বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে এক নাম, এক আবেগ—তামিম ইকবাল। যিনি প্রতিটি শটে তৈরি করেছেন একেকটি অধ্যায়, প্রতিটি ইনিংসে লিখেছেন নতুন ইতিহাস। আজ, ২০ মার্চ, ৩৭ বছরে পা দিলেন টাইগারদের এই কিংবদন্তি ওপেনার।
তবে এবারের জন্মদিনটি একটু আলাদা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দীর্ঘ ১৭ বছরের পথচলা শেষে চলতি জানুয়ারিতে সব ধরনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় জানিয়েছেন তামিম। ব্যাট হাতে দেশের জন্য একের পর এক সাফল্যের গল্প লেখা ক্রিকেটারের প্রথম জন্মদিন এটি, যখন তিনি আর বাংলাদেশের জার্সিতে নেই। তবু তার কীর্তিগাঁথা থেকে যাবে ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয়ে, বিস্তৃত থাকবে স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে কিংবা সেই মুহূর্তগুলোয়, যখন বাংলাদেশ কোনো দুঃসময়ে ভুগবে ব্যাটিংয়ে, তখনই মনে পড়বে তামিমের লড়াকু ইনিংসগুলোর কথা।
২০০৭ সালে অভিষেকের পর থেকেই বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং লাইনআপের অন্যতম বড় ভরসার নাম হয়ে ওঠেন তামিম ইকবাল। ৭০টি টেস্ট, ২৪৩টি ওয়ানডে ও ৭৮টি টি-টোয়েন্টি খেলে দেশের ক্রিকেটকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।
ওয়ানডেতে ৮,৩১৩ রান করে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি। এছাড়া টেস্টে করেছেন ৫,১৩৪ রান এবং টি-টোয়েন্টিতে ১,৭৫৮ রান। তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ২৫টি সেঞ্চুরি ও ৯৪টি হাফ-সেঞ্চুরি আছে।
তামিমের কিছু স্মরণীয় ইনিংস
তামিম ইকবালের ব্যাট থেকে এসেছে অসংখ্য ম্যাচ জেতানো ও ঐতিহাসিক ইনিংস। কিছু ইনিংস আজও ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে দাগ কেটে আছে।
২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ৫১ রানের ইনিংস
বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ৫১ বলে ৫১ রানের দুঃসাহসী ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে ঐতিহাসিক জয় এনে দেন তামিম। তার সে ম্যাচ জেতানো ইনিংস আজও মনে রাখে ক্রিকেটবিশ্ব।
২০১০ লর্ডস টেস্টে ১০৩ রান
বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে লর্ডসের বাইশ গজে সেঞ্চুরি করেন তামিম। তার ১০৩ রানের ঝলমলে ইনিংস ক্রিকেট বিশ্বে প্রশংসিত হয়।
২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১২৮ রান
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওভালে দুর্দান্ত ১২৮ রানের ইনিংস খেলে বাংলাদেশের ইনিংসের ভিত গড়ে দেন তিনি। সে বছর বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে ওঠার নেপথ্য নায়ক ছিলেন তিনিই।
২০১৯ বিশ্বকাপে ৬২ রান (ভারতের বিপক্ষে)
ভারতের বিপক্ষে ৬২ রানের ইনিংস খেলে তিনি বাংলাদেশকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিলেন। যদিও দল শেষ পর্যন্ত জিততে পারেনি, তবে তার লড়াকু ব্যাটিং আজও মনে রাখে টাইগার ভক্তরা।
২০২৩ সালের জুলাইয়ে এক আবেগঘন সংবাদ সম্মেলনে আকস্মিকভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন তামিম। তবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুরোধে সে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছিলেন তিনি। এরপর পিঠের চোটের কারণে ২০২৩ বিশ্বকাপে অংশ নিতে পারেননি। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে চূড়ান্তভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নেন।
ক্রিকেটের বাইরেও তামিম ইকবাল একজন দারুণ পারিবারিক মানুষ। স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকার সঙ্গে সুখী দাম্পত্য জীবনে তার এক পুত্রসন্তান রয়েছে। ক্রিকেট ছাড়লেও তরুণদের গড়ে তোলার কাজ করে যেতে চান তিনি।
বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবালকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। তার ব্যাটিং, তার লড়াই, তার প্রতিটি মুহূর্ত রয়ে যাবে টাইগার ভক্তদের হৃদয়ে চিরকাল। শুভ জন্মদিন, তামিম!
মন্তব্য করুন