মোহামেডানের অধিনায়ক তাওহীদ হৃদয়কে ঘিরে সাম্প্রতিক বিতর্কের অবসান ঘটাল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ক্রিকেটারদের তীব্র আপত্তির মুখে হৃদয়ের বাকি থাকা এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা এক বছরের জন্য স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বোর্ড। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, হৃদয় তাঁর বাকি এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা ভোগ করবেন ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের পরের আসরের প্রথম ম্যাচে। তার মানে অবশিষ্ট শাস্তি পিছিয়ে গেছে এক বছর।
এর আগে হৃদয়ের দুই ম্যাচ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে একটি ম্যাচ তিনি ভোগ করলেও পরবর্তী দুই ম্যাচে তাকে খেলতে দেখা যায়। পরে আবারো তাকে এক ম্যাচের জন্য বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত ঘিরে প্রশ্ন তোলে ক্রিকেটাররা। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে মিরপুরে তামিম ইকবালের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার বিসিবি সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করেন।
তাদের দাবি ছিল, একই ঘটনার জন্য দুই দফায় শাস্তি দেওয়া আইনগত ও নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। আলোচনা শেষে বিসিবি সিদ্ধান্ত নেয়, হৃদয়ের বাকি থাকা এক ম্যাচের বহিষ্কারাদেশ এক বছরের জন্য স্থগিত থাকবে।
এর ফলে তাওহীদ হৃদয়ের বিরুদ্ধে আর কোনো বাধা রইল না—এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সুপার লিগে মোহামেডানের হয়ে বাকি দুই ম্যাচেই খেলতে পারবেন তিনি। শনিবারই মিরপুরে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে মাঠে নামছে মোহামেডান, সেই ম্যাচেও দেখা যাবে হৃদয়কে।
সুত্রের বরাত দিয়ে দেশের একটি গণমাধ্যম জানায়, গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাতে সিসিডিএমের টেকনিক্যাল কমিটি হৃদয়ের শাস্তি কমানোর সিদ্ধান্ত বাতিল করেছিল। তাদের দাবি ছিল—নিয়ম মেনে এই সিদ্ধান্ত হওয়া দরকার ছিল, যা হয়নি। তাই টেকনিক্যাল কমিটি নতুন করে সিদ্ধান্ত নেয়, হৃদয় শনিবারের ম্যাচে মাঠে নামতে পারবেন না। তবে আজ ক্রিকেটারদের ব্যাপক চাপে সেই সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয় বোর্ড। এখন নতুন নিয়ম অনুযায়ী, হৃদয় তার বহিষ্কারের বাকি এক ম্যাচের শাস্তি ভোগ করবেন আগামী বছর প্রিমিয়ার লিগের প্রথম ম্যাচে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটে এরকম ঘটনা বিরল নয়, তবে একটি চলমান টুর্নামেন্টের টেকনিক্যাল কমিটির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ক্রিকেটারদের চাপে সরাসরি বাতিল করার নজির আন্তর্জাতিক পর্যায়েও প্রায় নেই।
এ নিয়েও রয়েছে নানা বিতর্ক। অভিযোগ রয়েছে, এর আগে মোহামেডানের চাপেই হৃদয়ের দুই ম্যাচের বহিষ্কার কমিয়ে এক ম্যাচ করা হয়েছিল, যা নিয়ে বিসিবির আম্পায়ার্স কমিটি বিভক্ত হয়ে পড়ে। এমনকি এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে পদত্যাগ করেছিলেন দেশের একমাত্র এলিট আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ। যদিও আম্পায়ার্স কমিটির প্রধান ইফতেখার রহমান দাবি করেছিলেন, শরফুদ্দৌলা নিজ ইচ্ছেতেই মত বদলেছেন। তবে বাস্তবতা বলছে, আজকের ঘটনার পর তার ফেরার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
এদিকে মিরপুরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তামিম বলেন, ‘হৃদয় তার শাস্তি ভোগ করেছে। সে একটি ম্যাচ খেলেনি, এরপর দুইটা ম্যাচ খেলেছে। এখন হঠাৎ করে আবার জানানো হলো, তাকে আবার বহিষ্কার করা হচ্ছে! এটা কোন আইনে সম্ভব? বিসিবি তাকে খেলতে দিয়েছে, এরপর আবার বহিষ্কার—এটা তো রীতিমতো হাস্যকর।’
তামিমের নেতৃত্বে ক্রিকেটারদের একতাবদ্ধ প্রতিবাদ যে বিসিবিকে নরম হতে বাধ্য করেছে, তা স্পষ্ট। এখন দেখার বিষয়, সামনে বিসিবি তাদের সিদ্ধান্তে কতটা স্থির থাকে।
মন্তব্য করুন