অপরাজিত অতিমানবীয় ইনিংস সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার জায়গা নিশ্চিত করেছিল।
ভারতের জাদেজা বল নিয়ে মুগ্ধ করে এই একাদশে দ্বিতীয় অলরাউন্ডার হিসেবে স্থান পাকা করে নিয়েছেন, বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে যখন তিনি যুবরাজ সিংয়ের পরে ওডিআই বিশ্বকাপে পাঁচ উইকেট নেওয়া দ্বিতীয় ভারতীয় স্পিনার হন।
জাদেজা প্রোটিয়াদের সাথে ম্যাচের তিন দিন পর নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে দুই উইকেট নিয়ে আরও একটি ইতিহাস তৈরি করেন। এই দুই উইকেট দিয়ে তিনি ভারতীয় স্পিনারদের মধ্যে বিশ্বকাপে সর্বাধিক উইকেটে হরভজন সিং এবং অনিল কুম্বলেকে ছাড়িয়ে যান।
রোহিত শর্মার মতো জাসপ্রীত বুমরাহও দ্বিতীয় বারের মতো সেরা একাদশে জায়গা করে নিয়েছেন। ২০ উইকেট নেওয়া এই ভারতীয় নতুন বলে ভারতের মূল অস্ত্র ছিলেন। বুমরাহ অস্ট্রেলিয়ার মিচেল মার্শ এবং স্টিভেন স্মিথ এর উইকেট তুলে নিয়ে ভারতকে ফাইনালে নাটকীয় লড়াইয়ের মঞ্চ তৈরি করে দিয়েছিলেন।
৯ নম্বরে রয়েছেন শ্রীলঙ্কান সুপারস্টার মাদুশঙ্কা, যিনি ভারতের বিরুদ্ধে ৮০ রানে পাঁচ উইকেট নিয়ে বিশ্ব মঞ্চে নিজেকে ঘোষণা করেছিলেন।
এছাড়াও লিগ পর্যায়ে, বাঁহাতি এই পেসার নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে চারটি, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিনটি এবং পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুটি করে উইকেট নিয়ে ইতিমধ্যেই মুগ্ধ করেছিলেন, উইকেট নেওয়ার তালিকায় তিনি তৃতীয় স্থানে ছিলেন।
পুরো টুর্নামেন্টে ২৩টি উইকেট নিয়ে বিশ্বের সেরা ব্যাটারদের নাকানি চুবানি খাওয়ানো জাম্পা আছেন ১০ নম্বরে।
তিনি শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান এবং নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে টানা তিনটি ম্যাচে চার উইকেট নিয়েছিলেন যা অজিদের সেমিতে যাওয়ার পথ সুগম করেছে। ফাইনালে বুমরাহর উইকেট নেওয়ার পরে, স্পিনার জাম্পা এক বিশ্বকাপে মুত্তিয়া মুরালিধরনের ২৩ উইকেট নেওয়ার রেকর্ডটি স্পর্শ করেন।
লাইন-আপের ১১ নম্বর খেলোয়াড় হিহসেবে রয়েছেন মোহাম্মদ শামি। যিনি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালে সাত উইকেটের সাফল্যের পর বিশ্বকাপের নকআউট খেলায় যেকোনো বোলারের সেরা পরিসংখ্যান রেকর্ড করেছিলেন। এই পারফরম্যান্স ছাড়াও শামি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে (৫/৫৪) এবং শ্রীলঙ্কার (৫/১৮) মন্ত্রমুগ্ধকর প্রদর্শন শামিকে উইকেট চার্টের শীর্ষে যেতে সাহায্য করেছিল।
এবং ১২তম ব্যক্তি হিসেবে একাদশে আছেন জেরাল্ড কোয়েটজি, যিনি তার আইসিসি টুর্নামেন্টে অভিষেকের প্রতিটি ম্যাচেই উইকেট নিয়েছেন।
মন্তব্য করুন