জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল ম্যাচচলাকালীন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিক তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পর হার্ট অ্যাটাকের বিষয়টি নিশ্চিত হন চিকিৎসকরা। দ্রুততম পদক্ষেপে তার হার্টে রিং পরান হয়। ফলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পান তামিম। এখন জনমনে নতুন করে প্রশ্ন জেগেছে আসলেই হার্টে রিং পরাতে কতক্ষণ লাগে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে আলোচনাও চলছে।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের হৃদ্রোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আবরার কায়সার জানান, হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে রোগীর যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসার সব ব্যবস্থার প্রয়োজন হয়। তবে রোগীর এনজিওগ্রামের মাধ্যমে আক্রান্ত আক্রান্ত রক্তনালিতে রিং পরাতে (স্টেন্টিং) খুব বেশি সময় লাগে না। তবে এক্ষেত্রে রোগীর জটিলতার বিষয়টি খেয়াল করতে হয়। আন্তর্জাতিকভাবে এটিই হার্ট অ্যাটাকের আদর্শ চিকিৎসাপদ্ধতি।
আমাদের সাধারণত অনেক রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসতে দেরি হয়। এছাড়া সব হাসপাতাল বা ক্লিনিকে এনজিওগ্রাম এবং স্টেন্টিংয়ের ব্যবস্থা থাকে না। ফলে অনেক ক্ষেত্রে দেরি বা রোগীর দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
উল্লেখ্য, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের (ডিপিএল) এক ম্যাচ চলাকালীন মাঠেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তামিম। পরে জানা যায়, স্বল্প সময়ের ব্যবধানে দুইবার হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন এই তারকা ব্যাটসম্যান। জরুরি চিকিৎসার পর তার হার্টে রিং বসানো হয়।
সাভারে তামিম যে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন সেই কেপিজি বিশেষায়িত হাসপাতালের পরিচালক ডা. রাজিব চিকিৎসাসংক্রান্ত সর্বশেষ তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘তামিম ইকবাল ভাই আজকে সকালে সাড়ে ৯টার দিকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওই অবস্থায় তাকে এখানে আনা হয় এবং চিকিৎসা শুরু হয়। পরবর্তীতে চিন্তা করি যে তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া যাবে না। বিভিন্ন কারণে ঢাকায় নেওয়া যায়নি। পরবর্তীতে তার অবস্থা ক্রিটিক্যাল হয়ে যায়। ওই অবস্থায়ই তিনি আবার আসেন। ওই ক্রিটিক্যাল কন্ডিশন থেকে যতগুলো চিকিৎসা প্রয়োজন, সব কিছু করা হয়েছে।
তিনি জানান, আল্লাহর রহমতে কন্ডিশন এখন অনুকূলে আছে। তার একটা হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। তাই একটা এনজিওগ্রাম, এনজিওপ্লাস্টি ও একটা স্টেন্ট করা হয়েছে। আল্লাহর রহমতে উনার স্টেন্টিং খুব স্মুদলি ও এফিশিয়েন্টলি হয়েছে। ডাক্তার মারুফ এই স্টেন্টিং করেছেন। এখন ওই ব্লকটা পুরোপুরি চলে গেছে। আমরা যেমনটা বলছিলাম, একটু ক্রিটিক্যাল কন্ডিশনে ছিল, স্টেন্টিংয়ের পর এখন পর্যবেক্ষণে আছেন। ক্রিটিক্যাল অবস্থা এখনও কাটেনি। একটু সময় লাগবে। আমরা সবাই প্রাণপণ চেষ্টা করছি।’
এদিকে, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক মাহবুবুল আনাম বলেছেন, ‘প্রত্যেকটি ধাপে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা তামিমের সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমরা তার দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।’
এছাড়া, তামিম ইকবালের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকেও একটি পোস্টে ঘটনার বিস্তারিত জানানো হয়। পোস্ট অনুযায়ী, টসের পর হালকা বুকে ব্যথা অনুভব করলে তিনি দলের ফিজিও ও ট্রেইনারকে বিষয়টি জানান। প্রথমে গ্যাস্ট্রিকজনিত সমস্যা মনে করায় তিনি ওষুধ গ্রহণ করেন, তবে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় সতর্কতার অংশ হিসেবে নিকটস্থ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তিনি বিকেএসপিতে ফেরেন।
তবে শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটলে দ্রুত বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হয়। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ম্যানেজার শিপনের পরামর্শে হেলিকপ্টারে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তরের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কিন্তু অবস্থার গুরুতর অবনতি হলে তাকে দ্রুত সাভারের কেপিজি হাসপাতালে নেওয়া হয়, যেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর হার্টে ব্লক শনাক্ত হয় এবং তাৎক্ষণিক এনজিওগ্রাম ও রিং বসানো হয়।
মন্তব্য করুন