বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল অবশেষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বললেন। দীর্ঘ জল্পনা-কল্পনা আর গুঞ্জনের অবসান ঘটিয়ে শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) রাতে নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি অবসরের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। কিছুদিন ধরে তার ফেরার গুঞ্জন শোনা গেলেও তামিম বেছে নিলেন বিদায়ের পথ, যা অনেক ভক্তের কাছে কিছুটা অপ্রত্যাশিত। এর আগে, ২০২৩ সালের জুলাইয়ে নাটকীয়ভাবে অবসর ঘোষণা করে আবারও ফিরেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে। তবে এবার তামিমের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলেই জানান।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল ওপেনার তামিম ইকবালের বিদায়ের মাধ্যমে শেষ হলো টাইগার ক্রিকেটে তার অধ্যায়। দীর্ঘদিনের গুঞ্জন ও প্রত্যাবর্তনের আলোচনা শেষে, নিজের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে শুক্রবার রাতে ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি জানালেন, আর কখনো দেশের জার্সিতে দেখা যাবে না তাকে।
আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি সামনে রেখে বাংলাদেশ দলে তামিমকে ফেরানোর চেষ্টা করেছিল বিসিবি। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও নির্বাচক কমিটি আন্তরিকভাবেই তাকে ফেরাতে উদ্যোগ নেয়। সিলেটে নির্বাচক কমিটির সঙ্গে আলোচনা শেষে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন জানিয়েছিলেন, তামিম পরিবার ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে কথা বলে তার সিদ্ধান্ত জানাবেন। অবশেষে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের সিদ্ধান্ত পরিষ্কার করলেন এই তারকা ওপেনার।
কালবেলার পাঠকের উদ্দেশ্যে তামিমের ফেসবুক স্টাটাস হুবুহ তুলে ধরা হলো, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দূরে আছি অনেক দিন ধরেই। সেই দূরত্ব আর ঘুচবে না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমার অধ্যায় শেষ। অনেক দিন ধরেই এটা নিয়ে ভাবছিলাম। এখন যেহেতু সামনে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো বড় একটি আসর, আমি চাই না আমাকে ঘিরে আবার আলোচনা হোক এবং দলের মনোযোগ ব্যাহত হোক।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘এটা অবশ্য আগেও চাইনি। চাইনি বলেই অনেক আগে নিজেকে বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে সরিয়ে নিয়েছি। যদিও অনেকেই বলেছেন, অনেক সময় মিডিয়ায় এসেছে, আমিই নাকি ব্যাপারটি ঝুলিয়ে রেখেছি। কিন্তু বিসিবির কোনো ধরনের চুক্তিতে যে নেই, এক বছরের বেশি সময় আগে যে নিজ থেকে সরে দাঁড়িয়েছে, তাকে পরিকল্পনায় রাখা বা তাকে নিয়ে আলোচনারও তো কিছু নেই। তারপরও অযথা আলোচনা হয়েছে। অবসর নেওয়া বা খেলা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত একজন ক্রিকেটার বা যেকোনো পেশাদার ক্রীড়াবিদের নিজের অধিকার। আমি নিজেকে সময় দিয়েছি। এখন মনে হয়েছে, সময়টা এসে গেছে।’
২০২৩ বিশ্বকাপের আগে দলে থাকা নিয়ে তামিমের বিতর্কিত অধ্যায় তার জন্য বড় ধাক্কা হয়ে আসে। বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, ‘২০২৩ বিশ্বকাপের আগে যা হয়েছে, আমার জন্য তা বড় ধাক্কা ছিল, যেহেতু ক্রিকেটীয় কারণে আমি দলের বাইরে যাইনি। তারপরও আমি যেখানেই গিয়েছি, ক্রিকেট ভক্তদের অনেকে বলেছেন, আমাকে আবার জাতীয় দলে দেখতে চান। তাদের ভালোবাসার কথা ভেবেছি আমি। আমার ঘরেও একজন অনুরাগী আছে। আমার ছেলে কখনও আমাকে সরাসরি বলেনি, কিন্তু তার মাকে বারবার বলেছে, বাবাকে আবার দেশের জার্সিতে খেলতে দেখতে চায়। ভক্তদের হতাশ করার জন্য আমি দুঃখিত। ছেলেকে বলছি, ‘তুমি যেদিন বড় হবে, সেদিন বাবাকে বুঝতে পারবে।’
অধিনায়ক শান্তর আন্তরিক আহ্বান ও নির্বাচক কমিটির দলে ফেরানোর চেষ্টার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেও, নিজের মনের কথা শুনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তামিম। তার এই বিদায়ে শেষ হলো একটি গৌরবময় অধ্যায়, যা বাংলাদেশের ক্রিকেটে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
মন্তব্য করুন