সিলেট টেস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে লজ্জাজনক হার দিয়ে শুরু করল বাংলাদেশ। ম্যাচের বেশিরভাগ সময় ছন্নছাড়া পারফরম্যান্স আর গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ব্যর্থতা—সব মিলিয়ে ঘরের মাঠে নিজেদেরই হারিয়ে খুঁজেছে টাইগাররা। এই নাটকীয় টেস্টের চতুর্থ দিনের শেষ দৃশ্যটা ছিল চরম হতাশার। রোমাঞ্চ আর উত্তেজনার রঙে রাঙানো ম্যাচে শেষ হাসি হাসল সফরকারী জিম্বাবুয়ে, যারা শেষবার টেস্ট জিতেছিল ২০২১ সালের মার্চে। আর বাংলাদেশের মাটিতে এই জয় তাদের ২০১৮ সালের পর প্রথম।
প্রথম ইনিংসেই বাংলাদেশের পতনের বীজ রোপিত হয়েছিল। ব্যাটারদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতায় ১৯১ রানে গুটিয়ে যায় প্রথম ইনিংস। শান্ত, মমিনুল, জাকের আলী চেষ্টা করলেও একা লড়াইতে কাজ হয়নি। এরপর জিম্বাবুয়ে তাদের প্রথম ইনিংসে তোলে ২৭৩ রান, যেখানে বেনেট, উইলিয়ামস ও মায়াভোদের কার্যকর ইনিংস ম্যাচের ভিত্তি তৈরি করে।
এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে যখন ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ ছিল, তখনও বাংলাদেশের শুরুটা ছিল নড়বড়ে। তবে শান্ত-মমিনুল জুটি কিছুটা আশা জাগায়, এরপর জাকের আলীর দারুণ হাফসেঞ্চুরি দলের রানে রঙ চড়ালেও তা যথেষ্ট ছিল না। শেষ পর্যন্ত ২৫৫ রানে অলআউট হয়ে বাংলাদেশ জিম্বাবুয়েকে দেয় ১৭৪ রানের লক্ষ্য।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে সফরকারীদের শুরুটা ছিল দারুণ ঝড়ো। বেনেট-ক্যারানরা যেন আগুনে ব্যাট চালাতে থাকেন। তবে তখনই ম্যাচে নাটকীয় মোড় নেয়। একসময় উড়তে থাকা জিম্বাবুয়ে দ্রুত উইকেট হারিয়ে জিম্বাবুয়ে দাঁড়ায় সংকটে। সেখান থেকেই মাদেভেরের সাহসী ব্যাটিং, সাথে মাসাকাদজা ও নগারাভার কার্যকর ক্যামিও জিম্বাবুয়েকে এনে দেয় ৩ উইকেটের ঐতিহাসিক জয়।
এই হারে ভেঙে পড়েছে বাংলাদেশ শিবির। এই ম্যাচটিকে তারা ভাবতেই পারে ‘হারানোর টেস্ট’। কারণ, পরিসংখ্যান বলছে—ঘরের মাঠ, স্পিন সহায়ক উইকেট, প্রতিপক্ষ টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে অনেক নিচে, তারপরও এই ব্যর্থতা কোনোভাবেই মানা যাচ্ছে না।
বিশেষ করে মিরাজের মতো একজন স্পিনার যখন ১০ উইকেট শিকার করেন, মমিনুল করেন ফিফটি, শান্ত ফেরেন ফর্মে—তখন এতবড় হারের কোনো ব্যাখ্যা থাকতে পারে না। এই হার মনে করিয়ে দেয়, টেস্ট ক্রিকেট এখনও ‘সাহস, ধৈর্য আর পরিকল্পনার খেলা’। আর এই তিনটি জায়গাতেই পিছিয়ে বাংলাদেশ।
এখন সামনে চট্টগ্রাম টেস্ট। তবে প্রশ্নটা রয়ে গেল—এই লজ্জা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে কতটা প্রস্তুত টাইগাররা? ঘরের মাঠে এমন হারের পর আত্মবিশ্লেষণের বিকল্প যে নেই!
মন্তব্য করুন