বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ২০২৫-এর সবচেয়ে আলোচিত দলগুলোর একটি দুর্বার রাজশাহী। পারিশ্রমিক বকেয়া, চেক বাউন্স, অনুশীলন বর্জন—নানা বিতর্কে নাম জড়ানো এই ফ্র্যাঞ্চাইজি আবারও নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এবার অভিযোগ উঠেছে, ঢাকায় বসবাসকারী ক্রিকেটারদের হোটেল ছেড়ে নিজ বাসায় চলে যেতে অনুরোধ করেছে রাজশাহীর ম্যানেজমেন্ট। কালবেলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে রাজশাহীর এক ক্রিকেটার।
সেই ক্রিকেটার কালবেলাকে বলেন, ‘মালিকপক্ষ থেকে জানানো হয়েছে খেলোয়াড়রা চাইলে যে যার বাড়িতে ঘুরে আসতে পারেন। অনেকেই হোটেল ছেড়েছেন। আমি হোটেলেই থাকছি। ১ তারিখের আগে আমাদের অনুশীলনও নেই। ২ তারিখ পারিশ্রমিকের টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।’
রাজশাহী ফ্র্যাঞ্চাইজির এমন সিদ্ধান্তকে অনেকে খরচ কমানোর কৌশল হিসেবে দেখলেও দলটির পক্ষ থেকে ভিন্ন ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। তাদের দাবি, কিছু ক্রিকেটার নিজ থেকেই হোটেল ছাড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, আর সেই অনুরোধের ভিত্তিতেই টিম ম্যানেজমেন্ট তিন দিনের বিরতি দিয়েছে। তবে যেসব খেলোয়াড় ঢাকার বাইরে থাকেন কিংবা বিদেশি ক্রিকেটার ও কোচিং স্টাফরা, তারা দলীয় হোটেলেই অবস্থান করবেন।
রাজশাহী টিম ম্যানেজমেন্ট এক বিবৃতিতে জানায়, ‘কয়েকজন ক্রিকেটারের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে, আমরা তাদের তিন দিনের বিরতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ঢাকায় যারা বসবাস করেন, তারা চাইলে এই সময়টায় নিজেদের বাসায় থাকতে পারবেন। তবে প্রয়োজনে তারা যেকোনো সময় টিম হোটেলে ফিরে আসতে পারবেন।’
চলমান বিপিএলে রাজশাহী ফ্র্যাঞ্চাইজির পারফরম্যান্স যেমন আলোচনার বিষয়, তেমনি মাঠের বাইরের ঘটনাগুলোও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
পারিশ্রমিক নিয়ে জটিলতা: দলের কয়েকজন ক্রিকেটার ও স্টাফদের অভিযোগ, এখনও তাদের পারিশ্রমিক পরিশোধ করা হয়নি। যদিও ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব পাওনা মিটিয়ে দেওয়া হবে।
চেক বাউন্স বিতর্ক: বিপিএলের শুরুতেই রাজশাহীর কিছু খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফদের চেক বাউন্সের ঘটনা ঘটে, যা নিয়ে বিসিবিও অবগত।
হোটেল বদলের রহস্য: ঢাকার দ্বিতীয় পর্বের ম্যাচ চলাকালীন রাজশাহী হুট করেই পাঁচতারকা হোটেল ওয়েস্টিন থেকে শেরাটনে চলে যায়। গুঞ্জন রয়েছে, আগের হোটেলের বিল পরিশোধে জটিলতা থাকায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
বিতর্কের মধ্যেই দুর্বার রাজশাহী এখনো প্লে-অফের দৌড়ে টিকে আছে। প্রথম রাউন্ডের ১২টি ম্যাচ শেষে ৬টি জয় নিয়ে দলটি বর্তমানে পয়েন্ট টেবিলের তৃতীয় স্থানে রয়েছে। যদিও তাদের ভাগ্য অনেকটাই নির্ভর করছে চিটাগাং কিংস ও খুলনা টাইগার্সের পারফরম্যান্সের ওপর।
আগামী ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজশাহী অপেক্ষায় থাকবে প্লে-অফ নিশ্চিত করার জন্য। এরপর ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পারিশ্রমিক সংক্রান্ত ঝামেলা মিটিয়ে দলটি মাঠের লড়াইয়ে পুরোপুরি মনোযোগ দিতে পারবে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
বিপিএল যেমন উত্তেজনার প্রতিযোগিতা, তেমনি মাঠের বাইরের নানা ঘটনাও এই টুর্নামেন্টকে রঙিন করে তোলে। তবে রাজশাহীর মতো একটি প্রতিযোগিতামূলক দল যদি অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত হয়, তাহলে ভবিষ্যতে বিপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি মডেল নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। এখন দেখার বিষয়, রাজশাহীর মালিকপক্ষ শেষ পর্যন্ত কীভাবে এই বিতর্ক সামলায় এবং মাঠে কেমন পারফরম্যান্স দেখায়!
মন্তব্য করুন