জীবন-মৃত্যুর দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেট তারকা তামিম ইকবাল। হার্ট অ্যাটাকের পর দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়, যেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার হার্টে ব্লক ধরা পড়ে এবং জরুরি ভিত্তিতে রিং পরানো হয়। বর্তমানে শঙ্কামুক্ত হলেও, চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন তিনি।
তবে প্রথমে যখন খবরটি ছড়িয়ে পড়ে, অনেকের কাছেই সেটি ছিল ভীষণ বিভ্রান্তিকর ও আতঙ্কজনক। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক ও তামিমের চাচা আকরাম খান জানালেন, তিনি শুরুতে এমন এক খবর শুনেছিলেন, যা তাকে স্তব্ধ করে দেয়।
বুধবার (২৬ মার্চ) মিরপুরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে আকরাম খান বললেন, ‘খবরটা যখন পেলাম, বিশ্বাস করতে পারিনি। প্রথমেই বলা হয়েছিল, তামিম আর নেই। কল্পনাও করতে পারিনি এমন কিছু শুনব! আমি হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম, কিছুক্ষণ কোনো কিছু বোঝার অবস্থায় ছিলাম না। প্রায় ঘণ্টাখানেক বাসায় বসে ছিলাম, মানসিকভাবে খুবই ভেঙে পড়েছিলাম।’
কিছুক্ষণ পর যখন চিকিৎসকদের কাছ থেকে ফোন আসে, তখন কিছুটা স্বস্তি পান আকরাম।
‘ডাক্তাররা জানালেন, রিং পরানোর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তখন বুঝলাম, বেঁচে থাকার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু ভাবতেই পারছিলাম না, কয়েকদিন আগেও যে ছেলেটা মাঠে দুইটা সেঞ্চুরি করল, সে আজ জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে! শুধু আমি না, পরিবারের সবাই প্রচণ্ড ভেঙে পড়েছিল,’ বলেন তিনি।
তামিমের সুস্থতা নিয়ে আকরাম খান আরও বলেন, ‘তামিম যে অবস্থা থেকে ফিরে এসেছে, সেটা একমাত্র সৃষ্টিকর্তার রহমত। সবাই দোয়া করেছেন, শুভকামনা জানিয়েছেন, এজন্য আমরা কৃতজ্ঞ। চিকিৎসকরা বলেছেন, এ ধরনের রোগীদের ফিরে আসার সম্ভাবনা খুব কম থাকে। আমরা আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ যে, সে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে।’
তবে পুরোপুরি সুস্থতার জন্য তামিমকে বিদেশে পাঠানোর পরিকল্পনাও রয়েছে। ‘আমরা দুশ্চিন্তা রাখতে চাই না। পারিবারিক সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে তাকে যত দ্রুত সম্ভব বিদেশে নিয়ে গিয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হবে,’ জানান আকরাম।
গত সোমবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) মোহামেডানের হয়ে খেলতে নামার পর হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করেন তামিম। দ্রুত সাভারের কেপিজে স্পেশালাইজড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জানা যায়, তিনি দুইবার হার্ট অ্যাটাকের শিকার হয়েছেন। পরে তার হার্টে ব্লক ধরা পড়লে রিং পরানো হয়।
বর্তমানে তামিম রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাকে অন্তত তিন মাস পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। এরপরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তিনি কবে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ওপেনার তামিম ইকবালের দ্রুত সুস্থতা কামনায় এখন শুধু পরিবার নয়, তার ভক্তরাও প্রার্থনায় মগ্ন। বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য এটি শুধুই একজন খেলোয়াড়ের অসুস্থতার খবর নয়, বরং পুরো দেশের আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক ক্রিকেটারের নতুন জীবন ফিরে পাওয়ার গল্প।
মন্তব্য করুন