ভারতের মাটিতে বিশ্ব ক্রিকেটের মহারণ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বিশ্বকাপ মিশন শুরু হচ্ছে আজ। বাংলাদেশ এবার পুরো আসরজুড়ে ভারতের ৬টি শহরের স্টেডিয়ামে খেলবে, এর মধ্যে প্রথম দুই ম্যাচের জন্য বাংলাদেশের রণক্ষেত্র হিমাচল প্রদেশের নান্দনিক এক স্টেডিয়াম । হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়াম এইচপিসিএ স্টেডিয়াম নামেও পরিচিত হলে সাধারণ মানুষের কাছে এই স্টেডিয়ামটির পরিচিতি ধর্মশালা স্টেডিয়াম নামেই।
আজ ১১টায় বাংলাদেশ-আফগানিস্তানের ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপের উন্মাদনা শুরু হবে এই স্টেডিয়ামেও। এখন ম্যাচ শুরুর আগে জেনে নেওয়া যাক এই স্টেডিয়াম সম্পর্কে।
ধর্মশালাকে হিমাচল প্রদেশের দ্বিতীয় রাজধানী বলা হয়। তিব্বতের দালাইলামার বাড়ি হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে এ শহরটি পরিচিত। বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের জন্য শহরটির পরিচয় রয়েছে। শুধু তাই নয়, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত ক্রিকেট স্টেডিয়াম এটি। স্টেডিয়ামে বসে সারা বছরই বরফ আচ্ছাদিত হিমালয় পর্বতের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখা যায়।
হিমাচল প্রদেশের কানগ্রা জেলায় স্টেডিয়ামটি অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৪৫৭ মিটার উঁচুতে স্টেডিয়ামটির অবস্থান। এর পেছনে রয়েছে হিমালয় পর্বত। তবে স্টেডিয়ামটি দর্শক ধারণক্ষমতা অনেক কম, মাত্র ২৩ হাজার।
ভারতের জাতীয় ক্রিকেট একাডেমির সাবেক ডিরেক্টর ডেভ হোয়াটমোর তার দায়িত্বকালে স্টেডিয়ামটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের জন্য উপযোগী বলে সুপারিশ করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালে সফরকারী পাকিস্তান ক্রিকেট দল ভারতের ‘এ’ দলের সঙ্গে একটা প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছিল এখানে।
এর প্রায় আট বছর পর এখানে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচে আয়োজন করা হয়। স্বাগতিক ভারতের মুখোমুখি হয়েছিল ইংল্যান্ড। সফরকারী দল ৭ উইকেটে জয় পেয়েছিল।
২০১৫ সালে এই স্টেডিয়ামটি টেস্ট ম্যাচ আয়োজনের অনুমতি পায়। এরপর ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো টেস্ট ম্যাচ আয়োজন করা হয়। তবে করোনা মহামারির পর এখানে আর কোনো ওয়ানডে ম্যাচ মাঠে গড়ায়নি।
বস্তুত ধর্মশালা এবারের বিশ্বকাপে মোট পাঁচটি ম্যাচ আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছে, যে সৌভাগ্য ভারতের অনেক বড় বড় ক্রিকেট মাঠেরও হয়নি। এই ম্যাচগুলো হলো বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তান (৭ অক্টোবর), বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ড (১০ অক্টোবর), দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম নেদারল্যান্ডস (১৭ অক্টোবর), ভারত বনাম নিউজিল্যান্ড (২২ অক্টোবর) আর অস্ট্রেলিয়া বনাম নিউজিল্যান্ড (২৮ অক্টোবর)।
এই স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে জয় এসেছে কেবল এক ম্যাচে। আর পরে ব্যাট করে জয়ের সংখ্যা ৩ ম্যাচে। ম্যাচ বাই ম্যাচ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ধর্মশালার এই পিচে রান তোলা বেশ কষ্টের। এখন পর্যন্ত ২০০ এর নিচে অলআউট হওয়ার ঘটনা ঘটেছে ৪ বার।
২০০ থেকে ২৫০ এর মাঝে রান এসেছে ২ বার। একবারই কেবল ৩০০-এর বেশি রান দেখেছে এই মাঠ। সবমিলিয়ে ধর্মশালার এই স্টেডিয়ামে প্রথম ইনিংসে গড় স্কোর ২১৪ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে গড় স্কোর ২০১।
উচ্চতার কারণে এখানে বলের গতিতে বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকেন বোলাররা। সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ মাসে শিশিরের প্রভাব চোখে আসে। যে কারণে এই মাঠে টস জিতে পরে ব্যাট করার সিদ্ধান্তই গ্রহণ করেন বেশিরভাগ অধিনায়ক।
এই মাঠে বাংলাদেশ এর আগে ওয়ানডে না খেললেও খেলেছে টি-টোয়েন্টি। আর সেখানে আছে মনে রাখার মতো দারুণ এক স্মৃতি। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এই মাঠেই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশের একমাত্র সেঞ্চুরিই আসে। ওমানের বিপক্ষে সেদিন শতক হাঁকিয়েছিলেন তামিম ইকবাল।
বাংলাদেশের ইচ্ছা থাকবে সেই ম্যাচের স্মৃতি আজ ও ১০ তারিখের ম্যাচে ফেরত নিয়ে আসার।
মন্তব্য করুন