গতকাল আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে ফাইনাল ম্যাচে ভারতের জয় প্রত্যাশিত ছিল দেশটির ১৪০ কোটি মানুষের। জয় প্রত্যাশা করে পুরো দেশজুড়ে নেওয়া হয়েছিল ব্যাপক প্রস্তুতি, সঙ্গে ছিল হাজারো আয়োজন। নিজ দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ জিতবে দল, সেই প্রত্যাশা বুঁদ হয়ে ছিল পুরো ভারত। কিন্তু সাউথ অস্ট্রেলিয়ার ট্রাভিস হেডই সব আয়োজনে জল ঢালল। ফাইনালে ভারতকে একাই হারালেন হেড। ১৩৭ রানের ম্যারাথন ইনিংসে আরও একবার স্বপ্নভঙ্গ হলো ভারতের। প্যাট কামিন্স ম্যাচের আগেই বলেছিলেন, পুরো স্টেডিয়াম স্তব্ধ করতে চান তিনি। তবে এদিন যেন চুপ হয়ে গেছে পুরো দেশটাই।
ভারতের এমন হারের পর যেমন গ্যালারিতে হয়েছে নিশ্চুপ, তেমনি সচল হয়েছে ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলো। অস্ট্রেলিয়ার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সকে প্রশংসা করার পাশাপাশি ভারতীয় মিডিয়া শুরু করে দিয়েছে ফাইনাল হারার কারণ অনুসন্ধান। অনেকেই দোষারোপ করেছেন সাদামাটা বোলিংকে। কেউ দোষ দিচ্ছেন বাজে ফিল্ডিংয়ের। আবার ব্যাট হাতে লোকেশ রাহুল বা বিরাট কোহলির ধীরগতির ইনিংসের সমালচোনাও হচ্ছে। সমালোচনা থেকে বাদ যাননি অধিনায়ক রোহিত শর্মাও।
পশ্চিমবঙ্গের বহুল জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার ম্যাচ হারের পেছনে কারণ অনুসন্ধানে দায় খুঁজে পেয়েছেন ৫ ক্রিকেটারের। অধিনায়ক রোহিত শর্মা কেন অশ্বিনকে খেলাননি সেই প্রশ্ন তুলেছে তারা। এ ছাড়া যেভাবে তিনি আউট হয়েছেন তার সমালোচনাও করেছে পত্রিকাটি। কাঠগড়ায় তুলেছে লোকেশ রাহুল আর শ্রেয়াশ আইয়ারকেও। রাহুল খেলেছেন ধীরগতির ইনিংস আর ফাইনালে অল্পেই আউট হয়েছেন আইয়ার।
ভারতের হয়ে এদিন সবচেয়ে বেশি ৬৬ রান করেছেন রাহুল। কিন্তু তার জন্য ১০৭ বল খেলেছেন তিনি। মাত্র একটি চার মেরেছেন। মাঝের ওভারে রাহুলের জন্যই রানের গতি কমে গিয়েছিল ভারতের। একই কথা উঠে এসেছে টাইমস অব ইন্ডিয়ার লেখাতেও। ১১ থেকে ৪০ ওভারে মাত্র দুই বাউন্ডারি বের কড়ায় তারা সমালোচনা করেছে ভারতীয় ব্যাটারদের।
এনডিটিভিও তাদের প্রতিবেদনে খানিকটা দায় চাপিয়েছে অধিনায়ক রোহিতের ওপরেই। ওয়ানডেতে টানা ব্যর্থতার পরেও সূর্যকুমার যাদবকে কেন সমর্থন দেওয়া হচ্ছে, তা উঠে এসেছে তাদের আলোচনায়। আবার মোহাম্মদ সিরাজকে বাদ দিয়ে নতুন বলে মোহাম্মদ শামিকে আনার সমালোচনাও করেছে তারা। এবারের বিশ্বকাপে শামি সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হলেও সেটা ছিল পুরাতন বলের কল্যাণে। কিন্তু, ফাইনালে কেন তাকে নতুন বলে আনা হলো সেই সমালোচনায় মুখর হয়েছে তারা।
আবার অনেক সংবাদমাধ্যম এসব সমালোচনার বাইরে কেবল ম্যাচ রিপোর্টের মাধ্যমেই শেষ করেছে পুরো কাজ। পুরো দেশের মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে ভারতের আরও কিছু মিডিয়ায়। অনেক প্রভাবশালী পত্রিকাতেই ছিল না কোনো ম্যাচপরবর্তী আয়োজন।
টাইমস অব ইন্ডিয়া অবশ্য তাদের প্রতিবেদনে অজি ক্রিকেটারদের সাফল্য নিয়েই নিজেদের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ট্রাভিস হেডের দুর্দান্ত ইনিংস। অস্ট্রেলিয়ান ফিল্ডার এবং বোলারদের সাফল্যই প্রাধান্য পেয়েছে তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদনে। পুরো লেখায় ভারতের গল্পটা যেন ম্লান হয়ে ছিল। শুধু বিরাট কোহলি আর রাহুলের ধীরগতির মাঝের ওভার নিয়ে আলোচনায় ছিল ভারতের অন্যতম শীর্ষ এই পত্রিকাটি।
এ ছাড়া সপ্তম ওভারের পর ভারতের বোলাররা আর কোনো প্রকারের প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি। বোলারদের ওপরেও সেই দায় চাপিয়েছে ভারতের অনেক সংবাদমাধ্যম। পুরো বিশ্বকাপে ভালো খেললেও ফাইনালের এমন বাজে বোলিংয়ের জন্য সমালোচনা সইতে হচ্ছে শামি-বুমরাহদের।
মন্তব্য করুন