বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির স্বপ্ন শেষ! ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হারের তিক্ত স্বাদ পেতে হয়েছে টাইগারদের। তবে এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ব্যর্থ হলেও মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে আস্থা হারাতে নারাজ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।
দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুই ব্যাটারই ব্যাট হাতে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছেন। চোট কাটিয়ে একাদশে ফেরা মাহমুদউল্লাহ ফিরেছেন মাত্র ৪ রানে, আর মুশফিক করেছেন ২! অথচ ম্যাচের মোড় ঘোরানোর দায়িত্ব ছিল এই দুই সিনিয়রের কাঁধেই।
ব্যাটিংয়ের সময় একপর্যায়ে ৯৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে লড়াইয়ের মতো অবস্থায় ছিল বাংলাদেশ। তবে এরপরই শুরু হয় ধস। অফ-স্পিনার মাইকেল ব্রেসওয়েলের তোপে মাত্র ২৬ রানে ৪ উইকেট হারায় টাইগাররা। বিশেষ করে মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহর উইকেট ছিল আত্মঘাতী!
মুশফিক অফ-স্টাম্পের বাইরে ফ্লাইটেড ডেলিভারিতে বড় শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন রাচিন রবীন্দ্রর হাতে। অন্যদিকে, মাহমুদউল্লাহও দায়িত্বহীন শটে ধরা পড়েন উইলিয়াম ও'রউর্কের কাছে। অথচ তার আগের চার ওয়ানডে ইনিংসে করেছিলেন টানা চারটি ফিফটি!
এই দুই ব্যর্থতার পরই প্রশ্ন উঠেছে—ফর্মের বাইরে থাকা মুশফিক ও ইনজুরি থেকে ফেরা মাহমুদউল্লাহর জায়গায় কি অন্য কাউকে সুযোগ দেওয়া যেত না? বিশেষ করে সৌম্য সরকারকে বাদ দেওয়া নিয়ে হয়েছে সমালোচনা।
তবে ম্যাচ শেষে এসব বিতর্ক উড়িয়ে দিলেন অধিনায়ক শান্ত। জানালেন, সিনিয়রদের প্রতি আস্থা হারানোর কারণ নেই।
‘আমাদের দলে স্বয়ংক্রিয় কোনো নির্বাচন নেই। সৌম্য ওপরে ব্যাট করে, আর রিয়াদ ভাই মিডল অর্ডারে। তাই তাকে খেলানো দরকার ছিল, কারণ তার শেষ কয়েকটি ইনিংসই ভালো ছিল। আর মুশফিক ভাইয়ের ফর্ম নিয়ে ভাবিনি, কারণ তার অভিজ্ঞতা ও উইকেটকিপিং আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ,’ বলেন শান্ত।
তিনি আরও যোগ করেন, ‘সিনিয়রদের আলাদা করে দেখার কিছু নেই। আমরা পুরো দল হিসেবেই ব্যর্থ হয়েছি। শুধু সিনিয়রদের দিকে আঙুল তুললে হবে না।’
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ ইনিংসে ১৭৯টি ডট বল খেলেছে, যা বড় পার্টনারশিপ গড়তে না পারার মূল কারণ বলে মনে করছেন শান্ত।
‘আমরা বারবার একই ভুল করছি। ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট হারানোটা বড় সমস্যা। যদি দুটি বড় জুটি গড়তে পারতাম, তাহলে ম্যাচের চিত্র ভিন্ন হতো,’ স্বীকার করেন তিনি।
বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল ৩০০ রানের বেশি স্কোর গড়া, কিন্তু পরিকল্পনা বাস্তবায়নেই ছিল বড় ঘাটতি। শান্ত বলেন, ‘আমাদের ব্যাটিং ও ফিল্ডিং ইউনিটে অনেক উন্নতি দরকার। শুধু স্বপ্ন দেখলে হবে না, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য কাজও করতে হবে।’
বাংলাদেশের বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে শান্ত বলেন, ‘আমরা শুধু অংশ নিতে আসিনি, জিততে এসেছিলাম। ফলাফল পক্ষে আসেনি, কিন্তু স্বপ্ন দেখতে তো বাধা নেই! তবে শুধু স্বপ্ন দেখলে হবে না, সেই অনুযায়ী পারফর্ম করতেও হবে।’
নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে বিদায় নেওয়ায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ফেব্রুয়ারির ২৭ তারিখে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচটি নিছক আনুষ্ঠানিকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এই ম্যাচের পর হয়তো বাংলাদেশের ক্রিকেটে নতুন অধ্যায় শুরু হতে যাচ্ছে, যেখানে মুশফিক-মাহমুদউল্লাহদের জায়গা নিয়েই উঠবে বড় প্রশ্ন!
মন্তব্য করুন